দর্শনায় সাংবাদিক চঞ্চল মেহমুদের ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে চোরাকারবারীদের হামলা

 

দর্শনা প্রেসক্লাবে হামলাকারদের গ্রেফতারের দাবিতে প্রতিবাদসভা : বাহিনী প্রধান মিনারুল গ্রেফতার

দর্শনা অফিস: দর্শনা হল্টস্টেশন মাদক ও চোরাকারবারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদকদ্রব্য ও চোরাচালানী মালামাল পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হল্টস্টেশন। প্রতিটি যাত্রীবাহী ট্রেনে এ চোরাচালানি মালামাল বহন করছে চোরাকারবারীরা। পুলিশসহ প্রসাশনের বিভিন্ন বিভাগের নামভাঙিয়ে টোল আদায়ের জন্য রয়েছে কথিত দালালরা। মাসুম বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষগুলো এখন মিনারুল বাহিনীর অত্যাচারে ভুগছে। একের পর এক বাহিনী সৃষ্টির কারণে ছড়াচ্ছে অপরাধ, বাড়ছে অপরাধীর সংখ্যা। চোরাচালানিদের কাছ থেকে টোল আদায়কারীচক্রের হামলায় পৌর কাউন্সিলর খালেক আহত হওয়ার ১২ ঘণ্টা না পেরুতেই ওই চক্রের হামলার শিকার হলো সাংবাদিক চঞ্চল মেহমুদ। প্রকাশ্য দিনে-দুপুরে শহরের প্রাণকেন্দ্রে সাংবাদিক চঞ্চল মেহমুদের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে হামলাকারীরা। চঞ্চলকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা চিৎলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। চঞ্চলের ওপর হামলার প্রতিবাদ, নিন্দা ও হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে দর্শনা প্রেসক্লাবে জরুরিসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতপরশু সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দর্শনা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ.লীগ নেতা হাসান খালেককুজ্জামানের ওপর স্টেশন চত্বরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। খালেককে পিটিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। স্থানীয়রা জখম অবস্থায় খালেককে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য নেয় দর্শনার একটি ক্লিনিকে। সেখানে অবস্থার অবনতি দেখা দিলে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেখানেও তার অবস্থার অবনতি দেখা দেয়ায় গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা। খালেক ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগে জানা যায়, এ হামলা চালিয়েছে দক্ষিণচাঁদপুরের মিনারুল, রানা, ফারুকসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা। অভিযোগের ভিত্তিতেই স্থানীয় বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার দর্শনা সহকারী ব্যুরো প্রধান চঞ্চল মেহমুদ। ওই প্রকাশিত প্রতিবেদনের জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দর্শনা বাসস্ট্যান্ডস্থ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে হামলা চালায় মিনারুল, রানা ও ফারুকসহ ১০/১২ জন। হামলাকারীরা প্রকাশ্য জনসম্মুখে চঞ্চল মেহমুদকে মারধর করতে করতে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়দের বাধার মুখে ছেড়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দর্শনা প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিক। চঞ্চলকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয় হাসপাতালে। এদিকে খবর পেয়ে দর্শনা আইসি ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছেন হল্টস্টেশন এলাকায়। মিনারুল, রানা, ফারুকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে গতকালই দামুড়হুদা থানায় দায়ের করা হয়েছে মামলা। সন্ধ্যায় দর্শনা প্রেসক্লাবে জরুরি প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্লাবের সভাপতি হানিফ মণ্ডলের সভাপতিত্বে সভায় চঞ্চল মেহমুদের ওপর হামলাকারীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি তুলে বক্তব্য দেন- ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও নির্বাচন কমিশনার মনিরুজ্জামান ধীরু, এফএ আলমগীর, সহসভাপতি কামরুজ্জামান যুদ্ধোর উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিতসভায় প্রতিবাদসভায় আরো বক্তব্য রাখেন- সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল হক পিপুল, সাবেক সভাপতি আওয়াল হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন রাজু, জাহিদুল ইসলাম, নুরুল আলম বাকু, মাহমুদ হাসান রনি, ইয়াছির আরাফাত মিলন, নজরুল ইসলাম, মনিরুজ্জামান সুমন, আহসান হাবীব মামুন, জামান তারিক, এসএম ওসমান, আজিম উদ্দিন, আ. জলিল, সাব্বির আলীম, মনজুরুল ইসলাম, রাজিব মল্লিক, জিল্লুর রহমান মধু, মোস্তাফিজুর রহমান কচি, মেহেদী হাসান প্রমুখ।

এদিকে গতরাত ১১টার দিকে দর্শনা আইসি ইনচার্জ এসআই শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এএসআই সিরাজুল ইসলাম সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে সাড়াষি অভিযান চালিয়ে হল্টস্টেশন এলাকা থেকেই গ্রেফতার করেছেন মামলার প্রধান আসামি মিনারুলকে। তবে পুলিশ অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। দর্শনা হল্টস্টেশনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরেই মাসুম ও মিনারুলের মধ্যে ঘটে আসছে অপ্রতিকর ঘটনা। মাসখানেক আগে প্রতিদিনই ঘটেছে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা। এরই মধ্যে রাতের আঁধারে গাঢাকা দিয়েছে মাসুম। এলাকাবাসী দর্শনা হল্টস্টেশনকে যেকোনো বাহিনী মুক্ত দেখতে চায়। সে লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।