দর্শনায় রডের বদলে বাঁশ দিয়ে সরকারি ভবন নির্মাণ : মামলা তদন্তে দুদক

 দামুড়হুদা আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল হালিম শুনানি শেষে আদেশ দেন

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার দর্শনায় সরকারি ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশ দিয়ে ঢালাই সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তদন্তের আদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে দামুড়হুদা আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল হালিম এই আদেশ দেন। দুদক কুষ্টিয়া সমন্বিত জেলা কার্যালয় মামলাটি তদন্ত করবে।

এদিকে এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ফাইটোসেনেটারি ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক সাদেক ইবনে শামছকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা ট্রেনিং কর্মকর্তা এবং একই প্রকল্পের উপপরিচালক আইয়ুব হোসেনকে বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে জেলা ট্রেনিং কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার আইয়ুব হোসেন বরগুনায় যোগদান করলেও দেশের বাইরে থাকায় সাদেক ইবনে শামছ খাগড়াছড়িতে যোগদান করেননি। আইয়ুব হোসেনের যোগদানের বিষয়টি বরগুনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইদুর আযম খান নিশ্চিত করেছেন।

২ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে দর্শনা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের অতিরিক্ত উপপপরিচালকের  কার্যালয় কাম-ল্যাবটেররি ভবন নির্মাণে রডের বদলে বাঁশসহ নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগে গত ৭ এপ্রিল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নির্মল কুমার দে ও দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান ভবন পরিদর্শনকালে অনিয়মের সত্যতা পান। এরপর ৯ এপ্রিল ঢাকা থেকে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইঙের পরিচালক সৌমেন সাহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্তদল সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ১১ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান মাহবুবুল হকের নেতৃত্বে আরও একটি দল সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ওইদিন রাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিনিয়র মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক মেরিনা জেবুন্নাহার বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় চারজনকে আসামি করে দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪১৮ ও ৪২৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

দণ্ডবিধির ৪০৬, ৪১৮ ও ৪২৭ ধারায় করা এ মামলার আসামিরা হলেন- ভবনটি নির্মাণের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার মণিপুরীপাড়ার জয় ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মনি সিং, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঢাকা শেওড়াপাড়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের (ইসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সাত্তার, প্রকল্পের ক্রয় বিশেষজ্ঞ মো. আইয়ুব হোসেন এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন।

মামলায় সরকারি কর্মকর্তা আসামি হওয়ায় দামুড়হুদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত হোসেন নতুন করে দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারা সংযোজনের জন্য গতকাল বুধবার আমলি আদালতে লিখিত আবেদন করলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।

একই ঘটনায় আলোচিত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দুই কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে তাদের একজনকে বরগুনা এবং অন্যজনকে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়। ১১ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ-১ শাখার উপসচিব মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে ১২ এপ্রিলের মধ্যে তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য বলা হয়। এই দুজন হলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফাইটোস্যানিটারি ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ প্রকল্প ও লিয়েনে স্পেশালিস্ট (কনসালট্যান্ট) ফর প্রকিউরমেন্ট অব ল্যাবরেটরি ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড ইনস্টলেশনের উপপরিচালক (এলআর) মো. আইয়ুব হোসেন এবং ফাইটোস্যানিটারি ক্যাপাসিটি শক্তিশালীকরণ প্রকল্পে প্রেষণে থাকা প্রকল্প পরিচালক সাদেক ইবনে শামছ। আইয়ুব হোসেনকে বরগুনায় এবং সাদেক ইবনে শামছকে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়।

গতকাল বুধবার দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত হোসেন দামুড়হুদা আমলি আদালতে ওই মামলার এজাহারে পেনাল কোডের ৪০৯ ধারা সংযোজনের জন্য আবেদন করেন। মামলার ৪ নং আসামি কামাল হোসেন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে আবেদন মঞ্জুর করেন।