দর্শনার হোটেলশ্রমিক রিনাকে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

কেরুজ নিরাপত্তা পরিদর্শকের মামলা দায়ের : দামুড়হুদা থানা পুলিশের তদন্ত শেষে চার্জশিট : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায়

স্টাফ রিপোর্টার: দর্শনার হোটেল শ্রমিক ফাইমা ওরফে রিনাকে (৪০) ডেকে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যার অপরাধে তিনজনের সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার শিশু ও নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক বিপ্লব গোস্বামী গতকাল সোমবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে আসামিদের উপস্থিতিতে এ রায় প্রদান করেন।

দণ্ডিতরা হলো- দর্শনা শান্তপাড়ার আবুল হাসেন (৪৫), কেরুজ হাসপাতালপাড়ার ক্লাবপাড়ার নজরুল ইসলাম ওরফে নজু (৩৫) ও মোবারকপাড়ার স্বপন (২২)। মামলার বাকি তিন আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেয়া হয়েছে। এরা হলেন- কেরুজ হাসপাতালপাড়ার আরিফ, একইপাড়ার আহসান হাবীব খুকু ও রিফুজিপাড়ার সালাউদ্দীন। রায়ের পর দণ্ডিত তিন আসামিকে কঠোর পুলিশ প্রহরায় চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে নেয়া হয়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের শাখারিয়া গ্রামের দরিদ্র আব্দুস সাত্তারের মেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা ফায়মা খাতুন ওরফে রিনা দর্শনার আবুল হোসেনের হোটেলে কাজ করতেন। ২০০৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে কয়েকজন তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়। লাশ ফেলে রাখা হয় কেরুজ আবাসিক এলাকার পেছনের ম্যানহলে। ঘটনার পরদিন লাশ উদ্ধার করা হয়। কেরু অ্যান্ড কোম্পানির নিরাপত্তা পরিদর্শক গিয়াস উদ্দীন পিনা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। প্রথমে পরিচয় না মিললেও ৫ দিনের মাথায় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ছবি দেখে তার মা মাহেরণ নেছা তার কন্যা বলে দাবি করেন। দামুড়হুদা থানার তৎকালীন এসআই ইফতেখার মামলার তদন্ত করেন। ৬ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করেন। চুয়াডাঙ্গা জেলা শিশু এ নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়। বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনাল মামলার ১৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। সাক্ষ্য প্রমাণ পরীক্ষা করে ৬ আসামির মধ্যে আবুল হোসেন, স্বপন ও নজুকে দোষী সাব্যস্ত করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ (সংশোধনী) ২০০৩ এর ৯ এর (২) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। মামলাটি সরকার পক্ষে পরিচালনায় ছিলেন বিজ্ঞ পিপি অ্যাড. আলমগীর হোসেন।

দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে আবুল হোসেন লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ভাদুড়ির মৃত আমির হোসেনের ছেলে। আবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে দর্শনা শান্তপাড়ায় বসাবাস করে আসছিলো। সে নিজেও একটি হোটেলের মালিক ছিলো। স্বপন কেরুজ ক্লাবপাড়ার জাফার আলীর ছেলে। নজু মোবারকপাড়ার আবু সৈয়দের ছেলে।