দক্ষিণ-পশ্চিমের সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর গমক্ষেতে হুইট ব্লাস্ট : বিএডিসির ৬৩৫ একর গমক্ষেত পুড়িয়ে দিলো সরকার

 

স্টাফ রিপোর্টার: দেশে গমক্ষেতে প্রথমবারের মতো হুইট ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পশ্চিম ও দক্ষিণের  ৬ জেলায় সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর গমক্ষেতে এ রোগের আক্রমণ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে মেহেরপুর জেলার গমক্ষেত। এ জেলায় হুইট ব্লাস্টে আক্রান্ত জমির পরিমাণ ৯ হাজার ৬৪০ হেক্টর। শুধু তাই নয়, সরকারের বিএডিসির বীজ উত্পাদন খামারেও ব্যাপকভাবে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে।  এদিকে হঠাৎ এ ধরনের রোগের আক্রমণে আতঙ্কিত চাষিরা। তারা ক্ষেত থেকে গম কাটছেন না। কারণ এতে তাদের ফসল কাটা ও মাড়াই খরচই উঠছে না। চাষিরা জানান, এই রোগে প্রথমে তরতাজা গমের শীষের মাথা সাদা হয়ে যায়। এরপর শুকিয়ে কালো হয়। ভেতরে কোনো  দানা হয় না। এ রোগে আক্রান্ত গম ক্ষেতগুলো দূর থেকে দেখে বোঝা যাবে না। ক্ষেতে গিয়ে শীষ হাতে নিলে বোঝা যায়।

দিনাজপুর গম গবেষণা ইন্সিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রোগতত্ত্ববিদ ড.  পরিতোষ কুমার মালাকার জানান, তিনি হুইট ব্লাস্ট আক্রান্ত মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরের গমক্ষেত পরিদর্শন করেছেন। এটি পাইরিকুলারিয়া নামক এক ধরনের ছত্রাকজনিত রোগ যা বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়। এরপরই তাপমাত্রা বেড়ে যায়। স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়। তখনই গম ক্ষেতগুলোতে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, এ রোগে বারি গম-২৬ জাতটি বেশি আক্রান্ত হয়েছে। গমের শীষ বের হওয়ার পরপরই আক্রমণ হলে দানা নাও হতে পারে। আবার দানা একটু পুষ্ট হলে রোরে আক্রমণ হলে দানা ছোট হবে। আমাদের দেশে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণ এই প্রথম বলে এ ব্যাপারে গবেষণা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গম ক্ষেতে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকার জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার হুইট ব্লাস্ট আক্রান্ত বিএডিসির ৬৩৫ একর গম ক্ষেত পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহের দত্তনগর খামারের অধীন ৫টি ফার্মে ৩৫৭ একর, মেহেরপুরের বারাদী ফার্মে ১২৮ একর ও চিতলা ফার্মে দেড়শ’ একর ও চুয়াডাঙ্গার নুরনগর ফার্মে ১০ একর হুইট ব্লাস্ট আক্রান্ত গমক্ষেত পুড়িয়ে দেয়া হয়। এতে মোট ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা।

ঝিনাইদহের দত্তনগর খামারের যুগ্ম পরিচালক জামিনুর রহমান জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ব্লাস্ট আক্রান্ত গমক্ষেত পোড়ানো হচ্ছে। ব্লাস্ট আক্রান্ত গম বীজ হিসেবে রাখলে আগামীতে সারাদেশে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিলো। তাই পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২ হাজার ৫৬৩ হেক্টর, ঝিনাইদহ জেলায় ৮৪০ হেক্টর, যশোর জেলায় দেড় হাজার হেক্টর ও কুষ্টিয়া জেলায় ৩২০ হেক্টর গমক্ষেত হুইট ব্লাস্ট  রোগের আক্রমণে নষ্ট হয়েছে।  এছাড়া বরিশাল জেলায় ৭শ হেক্টর হুইট ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়েছে।

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজলপুর গ্রামে চাষি বাবলু মিয়া জানান, তিনি এবার ১৬ বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন। নতুন রোগে গমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি একটি জমির গম কেটেছেন। প্রতি বিঘায় মাত্র দুই-আড়াই মণ ফলন হচ্ছে। এতে ক্ষেত থেকে গম কাটা ও মাড়াই খরচ উঠছে না। তিনি বলেন, এক বিঘা জমির গম কাটা ও মাড়াই খরচ আড়াই হাজার টাকা। দুই মণ গম হলে তার দাম হচ্ছে হাজার টাকা। এ কারণে তাদের এলাকায় চাষিরা ক্ষেত থেকে গম কাটছেন না।

এ প্রসঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সচিব আনোয়ার ফারুক গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সরকার বিএডিসির বীজ উত্পাদন খামারের আক্রান্ত সব গমক্ষেত পুড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাতে পরে বীজ থেকে এ রোগ সারাদেশে ছড়িয়ে না পড়ে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে বিশ্বের অন্যতম গম উত্পাদনকারী দেশ ব্রাজিলে হুইট ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিলো। এরপর বলিভিয়া, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়েতে হুইট ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছিলো।