তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা শুরু কাল : প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে

 

স্টাফ রিপোর্টার: টঙ্গীর তুরাগ নদের পূর্বতীরে তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব আগামীকাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে। ইজতেমার যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পবিত্র হজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় সমাবেশে দেশ-বিদেশের লাখো ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন। দু’পর্বে ছয়দিনের ইজতেমার প্রথম পর্বে তিনদিনের বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে ১৩ জানুয়ারি। আর দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু হবে ২০ জানুয়ারি। দু’পর্বেই অনুষ্ঠিত হবে আখেরি মোনাজাত। প্রথম পর্বে ১৫ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্বে ২২ জানুয়ারি হবে আখেরি মোনাজাত। এবারে প্রথম পর্বের ইজতেমায় ১৬ জেলার মুসল্লিগণ অংশ নিবেন। শুরুর দিনই অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তম জুমার নামাজ।

প্রথম পর্বের তিনদিনের ইজতেমায় বয়ান ও আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পর ইজতেমা ময়দানে জমে থাকা ময়লা- আবর্জনা অপসারণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য চারদিনের বিরতি থাকবে। এবারের ৫২তম বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে বিশাল চটের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখা গেছে, ইজতেমাকে ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের ব্যাপক প্রস্তুতি। আর এ প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে ঢাকার কাকরাইলসহ বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাড়াও তাবলীগের কাজে নিয়োজিত মুসল্লিরা প্যান্ডেল নির্মাণসহ  অন্যান্য কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। প্রায় ১৬০ একর এলাকাজুড়ে বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা পুরো ইজতেমা ময়দানের চারপাশে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছেন।

মুসল্লিদের অংশ নেয়ার জন্য বিশাল চটের প্যান্ডেলকে জেলাওয়ারি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বের ১৬ জেলার জন্য পুরো প্যান্ডেলকে ২৭টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। ১ থেকে ৫ নম্বর খিত্তায় ঢাকা জেলা, ৬,৭ ও ৮নং খিত্তায় টাঙ্গাইল, ৯,১০ ও ১১নং খিত্তায় ময়মনসিংহ, ১২ নং খিত্তায় মৌলভীবাজার, ১৩ নং খিত্তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১৪ নং খিত্তায় মানিকগঞ্জ, ১৫ নং খিত্তায় জয়পুরহাট, ১৬ নং খিত্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ১৭ নং খিত্তায় রংপুর, ১৮ ও ১৯ নং খিত্তায় গাজীপুর, ২০ নং খিত্তায় বান্দরবান, ২১ নং খিত্তায় রাঙামাটি, ২২ খিত্তায় খাগড়াছড়ি, ২৩ নং খিত্তায় গোপালগঞ্জ, ২৪ নং খিত্তায় শরীয়তপুর, ২৫ নং খিত্তায় সাতক্ষীরা, ২৬ ও ২৭ নং খিত্তায় যশোর জেলার মুসল্লিগণ অবস্থান নেবেন।

দ্বিতীয় পর্বে ১৬টি জেলার মুসল্লিগণ অংশ নেবেন। ২৬ খিত্তায় এসব জেলা  হচ্ছে, ১নং থেকে ৫ নং খিত্তায় ঢাকা জেলার বাকি এলাকা, ৬নং খিত্তায় মেহেরপুর, ৭নং খিত্তায় ঢাকা, ৮ নং খিত্তায় লালমনিরহাট, ৯ নং খিত্তায় রাজবাড়ী, ১০নং খিত্তায় দিনাজপুর, ১১ নং খিত্তায় হবিগঞ্জ, ১২ ও ১৩ নং খিত্তায় মুন্সিগঞ্জ, ১৪ ও ১৫ নং খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ১৬ নং খিত্তায় কক্সবাজার, ১৭ ও ১৮ নং খিত্তায় নোয়াখালী, ১৯ নং খিত্তায় বাগেরহাট, ২০ নং খিত্তায় চাঁদপুর, ২১ ও ২২ নং খিত্তায় পাবনা, ২৩ নং খিত্তায় নওগাঁ, ২৪ নং খিত্তায় কুষ্টিয়া, ২৫ নং খিত্তায় বরগুনা এবং ২৬ নং খিত্তায় বরিশাল জেলার মুসল্লিগণ অবস্থান নেবেন। দু পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় রাজধানী ও ঢাকাসহ মোট ৩২টি জেলার মুসল্লিগণ অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলেও বাকি ৩২ জেলার মুসল্লিগণ এবারে শামিল হতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে ইজতেমা মাঠে দায়িত্বে নিয়োজিত আয়োজক কমিটির অন্যতম মুরব্বি গিয়াসউদ্দিন আহমেদ জানান. মাঠে মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং মুসল্লিদের অংশ গ্রহণের সুবিধার্থে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় ৬৪ জেলার মধ্যে শুধু ৩২টি জেলার মুসল্লিগণকে দুইপর্বে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়েছে। বাকি ৩২টি জেলার মুসল্লিগণ আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমায় অংশ গ্রহণের সুযোগ পাবেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম জানান, দু’পর্বের বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকাণ্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করা হচ্ছে। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে এবার আইন-শৃংখলা বাহিনীর ১২ হাজার কর্মী কাজ করবে। পাশাপাশি পুলিশ ও র্যাবের সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নিরাপত্তা মনিটরিং হবে। বাইনোকুলার , মেটাল ডিটেকটর, কন্ট্রোল রুম ব্যবহার করা হবে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ মেডিক্যাল টিম ও অস্থায়ী চিকিত্সাকেন্দ্র খোলা হচ্ছে। ১৯৬৭ সাল থেকে নিয়মিত বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে একই বছর দুইবার বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে নিয়মিত দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে।