তীব্র স্রোতে পারাপারে বিঘ্ন৪ ঘাটে দীর্ঘ জট

স্টাফ রিপোর্টার: পদ্মার প্রবল স্রোতে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায়রাজধানীর সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষার দুই প্রধান পথ মাওয়া ওপাটুরিয়ায় যানবাহনের দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে মাওয়া-কাওড়াকান্দি ওপাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ফেরির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে চারঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক হাজার যানবাহন।এদিকে দীর্ঘ জটসৃষ্টি হওয়ায় শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত বাস ও ট্রাকচালকদের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশআভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিআইডব্লিউটিসি বলেছে, রোববার সকাল থেকে আবার স্বাভাবিক যানবাহন পারাপার শুরু হবে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া বিআইডব্লিউটিসিরআরিচা কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মহিউদ্দিন রাসেল জানান,শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত পাটুরিয়া ঘাটে দেড়শরবেশি যাত্রীবাহী বাস এবং পাঁচশর কাছাকাছি ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় ছিলো।“স্বাভাবিকভাবে আধ ঘণ্টা সময় লাগলেও স্রোতের কারণে এখন ফেরি পার হতে দেড় ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে।” বিআইডব্লিউটিসিরএই কর্মকর্তা বলেন, “মাওয়া ঘাটে পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির পর সেদিক দিয়ে ফেরিচলাচল কমে গেছে। এ কারণেও পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।” দৌলতদিয়া ঘাটেও একই অবস্থা বলে জানিয়েছেন।তিনি জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় দৌলতদিয়া ঘাটে পাঁচশর বেশি বাস ও ট্রাক নদী পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।বিআইডব্লিটিসিরকর্মকর্তারা জানান, এই নৌপথের ১৬টি ফেরির মধ্যে ১৩টি চলছে। ১০দিন ধরেবিকল হয়ে রয়েছে ফেরি কাবেরী। হামিদুর রহমান ও রজনীগন্ধা নামের দুটি ফেরিপাটুরিয়ার মধুমতি মেরামত কারখানায় রয়েছে।এদিকে স্রোতের কারণেরাজবাড়ী থেকে নৌপথে পাবনার সাথে যোগাযোগও প্রায় বিচ্ছিন্ন।জৌকুলা-নাজিরগঞ্জ পথেও ফেরি চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

মাওয়া-কাওড়াকান্দি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটের বিকল্প হিসেবে বিআইডব্লিটিসি মাওয়া-কাওড়াকান্দি ঘাট ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও যানজট সেখানেও কম নয়। মাওয়ায় রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় চারশ গাড়ি আটকে ছিল বলে বিআইডব্লিউটিসির মাওয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আসিফুজ্জামান জানান। তিনিবলেন, “এমনিতে ফেরি পারাপারে সময় বেশি লাগছে বলে এই যানজট তৈরি হয়েছে।তাছাড়া দুর্ঘটনা এড়াতে রাতে মাত্র চারটি ফেরি চলাচল করছে।” ঘাটকর্মকর্তারা জানান, একটি পন্টুন কম থাকায় এবং প্রবল স্রোতের কারণেকাওড়াকান্দির পথে রামশ্রী, কর্ণফুলী, ঢাকা ও থোবাল ফেরি শুক্রবার সারাদিনচলেনি।“দিনে যেসব ফেরি ৯ থেকে ১০ বার যানবাহন পারাপার করত সেগুলোএখন স্রোতের কারণে চার থেকে পাঁচবার যাতায়াত করতে পারছে। আর যে ফেরিগুলোচারবার যাতায়াত করত, সেগুলো এখন পার হচ্ছে মাত্র একবার।” এইপরিস্থিতিতে শুক্রবার সারাদিনই মাওয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।ঘাটের চৌরাস্তা থেকে ট্রাকের লাইন দুই কিলোমিটার দূরে শ্রীনগরে উপজেলারদোগাছি ছাড়িয়ে যায়।এর আগে মঙ্গলবার রাতে মাওয়ার ৩ নম্বর রো রো ফেরিঘাট পদ্মায় বিলীন হয়ে গেলে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানীরনৌ-যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ১১ ঘণ্টা পর বুধবার সীমিত আকারে সেটি আবার চালুকরা হয়।মাওয়ার ২ নম্বর ঘাটে রো রো ফেরি ঘাট স্থানান্তর করে ৪৬ ঘণ্টাপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চালু হয় রো রো ফেরি পারাপার। স্রোত আর নদীভাঙনের কারণে ৩ নম্বর ঘাটটি এখনো সচল করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সংকট সমাধানের চেষ্টা চলছে।মাওয়ার উল্টো দিকে মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি ঘাটেও অপেক্ষায় রয়েছে কয়েকশ যানবাহন।বিআইডব্লিটিসিরট্রান্সপোর্ট সুপার নুরুল আমিন রাত ১১টায় বলেন, “দুর্ঘটনা এড়াতে সাধারণফেরি চলাচল রাতে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সময়ে কেবল তিনটি রো রো ফেরি চলবে। আরফেরি কম থাকায় কাওড়াকান্দি ঘাট থেকে দুই কিলোমিটার পথে যানবাহনের জট সৃষ্টিহয়েছে।” সকাল নাগাদ গাড়ির জট আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।