তিনদফা দাবিতে জীবননগরের আনছারবাড়িয়া রেলস্টেশনে দু ঘণ্টা রেল অবরোধ

স্টেশন মাস্টার নিয়োগ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু আন্তঃনগর সাগরদাঁড়ি ও কপোতাক্ষ ট্রেনের যাত্রাবিরতি এবং জরাজীর্ণ স্টেশনের আধুনিকায়ন চায় এলাকাবাসী

 

স্টাফ রিপোর্টার: তিনদফা দাবিতে চুয়াডাঙ্গা জীবননগর উপজেলার আনছারবাড়িয়া রেলস্টেশনে রেললাইন অবরোধ করেছে এলাকার হাজারো জনতা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত প্রায় দু ঘণ্টা এ অবরোধ কর্মসূচি চলে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। প্রশাসনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা আগামী এক সপ্তার জন্য কর্মসূচি স্থগিত করেছেন।

কমিটির দাবিসমূহ হচ্ছে, আনছারবাড়িয়া রেলস্টেশনে স্টেশনমাস্টার নিয়োগসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু, আন্তঃনগর সাগরদাঁড়ি ও কপোতাক্ষ ট্রেনের যাত্রাবিরতি এবং জরাজীর্ণ স্টেশনের আধুনিকায়ন।

জীবননগর আনছারবাড়িয়া রেলস্টেশন উন্নয়ন ও সংগ্রাম কমিটির এ আন্দোলনে চুয়াডাঙ্গা সদর ও জীবননগর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন এলাকার হাজারো জনতা সকাল থেকেই স্টেশনে সমবেত হতে থাকে। সকাল ৯টায় খুলনা থেকে রাজশাহীগামী কপোতাক্ষ ট্রেন পৌঁছুলে বিক্ষুব্ধ জনতা অবরোধ শুরু করে। এ সময় খুলনা থেকে রাজশাহী ও ঢাকাগামী রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধ চলাকালে সংগ্রাম কমিটির সভাপতি হাবিবুর রহমান, সহসভাপতি মহসীন আলী খান, সাবেক চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম মুক্তার, সদস্য আতিয়ার রহমান ও মীর জয়নাল আবেদীনসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, তাদের তিনদফা দাবি মানা না হলে লাগাতার কর্মসূচি চালানো হবে।

আন্দোলনকারীরা জানান, কৃষি প্রধান এ এলাকার যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম রেলপথ। আনছারবাড়িয়া রেলস্টেশন খুলনা বিভাগের মধ্যে রাজস্ব আদায়ে সর্ব্বোচ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও রেলকর্তৃপক্ষসহ কেউই এ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি।

খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী ও জীবননগর থানার ওসি আব্দুর রকিব খানসহ পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। এছাড়া, জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনাক্রমে দাবি পূরণের জন্য রেলমন্ত্রী মজিবুল হকসহ সংশ্লিষ্টদের দ্রুত অবগত করার আশ্বাস দিলে বেলা পৌনে ১১টায় অবরোধ তুলে নেয়া হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

Chuadanga Rail Oborodh 22.10.13 pic-3

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ২০১০ সালের ২৮ মার্চ যাত্রী জনবহুল আনছারবাড়িয়া রেলস্টেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। জনদুর্ভোগের কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা ২০১১ সালে ২২ মার্চ অনির্দিষ্টকালের জন্য রেলপথ অবরোধের ডাক দেয়। আটকে পড়ে শ শ ট্রেন ভ্রমণকারী। সংশিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের আশ্বাস পেয়ে জনতা অবরোধ তুলে নেয়। জাতীয় সংসদ সদস্যদ্বয়ের নির্দেশে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ভোলা নাথ দে প্রচেষ্টায় ২০১১ সালের ১১ মার্চ একজন স্টেশনমাস্টার নিয়োগ দিয়ে রেলকর্তৃপক্ষ স্টেশনটির স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করে। পরদিন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মাস্টারকে ডেপুটেশনে তুলে নিয়ে স্টেশনটির স্বাভাবিক কার্যক্রম ফের বন্ধ করে দেয়া হয়। এলাকাবাসীর দাবির মুখে জাতীয় সংসদ সদস্যদ্বয় ফের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করার জন্য ২০১৩ সালের ১৪ ফেরুয়ারি রেলমন্ত্রীকে ডিও লেটার প্রদান করেন। এলাকাবাসীর এ দাবি উপেক্ষা করায় আনছারবাড়িয়া রেলস্টেশন রক্ষা ও উন্নয়ন সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে গতকাল রেলস্টেশনের পুনঃকার্যক্রম চালু, আন্তঃনগর সাগরদাঁড়ি, কপোতাক্ষ ট্রেনের যাত্রাবিরতি ও স্টেশনটির আধুনিকায়নের দাবিতে শ শ বিক্ষুব্ধ জনতা প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে রেললাইনের মাঝে লাল কাপড় দিয়ে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা আপ রাজশাহীগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ ট্রেনটি অবরোধ করে। এ সময় মানববন্ধন শেষে প্লাটফরম চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আলহাজ মোল্লা হাবিবুর রহমান হাবু, সহসভাপতি মহাসীন আলী খান, ইউপি চেয়ারম্যান শাখাওয়াত হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শেখ মহিদুল ইসলাম মধু, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মকলেচুর রহমান টজো, প্রচার সম্পাদক মোল্লা আলতাব হোসেন ফেলা, শেখ আতিয়ার রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, ডা. মিজানুর রহমান, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান, শেখ আব্দুল ওয়াদুদ প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, রেল জাতীয় সম্পদ, রক্ষার দায়দায়িত্ব আপনার আমার সকলের। ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ থেকে সকলকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানানো হয়। দাবি মানা না হলে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয়ার ঘোষণাও দেন বক্তারা। এ সময় শ শ বিক্ষুব্ধ জনতা দাবিনামা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন হাতে স্লোগানে এলাকা প্রকম্পিত করে তোলে। খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান, ওসি আব্দুর রকিব খান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করে অবিলম্বে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দাবি পূরণ করার আশ্বাস দেন। এ আশ্বাস পেয়ে সংগ্রাম কমিটির সভাপতি এক সপ্তার মধ্যে গণদাবি বাস্তবায়ন করা না হলে আগামীতে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে অবরোধ তুলে নেয়। অবরোধ শেষে রেলমন্ত্রী বরাবর ৩ দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করার দাবিতে সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। এ সময় পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উপস্থিত জনতার দাবি-দাওয়া শোনেন।

প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৮ মার্চ থেকে আনছারবাড়িয়া রেলস্টেশনটির স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।