তিতুদহ ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ছাবদারের মৃত্যু

 

এমপি টগরসহ নেতাকর্মদের শোক প্রকাশ : রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন

বেগমপুর প্রতিনিধি: তিতুদহসহ আশপাশ এলাকার মানুষকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন চুয়াডাঙ্গা সদরের তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের ৪ বার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান সবার প্রিয়মুখ ছত্রীসেনা, বীরমুক্তিযোদ্ধা চুয়াডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার সাইদুর রহমান ছাবদার (ইন্নালিল্লাহে……রাজেউন)। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছাবদার হোসেনের মৃত্যুতে গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। প্রিয় মুখকে হারিয়ে শোকে কাতর এলাকাবাসী। শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগরসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। বীরমুক্তিযোদ্ধা সাবদার হোসেনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে খাড়াগোদা স্কুলমাঠে সাবদার হোসেনের লাশ গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম মামুনজ্জামান, চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান মুন্সি। জানাজায় অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রসাশক দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, দর্শনা পৌরসভার সাবেক মেয়র দর্শনা পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান, তিতুদহ ইউপি চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পক্ষে আ.শু বাঙ্গালী, কালুশেখ, জোসাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

পারিবারিক ও এলাকাসূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াইটুপি গ্রামের হাজের আলী বিশ্বাসের ছেলে সাইদুর রহমান ছাবদার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের ৪ বার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান, চুয়াডাঙ্গা জেলা চেয়ারম্যান সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, ছত্রীসেনা (পাকিস্তান), ভারতের মাইজদিয়া ক্যাম্পের কমান্ডো প্রশিক্ষক, চুয়াডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার, চুয়াডাঙ্গা বিআরডিবি’র সাবেক সভাপতি, চুয়াডাঙ্গা বেসরকারি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। রাত ৩টার দিকে তাকে নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। পরের দিন বুধবার দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের বিছানাই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭২ বছর। মৃত্যুকালে তিনি ৪ ছেলে ৩ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।

এলাকার প্রবীণেরা জানান, চেয়ারম্যান ছাবদার দু ভাইয়ের মধ্যে ছোট। তার রয়েছে ৫ বোন। ছোট বেলা থেকেই খুবসাহসী ছিলেন তিনি। পাকিস্তান আমলে যুবক বয়সে সুদর্শন চেহারার সুবাদে পাকিস্তানি ছত্রীসেনায় যোগ দেন। দেশকে ভালোবেসে চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে যান ভারতের মাইজদিয়া ক্যাম্পে। সেখানে হাবিলদার মেজর হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ৪ বার তিতুদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৩ বার সংসদ নির্বাচন এবং ২ বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও করেন তিনি। চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, তিনি শুধু চেয়ারম্যানই ছিলেন না, পঞ্চমবার তার সহধর্মীনিকেও চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলেন। সবকিছুই সম্ভব হয়েছে ছাবদারের জনপ্রিয়তা আর যোগ্যতার কারণে। আজ ইউনিয়নবাসী একজন অভিভাবককে হারালো।

এদিকে তার মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বাড়িতে ভিড় জমাতে থাকে অসংখ্য নারী-পুরুষ। বিকেলে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে ছুটে যান চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর। এ সময় তিনি পরিবারকে শান্ত্বনা দিয়ে বলেন, একদিন সকলকেই চলে যেতে হবে। তিনি হঠাত এভাবে আমাদেরকে কাঁদিয়ে চলে যাবেন তা কারো জানা ছিলো না। দলের জন্য তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় খাড়াগোদা বিদ্যালয় মাঠে গার্ডঅব অনার এবং জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্তানে পিতা-মাতার পাশে তার দাফন সম্পন্ন করা হয়