তাড়িয়ে ধরে কুপিয়ে একজনকে খুন : এক পক্ষের ৫ জনসহ রক্তাক্ত জখম ১

আলমডাঙ্গার ঘোলদাড়ি কেরুজ জমি জুড়ে বসা বহুল আলোচিত গ্রাম হোসেনপুরে দু পক্ষের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের জের : নগ্ন নৃশংসতা
মুন্সিগঞ্জ/ঘোলদাড়ি প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার বহুল আলোচিত গ্রাম হোসেনপুরে প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে একজন খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন এক পক্ষের ৫ জনসহ মোট ৬ জন। আহতদের মধ্যে একজনের একটি পা শরীর থেকে প্রায় বিছিন্ন হয়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে হোসেনপুরে এ ঘটনা ঘটে। আহত এক পক্ষের একজনসহ উভয়পক্ষের ৫ জনকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হলেও তিনজনকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত আশরাফ হোসেন হোসেনপুর মাঝেরপাড়ার মৃত ইয়াপেশ মণ্ডলের ছেলে। তাকে তাড়িয়ে ধরে কুপিয়ে খুন করা হয়। হামলাকারীরা একইভাবে অন্যদেরও তাড়িয়ে ধরে কুপিয়ে আহত করে বলে অভিযোগ। আহতদের মধ্যে একই পক্ষের আকমলের (৪৫) একটি পা প্রায় দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। তিনি মৃত ইছাহক আলীর ছেলে। এছাড়া একই পক্ষের আহত আইনাল হকের ছেলে লিটন (২৮), আব্দুল মান্নানের ছেলে বিপ্লব (২৫) ও মজিবুর রহমানের ছেলে ইদ্রিস আলী (৩০) প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। অপরপক্ষের আহত মৃত আয়ুব আলীর ছেলে আসমানকেও (৩৫) চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে রাজশাহী নেয়ার প্রক্রিয়া করা হয়। ঘটনার পর থেকে গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। কয়েকটি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে সরে গেছে।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস ইউনিয়নের ঘোলদাড়ি কেরুজ খামারের অদূরেই হোসেনপুর গ্রাম। কেরুজ জমি দখল করেই বহিরাগতরা বসবাস শুরু করে। এ তথ্য জানিয়ে স্থানীয়রা বলেছেন, বসবাসের এক পর্যায়ে গ্রামটির নাম রাখা হয় হোসেনপুর। বেদখল হওয়া কেরুজ জমি পুনরুদ্ধারে মাঝে মাঝেই পত্রপত্রিকার শিরোনাম হয়ে গ্রামটি বহুল আলোচিত হয়ে উঠেছে। এ গ্রামের দু পক্ষের একটির নেতৃত্বে ছিলেন আশরাফ হোসেন ও আব্দুল মান্নান। অপরপক্ষের নেতৃত্বে রেজাউল ও আসমান। জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মাঝে মাঝেই রাজনৈতিক রঙ লাগানোর কাজেও পটু উভয়পক্ষ। গত ৫ ফেব্রুয়ারি দু পক্ষের তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আশরাফ-মান্নান পক্ষের বিরুদ্ধে যুবলীগ কার্যালয় ভাঙচুরসহ মারপিটের অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন আশরাফ-মান্নান গ্রুপের অধিকাংশ পুরুষ। গত মঙ্গলবার বাড়ি এরা ফিরলেও মামলার আসামিদের কয়েকজন এখনও ফেরেনি। গতকাল সকালে আশরাফ হোসেনের ছেলের সন্ধান নেয়ার অজুহাতে অপর পক্ষ তার বাড়িতে হামলা চালায়। তার গলায় একটি কোপ মারে। এক কোপেই গলা কেটে আছড়ে পড়েন তিনি। তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। এছাড়া একই পক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষতবিক্ষত হয় আকমল, লিটন, বিপ্লব ও ইদ্রিস আলী। আহত হয় টোটন। এ সময় অপরপক্ষের আসমান আলীও গুরুতর জখম হন। এদেরকে পৃথক পৃথকভাবে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত আশরাফ হোসেন ৪ ভাই ৫ বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন। তার রয়েছে দু ছেলে দু মেয়ে। পরিবারের সদস্যরাসহ তার পক্ষের আহতদের নিকটজনেরা অভিযোগ করে বলেছে, পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে খুনসহ আহত করেছে প্রতিপক্ষের মৃত আয়ুব আলীর ছেলে আসমান, আব্দুল দফাদারের ছেলে রেজাউল হোসেন, মৃত আয়ুব আলীর ছেলে আসমান, মহাম্মদ আলীর ছেলে সালাম ও তারু, হামিদ আলীর ছেলে বরকত, আমিরুল মুন্সির ছেলে বকুলসহ তাদের লোকজন। অপরদিকে মুন্সি গ্রুপ বলে পরিচিত পক্ষ তথা রেজাউল-আসমান পক্ষের লোকজন অভিযোগ করে বলেছে, মান্নান গ্রুপের লোকজন অর্তকিত হামলা চালিয়ে একই গ্রামের আয়ুব আলীর ছেলে আসমানকে কুপিয়ে জখম করে। তাকে উদ্বার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাকে গুরুতর অবস্থায় কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এদিকে হোসেনপুর গ্রামের বর্তমানে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কেউ কেউ বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। নিহত আশরাফের মৃতদেহ গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। উত্তেজনা প্রশমনে গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ৱ্যাবের একটি টহল দলও গ্রামে ঘন ঘন টহল দিয়েছে।