তরুণ ব্যবসায়ী বাপ্পীর প্রাণহানির ভিডিও ভাইরাল ॥ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সড়কের খাদ

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শহীদ আবুল কাশেম সড়কটি চলাচলের অনুপোযুগি ॥ খানা-খন্দগুলো যেন মৃত্যুফাঁদ

আহসান আলম/ মারুফ হোসেন: তরুণ ব্যবসায়ী বাপ্পীর প্রাণহানির জন্য যতোটা না ট্রাককে দায়ী করা হয়েছে, তার চেয়ে ঢের বেশি দায়ী খানা-খন্দে ভরা সড়ক। ভাঙা সড়কের কারণেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের সামনে পড়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে। সিসি ক্যামেরার চিত্র দেখে পুলিশ জনতা এরকমই মন্তব্য করে বলেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের শহীদ হাসান চত্বর থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হায়দারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সড়কটি ৪-৫ বছর ধরে সংস্কার না হওয়ার দরুণ করুণ দশা ফুটে উঠেছে। খুলনা জোনাল অফিস ইতোমধ্যেই দরপত্র আবহ্বানসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নিয়েছে। মাসখানেকের মধ্যেই সংস্কারের কাজ শুরু হতে পারে।
গতপরশু রোববার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়ক শহীদ আবুল কাশেম সড়কের প্রধান ডাকঘরের সামনেই ট্রাকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে প্রাণ হারান মোটরসাইকেল আরোহী বাপ্পী (২০)। তিনি চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার নিচের বাজারের তিন নম্বর গলির মুদিব্যবসায়ী। দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার বাদল হোসেনের ছেলে বাপ্পী তাদের দোকানের হালখাতার কার্ড বিতরণের জন্য মোটরসাইকেলযোগে বের হন। তার দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এ দৃশ্যটি গতকাল সকাল থেকেই সোসাল মিডিয়ার বদৌলতে মানুষের হাতে হাতে সেলফোনে ঘুরছে। এতে দেখা গেছে, একটি ট্রাক বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরের দিক থেকে রেলবাজারের দিকে যাচ্ছে। ট্রাকটি আবুল কাশেম সড়কের প্রধান ডাকঘরের অদূরে পৌঁছুতেই পেছন থেকে ট্রাকের বামদিক হয়ে মোটরসাইকেলযোগে এসেই ট্রাকের সামনে পড়ে। ঘটনার আকস্মিকতায় তখন পাশের মোটরসাইকেল চালক হতবাক। সড়কের ধারের লোকজনও যেন দর্শক। দৃশ্য দেখে অনেকেরই অভিমত, সড়কের ওই ভাঙা খাদ থেকে রক্ষা পেতে মোটরসাইকেলচালক বাপ্পী ট্রাকের সামনে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়। চলন্ত ট্রাক ধাক্কা দিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয়। গতকাল সোমবার সকালে দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়া কবরস্থানে দাফন কাজ সস্পন্ন করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান সড়ক শহীদ আবুল কাশেম সড়কটির অধিকাংশ স্থানেই ভয়াবহ খাদ। যেন মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে। সড়কের খাদের কারণেই বাপ্পীকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। এ মন্তব্য করে গতকাল সকাল থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে সড়ক সংস্কারের জোর দাবি উঠতে থাকে। অবিলম্বে সড়ক সংস্কার ও নিরাপদ করা না হলে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে বলেও ব্যবসায়ীদের তরফে মন্তব্য করা হয়। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ চুয়াডাঙ্গার নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সড়কটি আঞ্চলিক মহাসড়ক। ইতোমধ্যেই দরপত্র আহ্বানসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শুনেছি মাসখানেকের মধ্যেই সংস্কার করা হবে। এছাড়া আমরা স্থানীয়ভাবে মাঝে মাঝেই সড়কের বড় বড় গর্তের স্থানে ইট-পাথর বিটুমিন দিয়ে সড়কটি চলাচলের উপযোগী রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ মন্তব্যকে দায় এড়ানো মন্তব্য বলে দাবি তুলে স্থানীয়রা বলেছেন, সড়কের পুরাতন ঝিনাইদ বাসস্ট্যান্ডের নিকট, টার্মিনাল, বড়বাজার পোস্ট অফিসের সামনে, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে, পৌরসভার সামনে যে পরিস্থিতি তাতে মনেই হয় না, দেশে সড়ক সংস্কারের জন্য কোনো বিভাগ আছে।