তফসিল ঘোষণার পর সহিংসতায় নিহত ১৪৯

স্টাফ রিপোর্টার: রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়াই একতরফাভাবে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা বাংলাদেশকে ভয়াবহ সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। সংগঠনটির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে অধিকারের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২৫ নভেম্বর থেকে সহিংসতায় ১৪৯ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৮৮৬ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ৫৯ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া একই সময়ে ১০ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের গুম হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একতরফা এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ বিহীন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ সহিংস পরিস্থিতি মানবাধিকারের ব্যাপক লঙ্ঘনের কারণ হিসেবে ইতোমধ্যেই আবির্ভূত হয়েছে। অধিকার মনে করে বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিতে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের তফসিল অবিলম্বে বাতিল করা বাঞ্ছনীয়। বিরোধীদল নির্বাচন বয়কট করার কারণে কোনো প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনের আগেই ৩০০টি আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে গেছেন, যা গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থায় এক নজিরবিহীন ঘটনা। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অমীমাংসিত রাজনৈতিক বিরোধের কারণে সৃষ্ট সহিংসতায় চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং সরকার ও বিরোধীদল একে অপরকে দোষারোপ করছে। একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে মানুষ নিহত হচ্ছে, অন্যদিকে যানবাহনে পেট্রোল বোমা ও আগুন ধরিয়ে দেয়ার কারণে সাধারণ নাগরিকদেরও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে অসংখ্য মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, শিশুরাও এ ভয়াবহতার শিকার হচ্ছে। সহিংসতার ঘটনায় অসংখ্য অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে, যার ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা সাধারণ নিরীহ নাগরিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সরকার এ সহিংস পরিস্থিতিতে বিরোধী মতকে নির্মমভাবে দমন করছে। যৌথবাহিনী ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সাথে নিয়ে সারাদেশে গণগ্রেফতার করছে ও বাড়িঘর বুলডোজার চালিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিরোধী দলের শীর্ষ পর্যায়ের অধিকাংশ নেতাকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী মতের ব্যক্তিদের গুমের ঘটনাও ঘটছে। গত ২৯ ডিসেম্বর ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ঢাকা অভিমুখে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরকার বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে তার বাড়িতে বেআইনিভাবে আটকে রাখে, যা এখনও পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রতিটি প্রবেশমুখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাথে সরকারি দলের কর্মীরা লাঠি হাতে বিরোধী দলের কর্মীদের এবং সাধারণ মানুষকে ঢাকায় ঢুকতে বাধা দেয়। এ দিন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করার সময় জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের ওপর এবং সুপ্রিমকোর্টে আইনজীবীদের ওপর সরকারি দল সমর্থক বহিরাগতরা আক্রমণ চালিয়ে অনেককে আহত করে। এ সময় বিএনপির ২ জন নারী আইনজীবীকে তারা লাঞ্ছিত ও পিটিয়ে জখম করে। বর্তমান সরকার দেশের অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম, বিশেষত ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে করায়ত্ত করেছে। অধিকাংশ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিক সরকার সমর্থিত ব্যক্তি। অন্যদিকে সরকার ভিন্নমত দমনের লক্ষ্যে বিরোধীদলীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্টমিডিয়া- চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি এবং আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছে ও আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বন্দি করে রেখেছে। চলমান এ সহিংসতার সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন।