ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা : এবারও সক্রিয় জালিয়াতচক্র

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪-১৫ সেশনের সম্মান প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে জালিয়াতচক্র।নানা প্রলোভন দেখিয়ে তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কাঁড়িকাঁড়ি টাকা। প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার আগে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেওধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে মূল হোতারা। মাঝে মাঝে জালিয়াতি করতে গিয়ে কিছুপরীক্ষার্থী ধরা পড়লেও রাঘব বোয়ালরা থেকে যাচ্ছে অন্তরালে। বিশ্ববিদ্যালয়প্রশাসন প্রতিবারেই জালিয়াতি ঠেকানোর ব্যবস্থা নিলেও সফল হচ্ছে না। ফলেঅভিভাবকদের কপালের ভাঁজ দীর্ঘ হচ্ছে। সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে তারা শঙ্কিত। এসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন পরীক্ষার্থীরাও। সর্বপ্রথম ২০১০ সালে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে বিরতিহীনভাবেই চলছেপ্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা। সর্বশেষ গত বছরে ভর্তি পরীক্ষায় সব ক’টি ইউনিটেরপরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এ সব ঘটনায় আটক করা হয় প্রায় শতাধিকভর্তিচ্ছুক পরীক্ষার্থীকে। আটককৃতরা কিছুদিন পরই জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে। এবিষয়ে সিনেট অধিবেশনে প্রশ্নের সম্মুখিন হয় প্রশাসন।

সম্প্রতি ২২ আগস্টসোনালী ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকেজালিয়াতি করার সময় হাতনাতে আটক করা হয় ১৫-২০ জনকে। এদের মধ্যে দুজনকেশাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। এ ঘটনার পর ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তাআরও বৃদ্ধি পায়। এদিকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা সক্রিয়থাকে বলে জানা যায়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাইরের মিলিয়ে বেশ কয়েকটিসিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মী, বিভিন্নকোচিং সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাবেক শিক্ষার্থী, কেন্দ্রের শিক্ষক-কর্মচারীরা মিলে এসব সিন্ডিকেট করে থাকে।

সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটগুলোর মধ্যে ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের শীর্ষ এক নেতার নেতৃত্বে ইডেনকলেজে একটি, ঢাকা কলেজে অপর একটি, ইডেন কলেজের একটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজিমুহম্মদ মহসিন হলকেন্দ্রিক দুটি, বঙ্গবন্ধু হলকেন্দ্রিক দুটি, শহীদসার্জেন্ট জহুরুল হক হলকেন্দ্রিক তিনটি, জিয়া হলকেন্দ্রিক দুটি, শহীদুল্লাহ হলকেন্দ্রিক তিনটি, অমর একুশে হলকেন্দ্রিক দুটি, মাস্টারদাসূর্যসেন হলকেন্দ্রিক তিনটি ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল কেন্দ্রিক একটি চক্রসক্রিয় রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের রয়েছে নিজস্ব কর্মীবাহিনী। তাদের কাজপরীক্ষার্থী সংগ্রহ করে দেয়া। মূল হোতারা কেন্দ্রের শিক্ষক ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। তাছাড়া একটি পক্ষ থাকে যারা পরীক্ষারদিন প্রশ্ন পাওয়ার পর সমাধান করে দেয়। এরপর কর্মীরা নির্দিষ্টপরীক্ষার্থীদের কাছে ডিজিটাল ডিভাইসের (ব্লুটুথ, মোবাইল, ডিজিটালক্যালকুলেটর) মাধ্যমে উত্তর পাঠায়। প্রশ্ন সমাধানে থাকেন বিভিন্ন নামী-দামিকোচিং সেন্টারের শিক্ষকরা।

তাছাড়া গতবার জালিয়াতির অভিযোগে আটককৃত একজনপরীক্ষার্থী স্বীকার করেছে ‘ইউসিসি’তে কোচিং করার সময় ওখানকার একজন শিক্ষকতাকে টাকার বিনিময়ে ভর্তি করিয়ে দেবেন বলে চুক্তি করেন। জালিয়াতির ঘটনায়জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল থেকেছাত্রলীগের চার নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। পরীক্ষা শুরুর ১০ মিনিটেরমধ্যে প্রশ্ন বাইরে নিয়ে আসে চক্রের সদস্যরা। এক্ষেত্রে তারা কেন্দ্রেদায়িত্বরত শিক্ষক-কর্মচারীর সাহায্য নেয়। এরপর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেপ্রশ্নের সমাধান করে সেলফোনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সেলফোনসহ সকল ধরনের ডিজিটালডিভাইস কেন্দ্রে নিষিদ্ধ হলেও তা রোধে ঢিলেঢালা পদক্ষেপ নিয়ে থাকেকর্তৃপক্ষ। ছেলেরা উরু, বাহু, মেয়েরা বোরকার নিচে টেপ দিয়ে মোবাইল বাডিজিটাল ডিভাইস আটকিয়ে কেন্দ্রে নিয়ে আসে। অনেক সময় বাইরে থেকে তা বোঝা যায়না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কেন্দ্রগুলোতে অনেক সময় তল্লাশিও করা হয় না।অনেকে বিব্রতবোধ করেন। স্ক্যানিং মেশিন ব্যবহার করলে ডিজিটাল ডিভাইসেরকেন্দ্রে প্রবেশ রোধ করা যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

 

নবজাতক চুরি : আটক দু নারী তিন দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার:ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ঘটনায়গ্রেফতারকৃত দু নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুরকরেছেন আদালত। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য শুক্রবার সকালে র‌্যাবের এসআইফেরদৌস আরা দু আসামি রাশেদা খানম পারভীন (৪৮) ও বেলি আক্তার রহিমাকে (৪৫)সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন। এরবিরোধিতা করে দু নারীর পক্ষে জামিনের আবেদন করেন তাদের আইনজীবী জুলফিকারআলী। আদালতের কোর্ট হাজতের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক মুরাদ হোসেন জানান, শুনানি শেষে মহানগর হাকিম জয়নব বেগম জামিন নাকচ করে দু নারী আসামিরপ্রত্যেককে ৩ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।

র‌্যাব জানায়, গত ২০ আগস্ট রাজধানীর মোহাম্মদপুর এফ ব্লকের জহুরী মহল্লার৪১/৯ নম্বর বাসিন্দা রুনা আক্তার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যমজসন্তানের জন্ম দেন। পরদিন ভোরের দিকে তার একটি ছেলেকে নিয়ে হাসপাতাল থেকেপালিয়ে যায় হাসপাতালের ধাত্রী রাশেদা খানম পারভীন (৪৮)। যিনি আরেক রোগীরআত্মীয় পরিচয় দিয়ে ওই পরিবারের বিশ্বাস অর্জন করেন। পরে এক ছেলেকে হারিয়ে২৬ আগস্ট হাসপাতাল ছাড়েন রুনা আক্তার। ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশের পরই ঢাকামেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনসদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। শাহবাগ থানায় এই মামলা দায়ের করা হয়।চুরি হওয়ার সাত দিন পর বুধবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুরের বোর্ডেবাজারেনিঃসন্তান বেলি আক্তার রহিমার বাসা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে র‌্যাব।অভিযানে ওই ধাত্রীসহ দু নারীকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার উত্তরায়র‌্যাব সদরদফতরে সংবাদ সম্মেলন করে শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়েদেয়া হয়।

ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইঙের পরিচালকমুফতি মাহমুদ জানান, তিনি ২১ আগস্টকাওসার হোসেন বাবু ও রুনা দম্পতির জমজসন্তানের একটি চুরি হয়। হাসপাতালে ধাত্রী রাশেদা খানম ওরফে পারভিন পরের দিনভোরে ওই দম্পতির এক শিশু চুরি করে নিয়ে যায়। মোবাইল ট্যাকিঙের মাধ্যমেশিশু চুরির হোতা রাশেদাকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। মিডিয়া উইং মুফতিমাহমুদ জানান, রাশেদা একজন প্রশিক্ষিত ধাত্রী। এর আগেও সে বাচ্চা চুরিরঘটনার সাথে জড়িত। ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে রহিমার সাথে চুক্তি করে বাচ্চাচুরি করে তাকে দেয়। বেলির দীর্ঘদিন বাচ্চা না হওয়ার কারণে রাশেদার সাথেযোগাযোগ করে তাকে একটি বাচ্চা দেয়ার কথা বলে। তবে রহিমা তার স্বামীকেজানায়, তার সন্তান হবে। এ কারণে সে কয়েকমাস তার স্বামী থেকে আলাদা ছিলো। ওইবাচ্চাটি নিয়ে রহিমা তার স্বামীকে দেখিয়ে বলে এটি তাদের বাচ্চা। র‌্যাবজানায়, প্রশিক্ষিত ধাত্রী হওয়ার কারণে রাশেদা বিভিন্ন সময় প্রসূতি মায়েদেরবাচ্চা মৃত বলেও অন্য লোকের নিকট বিক্রি করার নজির রয়েছে। তবে এই ঘটনায়হাসপাতালের লোক জড়িত রয়েছে কি-না তা জানা যায়নি।