ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান ভর্তি প্রক্রিয়া পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান ভর্তি প্রক্রিয়া পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এখন পর্যন্ত ৩টি ধাপে বড় ধরনের পরিবর্তনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাণিজ্য অনুষদভুক্ত গ এবং বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল-জালিয়াতি ও নকল রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এমন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। যে তিনটি পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে সেগুলো হল- পরীক্ষার সেট কোড পদ্ধতি, উত্তীর্ণদের মৌখিক পরীক্ষা এবং খ ইউনিটে নতুন ভর্তি পদ্ধতি। এছাড়া ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পরীক্ষা কেন্দ্র না করার চিন্তা-ভাবনাও চলছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি বলেন, প্রযুক্তির নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে জালিয়াত চক্রও নিত্য-নতুন কৌশলে ভর্তি পরীক্ষায় সমস্যা তৈরির চেষ্টা করছে। যার বড় প্রমাণ এ বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। কারণ দুটি পরীক্ষাতেই ব্যাপক জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে তাই আমরা প্রধানত যেসব কারণে জালিয়াতি হয় সেগুলো রোধ করা চেষ্টা করবো।

তিনি জানান, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র চারটি সেট হয়। এগুলো হচ্ছে- ক, খ, গ ও ঘ। এ ক্ষেত্রে প্রকাশ্য সেট কোড আর ব্যবহার করা হবে না। এটা বাদ দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে সেট কোড দেয়া হবে। এ পদ্ধতিতে কোনো পরীক্ষার্থীই জানতে পারবে না তার সেট কোড কি। ভিসি মনে করেন, এ পদ্ধতি প্রবর্তন করা গেলে কেন্দ্রের বাইরে প্রশ্ন পাচারের কোনো সুযোগ থাকবে না। আর যদি প্রশ্ন বাইরে চলেও যায়, তাহলে জালিয়াতচক্র বুঝতেও পারবে না এটি কোনো সেটের প্রশ্ন। তাই প্রশ্নের উত্তর ঠিকভাবে দিতেও তারা সফল হবে না।

জানা গেছে, ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় বিভাগ পরিবর্তনকারী ঘ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা থেকেই নতুন এ পদ্ধতি কার্যকর হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী খান। শিক্ষার্থীরা যাতে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিপদগ্রস্ত না হয়, সে পরামর্শও দেন তিনি।

একটি সূত্র জানায়, এক্ষেত্রে আরও একটি পরিবর্তনের চিন্তা-ভাবনা চলছে। সেটি হচ্ছে- প্রশ্নের বিকল্পের ক্ষেত্রে আলাদা সেটে সঠিক উত্তরের স্থানটিও পরিবর্তন করা হবে। যেমন- বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কী? এ প্রশ্নের সঠিক জবাব একটি সেটে ক হলে আরেকটি সেটে খ করার চিন্তা-ভাবনা চলছে। এটা করা গেলেও নকল প্রবণতা কমবে।

এবারই প্রথমবারের মতো পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য বিশেষ ভাইভা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত গ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির দায়ে আটক হয় ৭ জন। এ সময় আশঙ্কা করা হয় বড় একটি অংশ জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। পরে ফলাফল দিলে ১২০ জন অবৈধভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। টনক নড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয় যারা উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের জন্য বিশেষ ভাইভা গ্রহণ করা হবে। বিশেষ করে ফলাফলের ক্রমে এসএসসি ও এইচএসসিতে কম স্কোর থাকার পরেও যারা অধিক নম্বর পেয়েছে তাদের প্রতি এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হবে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম জানান, আমরা মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া ৩০০ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর বিশেষ ভাইভা নেবো। এটা এজন্য যে, তারা অস্বাভাবিক নম্বর পেয়েছে।

এছাড়া কলা অনুষদভুক্ত খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাতেও কিছু পরিবর্তন আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের বিশেষ কিছু শর্তের জন্য এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলা অনুষদের ডিন ও খ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. সদরুল আমিন। তিনি জানান, প্রশ্ন আগের বছরগুলোর মতই হবে। প্রশ্নে মোট পাঁচটি অংশ থাকবে। তার মধ্য চারটির উত্তর দিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে যাদের বাংলা ছিলো না তারা বাংলার পরিবর্তে ইলেকটিভ ইংরেজি অংশের উত্তর দেবে। যারা ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হতে চায় তাদেরও অবশ্যই ইলেকটিভ ইংলিশে উত্তর দিতে হবে। যদি কেউ সাধারণ ইংরেজি এবং ইলেকটিভ ইংরেজির উত্তর দেয় তাহলে সে উক্ত বিষয় দুটি এবং বাংলাসহ মোট চারটি প্রশ্নের উত্তর দেবে। ইলেকটিভ ইংরেজি প্রশ্নের উত্তর না দিলে এবার ইংরেজি বিভাগে ভর্তি করা হবে না। এক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞানের একটি অংশের উত্তর করা যাবে না। চারটির পরিবর্তে প্রশ্নের ৫টি অংশের উত্তর দিলে উত্তরপত্র বাতিল করা হবে।