ঢাকা থেকেই আন্দোলনের পরিকল্পনা বিএনপির : কাল হরতাল

স্টাফ রিপোর্টার: যে কোনো মূল্যে গাজীপুরে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েও শেষ মুহূর্তে পিছু হটে বিএনপি। আগামী জানুয়ারিতে ঢাকা থেকেই চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। ৩ ও ৫ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অনুমতি চেয়ে আবেদনও করা হয়। সমাবেশ করতে দেয়া না হলে ৭২ ঘণ্টার হরতাল দেয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ধারাবাহিক কর্মসূচিরও চিন্তাভাবনা রয়েছে। এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই আগেভাগে শক্তি ক্ষয় করতে চাননি তারা। গাজীপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সেখানে যেতে অনড় থাকলে সরকার নেতাকর্মীদের ওপর বড় ধরনের ক্র্যাকডাউন করতে পারে। কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করারও আশঙ্কা ছিলো। এতে সামনের চূড়ান্ত আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এসব চিন্তাভাবনা থেকেই শেষ মুহূর্তে গাজীপুরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

BNP-3

তবে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেন্দ্রীয় অনেক নেতার পাশপাশি তৃণমূল নেতাকর্মীরাও সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গাজীপুরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েও পিছু হটায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা ও ক্ষোভ। তাদের মতে, সমাবেশ থেকে পিছু না হটে ঢাকা থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে রওনা হওয়া উচিত ছিলো। প্রয়োজনে উত্তরা পর্যন্ত যাওয়ার পর পুলিশ বাধা দিলে সেখান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা যেত। তাতে সরকারও চাপে থাকত। নেতাকর্মীদের মাঝেও উদ্দীপনা তৈরি হতো। পাশাপাশি কর্মসূচি নিয়েও তাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। ১৪৪ ধারা জারির পর গাজীপুরে এমনিতেই মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার সরকারি ছুটির দিন। তাহলে কেন হরতাল দেয়া হলো। সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনার ছোঁয়া সারাদেশেই প্রভাব পড়েছে। তাহলে শুধু গাজীপুর জেলাতেই হরতাল কেন। কর্মসূচি ঘোষণায়ও কোনো ছন্দ নেই।

কাল হরতাল: আগামীকাল সোমবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। গতকাল শনিবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জোটের শরিক দলগুলোর মহাসচিবদের সাথে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে হরতালের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গাজীপুরে খালেদা জিয়াকে সমাবেশ করতে না দেয়া, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া, কারাবন্দি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গতকাল শনিবার চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ চত্বরে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গাজীপুরে বিএনপির সমাবেশে ১৪৪ ধারা জারির প্রতিবাদে ২০ দলীয় জোট সারাদেশব্যাপি বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয়। তারই অংশ হিসেবে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ৩টার দিকে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের সভাপিত্ব করেন জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা। বক্তব্য রাখেন- জেলা জামায়েতের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন। বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের সভাপতি আনোয়ারুল হক মালিক, বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সরদার আলী হোসেন, শরিফুজ্জামান শরিফ, জামায়েতের সূরা সদস্য অ্যাডভোকেট মসলেম উদ্দিন, অফিস সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদ, থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহাজাহান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক হাজি খালেক, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি আওরঙ্গজেব বেল্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম পিন্টু, জামায়াতের পৌর আমির মফিজুর রহমান জোয়ার্দ্দার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাসেল, যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোকারম হোসেন, যুবদল সদস্য সচিব সাইফুর রশিদ ঝন্টু, সদর থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নূর নবী সামদানী, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক মো. আতিয়ার রহমান লিটন, পদ্মবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের মণ্ডল, বেগমপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আহমেদ আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাড. মজিদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক মিজান চৌধুরী, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ সরোয়ার রোমান, যুগ্মআহ্বায়ক জাহেদ মো. রাজীব খাঁন।

দর্শনা অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দর্শনায় বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। পুলিশের বাধার মুখে মিছিল পণ্ড হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে দর্শনা পৌর বিএনপির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বের হওয়ার সাথে সাথে দর্শনা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তা পণ্ড হয়ে যায়। পরে ওখানে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পৌর বিএনপির সহসভাপতি হাবিবুর রহমান বুলেটের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ইকবাল হোসেন, সরাজ, তোতা, মোমিনুল, যুবদল নেতা জালাল উদ্দিন, নুরু মিয়া, লুতফর, রহমান, মালেক, সাত্তার, রহিন, রাকিব, মিতুল, হাসান, সম্রাট, শাহীন, লিঙ্কন, রাসেল, আরাফাত প্রমুখ।