ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার সংস্কার কাজ ৫ দিন পরই সম্পূর্ণ নষ্ট

 

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহের খড়িখালী নামক স্থানে এক কিলোমিটার পিচঢালা পথ ছিলো ফেটে চৌচির। অনেক স্থানে তৈরি হয়েছিলো ছোট-বড় গর্ত। সেই ফাটল আর গর্ত ভরাতে সওজ বিভাগ গত সপ্তায় ১৪ লাখ টাকা ব্যয় করে সিল কোটের (পাথর কুচির প্রলেপ) কাজ করেছেন। আধা ইঞ্চি (১২ মিলি মিটার) পুরুত্ব এ কাজ করার মাত্র ৫ দিন পরই রাস্তাটি পূর্বের অবস্থানে ফিরে গেছে। নতুন করে দেয়া পাথর কুচি সব উঠে যাওয়ায় আবারো দেখা দিয়েছে ফাটল আর গর্ত।

এলাকাবাসী বলছেন কাজটি করা হয়েছে খুবই নিম্নমানের। ১২ মিলিমিটার পাথর কুচি দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে ৫/৬ মিলি মিটার। আর পিচ দেয়া হয়েছে নামমাত্র। যে কারণে মাত্র ৫ দিনেই রাস্তার এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া পাথর কুচি দেয়ার সময় রাস্তাটি ঠিকমতো পরিষ্কার করে নেয়া হয়নি। ফলে নতুন দেয়া পিচ-পাথর উঠে গেছে। আর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বিষয়টি সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেবেন। ঠিকাদার মতিউর রহমান ওরফে রুনু বলেন, কাজ তিনি খারাপ করেননি। তবে কেন এমন হলো তা আল্লাহ বলতে পারেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কটির ঝিনাইদহ অংশের বিষয়খালী বাজারের পর থেকে বারোবাজার পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরেছে। ইতঃপূর্বে সংস্কার করা পিচঢালা পথ ফেটে ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। যার ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া ঝাঁকুনি খেতে হয় যানবাহনের। এ অবস্থায় বেশ কয়েক স্থানে নতুন করে সিলকোট করার দরপত্র আহ্বান করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এর একটি হচ্ছে ওই সড়কের খড়িখালী মায়াময় মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় নামক স্থান থেকে দোকানঘর পর্যন্ত। এই এক কিলোমিটার সড়কের ফাটল আর গর্ত সমান করতে বরাদ্দ করা হয় ১৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজটি পান ঝিনাইদহের ঠিকাদার মতিউর রহমান ওরফে রুনু। তিনি ওই সড়কে আরো দুটি স্থানে কাজ পেয়েছেন বলে জানা গেছে। সড়ক বিভাগের একটি সূত্র জানায়, কাজ পাওয়ার পর ঠিকাদার গত সপ্তায় শনি, রোব ও সোমবার রাস্তায় পাথর কুচির কাজ করেন।

এদিকে খড়িখালী গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, ঠিকাদার রাস্তায় কাজের সময় ঠিকমতো পরিষ্কার করে নেননি। তাছাড়া ৫/৬ মিলি মিটার কুচি পাথর দিয়ে কোনোমতে কাজ করেন। সেই পাথরে ঠিকমতো পিচও দেয়া হয় না। যে কারণে রাস্তার এ পাথরকুচি থাকবে না বলে তারা পূর্বেই আশঙ্কা করেছিলেন। এ সময় তারা প্রতিবাদও করেন, কিন্তু ঠিকাদার নানাভাবে ভয় দেখিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করে চলে আসেন। তিনি জানান, সোমবার কাজটি শেষ করার পরের শনিবারের মধ্যে সব পাথর উঠে গেছে। রাস্তাটি এখন পূর্বের জায়গায় ফিরে গেছে। সমস্ত ফাটল আর গর্তগুলো ভেসে উঠেছে। তার ভাষায় সওজ ১৪ লাখ টাকা বরাদ্ধ করলেও বাস্ততে ২/৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আর এই নিম্নমানের কাজ করায় সরকারের ১৪ লাখ টাকায় পানিতে গেছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি নিজে সরেজমিনে দেখবেন। এরপর ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, সংষ্কার কাজ করার মাত্র ৫ দিনের মধ্যে রাস্তা আবার নষ্ট হয়ে যাবে এটা হতে পারে না।কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মতিউর রহমান জানান, তিনি ভালো করেই কাজটি করেছিলেন। কেন যে এ অবস্থা হয়েছে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারবেন না। তিনি বলেন, যে স্থানগুলো বেশি খারাপ হয়েছে সেগুলো আবার ঠিক করে দেবেন।