ঢাকার বৈঠকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির একাংশ অনুপস্থিত

 

সমঝোতার নানামুখি উদ্যোগের মাঝেও পৃথক কমিটি গঠন প্রক্রিয়া জোরদার

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশানস্থ কার্যালয়ে চুয়াডাঙ্গা বিএনপির আহ্বায়কসহ ৩ জন যুগ্মআহ্বায়ক পূর্ব নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেও অপরপক্ষ হাজির হয়নি। ফলে সমঝোতা বৈঠক ভেস্তে গেছে। এ বিষয়ে যুগ্মআহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলা বলেছেন, আমরা ঢাকায় পৌঁছুলেও বিকেল ৩টার মধ্যে গুলশানস্থ কার্যালয়ে হাজির হতে না পেরে যুগ্মমহাসচিব সালাউদ্দীন আহম্মেদের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করি। তিনি পুনঃ দিন নির্ধারণের গুরুত্বারোপ করেন।

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেছেন, চুয়াডাঙ্গা বিএনপিকে ঢাকায় তলব নয়। সমঝোতার বিশেষ উদ্যোগেরই অংশ হিসেবে ঢাকায় উভয়পক্ষ বসতে চেয়েছিলাম। তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় চেয়ারপার্সনের গুলশানস্থ কার্যালয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ১ম যুগ্মআহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেছেন, আমরা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সকলকে সাথে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা বিএনপিকে সুসংগঠিত করাতে চাই। তারই অংশ হিসেবে আমরা সমঝোতা বৈঠকে যুগ্মআহ্বায়ক সালাউদ্দীন আহম্মেদকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলাম। তিনি সম্মত হন। সে লক্ষ্যেই দিন নির্ধারণ করে উভয়পক্ষকে গুলশানস্থ কার্যালয়ে বসার আয়োজন ছিলো। অপরপক্ষের ওয়াহেদুজ্জামন বুলাসহ অন্যরা যথাসময়ে উপস্থিত না হওয়ার কারণে সমঝোতা বৈঠক হয়নি। তবে যুগ্মমহাসচিব সালাউদ্দীন আহম্মেদ আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম সংগঠনের গঠনতন্ত্র মোতাবেক অব্যাহত রাখার পুনঃতাগিদ দিয়েছেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনটি দীর্ঘদিন ধরেই বহুভাগে বিভক্ত। কয়েক মাস আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি গঠনের তাগিদ দেয়া হয়। এরই ভিত্তিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন। পরিচিতি সভাসহ কয়েকটি সভায় আহ্বায়ক কমিটির সকলে উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেলেও যুগ্মআহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলাসহ কমিটির একাংশ বেঁকে বসেন। কমিটি গঠনসহ জেলা আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়কের পছন্দের দুজনকে অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ তুলে কেন্দ্রে লিখিতভাবে নালিশ করা হয়। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। এরই মাঝে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা গুলশানস্থ কার্যালয়ে উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের কথা ছিলো। বৈঠকে যোগ দিতে উভয়পক্ষের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ ঢাকায় পৌঁছুলেও এক পক্ষের অনুপস্থিতিতে তা ভেস্তে গেছে।

সূত্র বলেছে, যথাসময়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, যুগ্মমাহমুদ হাসান খান বাবু, যুগ্মআহ্বায়ক খন্দকার আব্দুর জব্বার সোনা, যুগ্মআহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক মজু, সদস্য মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, শরিফুজ্জামান শরিফ উপস্থিত হন। অপরপক্ষে যুগ্মআহ্বায়ক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলা, সদস্য আলমডাঙ্গা পৌর মেয়র মীর মহিউদ্দীন, শহিদুল কাওনাইন টিলু. অ্যাড. শামীম রেজা ডালিম, এসকে সাদীসহ অনেকেই গুলশানস্থ কার্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য ঢাকায় পৌঁছান। এরা শেষ পর্যন্ত বৈঠকে যোগ না দিয়ে পথে বিলম্বের অজুহাত খাড়া করে যুগ্মমহাসচিব সালাউদ্দীন আহমেদকে মোবাইলফোনে বিলম্বের কারণে পৌঁছুতে পারছি না বলে জানিয়ে দেন।

এদিকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি ইতোমধ্যেই আলমডাঙ্গা পৌর ও উপজেলা এবং চুয়াডাঙ্গা পৌর ও উপজেলা সম্মেলন সম্পন্ন করেছে। অপরদিকে বিএনপির একাংশ পাল্টা কমিটি গঠনের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। সূত্র বলেছে, ইতোমধ্যেই জীবননগর উপজেলা বিএনপির কমিটি গঠন করেছে তারা। এ কমিটিতে জীবননগর পৌর মেয়র হাজি নোয়াব আলীকে সভাপতি ও সাইদুর রহমান ধুন্দুকে সাধারণ সম্পাদক করা হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির একই অংশ খাজা আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও লিয়াকত আলী শাহকে সাধারণ সম্পাদক করেও একটি কমিটি গঠন করে রাখা হয়েছে। এ কমিটিও অপ্রকাশিত রয়েছে। ২৫ জুলাই আলমডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলনের জোর প্রস্তুতি চলছে। এরই মাঝেও চলছে সমঝোতার নানামুখি উদ্যোগ। সমঝোতা প্রক্রিয়ার অগ্রভাগে রয়েছেন জেলা বিএনপির ১ম যুগ্মআহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু। তারই আহ্বনে যুগ্মমহাসচিব সালাউদ্দীন আহম্মেদ উভয়পক্ষের সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য উভয়পক্ষকে তিনি তাগিদও দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত এক পক্ষের অনুপস্থিতিতে তা ভেস্তে গেলেও সমঝোতার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

অপরপক্ষ অবশ্য বলেছে, আমরাও সকলকে সাথে নিয়েই জেলা বিএনপিকে পুনর্গঠন করতে চাই। কিন্তু যখন দেখছি একতরফাভাবে স্বেচ্ছাচারিতার ভিত্তিতে কমিটি গঠন করা হচ্ছে তখন তাদের সাথে হাত মিলাবো কীভাবে? এ প্রশ্নের মধ্যেই স্পষ্ট এখন চুয়াডাঙ্গা বিএনপি আগের মতোই বিভক্ত। নেতৃত্বে বদলেছে দু পক্ষের অবস্থান।