ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশ হাঁটছে

চুয়াডাঙ্গায় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ

স্টাফ রিপোর্টার: ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশ হাঁটছে। ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমরা কাজ করছি। এখন আর কেউ না খেয়ে থাকে না। আমরা শুধু খাদ্যেই নয় মাছ-মাংসেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। ইন্টারনেট আমাদের দোরগোড়ায়। আমরা যেনো ইন্টারনেটের অপব্যবহার না করি।’ কথাগুলো বলেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। জেলা প্রশাসন আয়োজিত ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে গতকাল প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।
চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে তিন দিনব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করা হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি। সমাপনী দিনে কর্মসূচির মধ্যে ছিলো ইনোভেথন দলগত উপস্থাপনা ও মূল্যায়ন, কুইজ প্রতিযোগিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর গল্প বলা, পুরস্কার বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। প্রশাসন ও বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে ভরে ওঠে টাউন ফুটবল মাঠ। দর্শক সারিতে বসা কয়েকজন জানান, সেবাদানে বিশেষ ভূমিকা, জনগণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-উপাত্য পৌঁছে দেয়া এবং উদ্ভাবনী চিন্তাধারাকে মূল্যায়ন করায় সর্বমহলে প্রশংসিত জেলা প্রশাসন। সেবাগ্রহীতা ও মেলায় আগত জনগণ সুবিধা ভোগ করতে পারায় মেলার সফলতা বলে জানান আয়োজকরা।
জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি অংশগ্রহণকারী স্টল, শিক্ষার্থী, উদ্ভাবক ও প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহা. জসীম উদ্দীনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সৈয়দ ফারুক আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নওরোজ মোহাম্মদ সাঈদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশ হাঁটছে। এ লক্ষ্যে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় সেবার পসরা সাজিয়ে বসেছিলো বিভিন্ন দফতরের স্টলগুলো। দেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু প্রযুক্তিতে দক্ষ জনবল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তবু আমরা আশাবাদী, ধীরে ধীরে সব সেক্টরেই ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বাড়বে। আমরাও এগিয়ে যাবো। এমডিজি’র ৮টি গোল আমরা সম্পন্ন করতে পেরেছি। এসডিজি গোল অর্জনেও কাজ করছি। বাংলাদেশে এখন আর ক্ষুধা নেই; কিছুটা দারিদ্র্য আছে এখনও। নবীনরা এগিয়ে এসে পরিশ্রম করলে অচিরেই সে সমস্যার সমাধান হবে।’
সমাপনী আলোচনাসভায় অতিথিদের বক্তব্য শেষে মেলায় আগত ৮০টি স্টল, ১৫টি ক্যাটাগরিতে ৪৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়।
এ বছর জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নির্বাচিত হয়েছেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রফিকুল হাসান। শ্রেষ্ঠ স্টল ১ম চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ২য় চুয়াডাঙ্গা বিআরটিএ ও ৩য় টিটিসি-চুয়াডাঙ্গা। শ্রেষ্ঠ তরুণ উদ্ভাবকের পুরস্কার পেয়েছে ১০ জন; মারুফ বিল্লাহ, শেখ শফিকুল ইসলাম, রাজিবুল আউয়াল, ফজলে রাব্বী, দিদারুল ইসলাম, রাকিদুল ইসলাম, ইরফাত নূর অবনী, আবু সাঈদ, আসিকুজ্জামান ও নাজমুল আরেফিন। শ্রেষ্ঠ নাগরিক সেবায় উদ্ভাবকের পুরস্কার পেয়েছেন (পল্লী অ্যাম্বুলেন্স) সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওয়াশীমুল বারী, শ্রেষ্ঠ দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী প্রতিষ্ঠান যুব উন্নয়ন অধিদফতর ও ওয়েভ ফাউন্ডেশন, দর্শনা। শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আলমডাঙ্গার মুন্সগিঞ্জ একাডেমি ও জীবননগর শাপলাকলি আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শ্রেষ্ঠ ডিজিটাল সেন্টার শঙ্করচন্দ্র ইউডিসি ও কুতুবপুর ইউডিসি। শ্রেষ্ঠ ই-সেবা প্রদানকারী দফতর জেলা শিক্ষা অফিস, শ্রেষ্ঠ পোর্টালের দফতর চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, (ডিসি অফিস ব্যাতীত) জেলা পর্যায়ে ১ম জেলা শিক্ষা অফিস, ২য় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ও ৩য় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১৮ উপলক্ষে টাইপিং প্রতিযোগিতায় যৌথভাবে ১ম জীবননগরের হারিসুল জিহাদ ও আলমডাঙ্গার রাকিব উদ্দিন রনি, ২য় সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের কম্পিউটার অপারেটর আরিফ হোসেন, ৩য় যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সহকারী প্রশিক্ষক মুহাম্মদ বাবুল আকতার। ‘আমার চোখে ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিষয়ক পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ১ম প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে মুহাসীনা তাবাসসুম, মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ১ম ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র আলিফ হাসান ও ২য় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১ম শ্রেণির ছাত্রী ইরফাত নূর অবনী। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর গল্প বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতায় ১০ জনকে এবং উপস্থিত সংবাদকর্মীদেরকে শুভেচ্ছা স্মারক দেয়া হয়।