ট্রাম্পের জেরুজালেম স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান জাতিসংঘের

মাথাভাঙ্গা মনিটর: জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি নাকচ করেছে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। ওই স্বীকৃতি ‘অকার্যকর’ এবং তা বাতিল করা হোক-লেখা ওই প্রস্তাবের ওপর গতকাল বৃহস্পতিবার সাধারণ পরিষদে ভোট হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ১২৮টি দেশের প্রতিনিধিরা, ভোটদানে বিরত থেকেছে ৩৫টি দেশ, আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে নয়টি।

ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। পরদিন ভোটাভুটিতে তার হুমকি অগ্রাহ্য করে ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে রায় দিল জাতিসংঘের অধিকাংশ সদস্য দেশ। ভোটের আগে ট্রাম্পের হুমকির কাছে মাথা নতো না করতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অপরদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, তারা এই ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করবেন। জাতিসংঘকে ‘মিথ্যার বেসাতি’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।

মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি তিন ধর্মের মানুষের কাছেই পবিত্র স্থান জেরুজালেম নিয়ে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব চলছে যুগের পর যুগ। জেরুজালেমকে রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে ইসরায়েল। অপরদিকে পূর্ব জেরুজালেমকে স্বাধীন ফিলিস্তিনের রাজধানী হিসেবে চান দখলদার ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ফিলিস্তিনিরা।

১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পশ্চিম জেরুজালেম ইসরায়েলের দখলে গেলে আল-আকসা মসজিদসহ অনেকগুলো ধর্মীয় স্থাপনা সম্বলিত পূর্ব জেরুজালেম জর্ডানের দখলে থাকে। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। এরপর থেকে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কট চলছে, যা মেটাতে যুক্তরাষ্ট্রও মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা চালিয়ে আসছে। এর মধ্যে গত ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমে সরানোর ঘোষণাও দেন তিনি। মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মিত্র দেশও তার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছে।

ট্রাম্পের ওই ঘোষণা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে একই ধরনের একটি প্রস্তাব গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে নাকচ হয় যুক্তরাষ্ট্রের ভিটো ক্ষমতা প্রয়োগে। এরপর আরব ও মুসলিম দেশগুলোর অনুরোধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিরল এই বিশেষ অধিবেশন বসে।

তুরস্ক ও ইয়েমেন উপস্থাপিত ওই প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করে জেরুজালের স্ট্যাটাস নিয়ে সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগের কথা বলা হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়া দেশগুলোর মধ্যে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের চার স্থায়ী সদস্য চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যও রয়েছে।
বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পালাউ ও টোগো। ভোটদানে বিরত থাকা দেশগুলোর মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকো রয়েছে।

এই ভোট সামনে রেখে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে বুধবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘তারা লাখ লাখ, কোটি, কোটি ডলার সাহায্য নিচ্ছে, আর আমাদেরই বিরুদ্ধে ভোট দিচ্ছে। ঠিক আছে, কারা এ ভোট দেয় আমরা দেখছি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দিক। আমরাও প্রচুর অর্থ বাঁচাব। এতে আমাদের কিছু যায় আসে না।’

ট্রাম্পের আগে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালিও মঙ্গলবার ওই প্রস্তাবে ভোট দিলে সদস্য দেশগুলোকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। একটি চিঠিতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী এ প্রস্তাবে কোন কোন দেশ ভোট দিচ্ছে প্রেসিডেন্ট তার রিপোর্ট চেয়েছেন।

পরে এক টুইটে হ্যালি বলেন, ‘জাতিসংঘে আমাদের সব সময় বেশি কিছু করতে বলা হয়। বেশি বেশি সাহায্য দিতে বলা হয়। সুতরাং আমরা যখন দেশের মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের দূতাবাস সরানোর মতো কোনও সিদ্ধান্ত নেই, তখন যাদেরকে আমরা সাহায্য করেছি তারা আমাদেরই বিপক্ষে যাবে সেটি আশা করি না।’