টানা বর্ষণে বেহালদশা সারাপদশে ॥ চুয়াডাঙ্গায় পাঁচিল ধসে বৃদ্ধ আহত

আজ থেকেই বৃষ্টির প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে ॥ আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে বন্যার পূর্বাভাস
স্টাফ রিপোর্টার: দেয়াল ধসে কুষ্টিয়া মিরপুরের পল্লিতে একজন নিহত হওয়ার পর এবার চুয়াডাঙ্গার সুমিরদিয়ায় এক বৃদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছেন। বৃষ্টিতে শুধু মাটির বা কাদার গাঁথুনির দেয়ালই পড়ছে না, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের অধিকাংশ এলাকারই রাস্তার বেহালদশা ফুটে উঠেছে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে শহর, শহরতলি থেকে গ্রামাঞ্চলেও। স্বয়ং রাজধানীতেও ভয়াবহ পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে। কর অফিসের কর্তাসহ সকলকে যেমন নৌকায় যেতে হচ্ছে অফিসে, তেমনই সচিবালয়ও হয়ে পড়েছে জলমগ্ন। তাছাড়া লাগাতার বৃষ্টিতে দিনমজুর শ্রেণির মানুষগুলোর দূর্দশার শেষ নেই। এ অবস্থায় আবহাওয়াবিদেরা শুনিয়েছেন আশার বাণী। তারা বলেছেন, আজ বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছেন আফতাব উদ্দিন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে মাইজদীর কোর্ট। সেখানে ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। নি¤œচাপের প্রভাবে টানা মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে অনবরত বৃষ্টি ঝরছে। রাজধানী ঢাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আগামী দুইদিনের মধ্যে সারাদেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকবে না। সেই সাথে আবহাওয়ার অবস্থা সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে।
এদিকে টানা বর্ষণে সারাদেশের মানুষ চরম ভোগান্তির সময় পার করছে। বিশেষ করে কর্মজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে দিনমজুররা। বৃষ্টির কারণে কাজে নামতে না পেরে হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে তাদের। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে তারা। এছাড়া স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষ অসহনীয় দুর্ভোগ পোয়াচ্ছে। রাস্তা পানির নিচে থাকায় কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে নাকালের শেষ নেই। সড়কে জলাবদ্ধতা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে অনেকে। তারা বলছে, প্রকৃতিক দুর্যোগে কারো হাত নেই। তবে দুর্যোগ মোকাবেলা ব্যবস্থাপনা এতোটা নাজুক যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মানুষ।
গতকাল বুধবার এসব তথ্য জানিয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, বেশির ভাগ নদীর পানি বিপদসীমার নিচে আছে। সাধারণত বড় বন্যা হয় যখন যমুনার পানি, পদ্মার পানি ও মেঘনার পানি একসঙ্গে বাড়ে। সঙ্গে যদি অমাবস্যা থাকে, তখন বন্যার প্রকোপ হয়। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়েছে। ডিসিদের সাথে বৈঠকের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘ডিসিরা বন্যার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। তারা নদীভাঙন রোধ নিয়ে আলোচনা করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই কার্য অধিবেশনে অংশ নেন।
এদিকে বৃষ্টির আগে থেকেই চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বর, শহীদ আবুল কাশেম সড়কটি বাস টার্মিনাল পর্যন্ত বেহালদশা। ভয়াবহ খানা-খন্দ মাড়িয়ে ছোট বড় যানবহনগুলোকে চলতে হচ্ছে। পথচারীদের মাঝে মাঝেই কাদা মেখে একাকার হতে হচ্ছে। যখনই কোন যান যাচ্ছে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীকে কাদামাখতে হচ্ছে। সড়কের পোস্টঅফিসের সামনে, হোটেল আল আমিনের সামনে, মোজাম্মেল হক ফিলিং স্টেশনের অদূরে, পুরাতন ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কটির দশা দেখে ক্ষোভের সাথে প্রায় সকলেই প্রশ্ন তুলে বলতে শুরু করেছে, এসব দেখবে কে? কার দায়িত্ব এ সড়ক সংস্কারের? সড়ক ও জনপথ বিভাগের গাড়িসহ কিছু শ্রমিক মাঝে মাঝে সড়কের বড় বড় ক্ষতস্থানে বালি আর নি¤œমানের আদলা ইট দিয়ে নামকাওয়াস্তে কিছু করলেও সেখানে অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানকার ভয়াবহ ক্ষত ফুটে উঠছে। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গায় পাঁচিল চাপা পড়ে আহত হয়েছে ফজেল আলী ওরফে পুটে (৬৭) নামের এক বৃদ্ধ। তিনি গতকাল দুপুরে স্থানীয় একটি ইটভাটার পুকুরে গোসল করতে নেমে পুকুরপাড়ের পাঁচিল চাপা পড়ে আহত হন। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত পুটে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সুমিরদিয়ার মৃত মুনছাব আলীর ছেলে। পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, ফজলে ওরফে পুটে গতকাল বুধবার বেলা ২টার দিকে সুমিরদিয়ার আল আমিনের ইটভাটার একটি পুকুরে গোসল করতে নামে। পুকুরের পাশে বহুদিনের মাটির গাঁথুনির ইটের পাঁচিল বৃষ্টিতে দুর্বল হয়ে ধসে পড়ে। পুটে তার নিচে চাপা পড়ে। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।
বদরগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের মালোপাড়ার হাফ কি.মি রাস্তা চলাচল মানুষের কাছে এখন মারণফাঁদ তৈরি হয়েছে। রাস্তার কিছু অংশ বর্ষার পানি গড়িয়ে গিয়ে ভেঙে বজলুর আলীর পুকুরের মধ্যে পড়েছে। চলাচল করতে পারছে না মালোপাড়ার প্রায় ১শ পরিবারের সাধারণ মানুষ। এছাড়া কুতুবপুর স্কুলপাড়ার জামে মসজিদের নিকট রাস্তার ওপর দীর্ঘদিন ধরে কাদা মাটি জমাট বেঁধে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাস্তার মাঝে মাঝে বর্ষার পানি জমা হয়ে হাঁটু পযর্ন্ত কাদা জমেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলের আশপাশের প্রায় ৭০ পরিবারের মানুষ রাস্তার ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। রাস্তাটি দ্রুত গতিতে মেরামত করার প্রযোজন।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহে ৭ দিনের টানা ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে শহরের উপশহরপাড়া, হামদহ, ব্যাপারীপাড়ারসহ শহরের বিভিন্ন অঞ্চল। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকাই দেখা দিয়েছে এ জলাবদ্ধতা । এতে এ অঞ্চলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে শহরের উপশহরপাড়া, হাটের রাস্তা, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ঝিনাইদহ এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে তা ঘরবাড়িতেও প্রবশ করছে। কয়েকদিনের ভারীবর্ষণে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের হাসপাতাল সড়কটি দেহালদশা। সড়কের অধিকাংশ ছোট বড় গর্ত ও খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পৌরবাসী।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের বড়বলদিয়া-বুইচিতলার একমাত্র সড়কটি পাকা হওয়া স্বত্ত্বেও রাস্তার মাঝে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে এক হাঁটু পানি ও কাদায় পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসী ক্ষোভে রাস্তার ওপর ধানের চারা রোপণ করেছে। কুড়ুলগাছি নতুনপাড়ার ছাত্র-ছাত্রীরা বড়বলদিয়া-বুইচিতলা দাখিল মাদরাসায় যাওয়া এখন খুব কষ্টের হয়ে পড়েছে।