টানা অবরোধের ডাক : রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন দেশ

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। আজ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে। গতকাল চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি সড়কে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

গতকাল রাতে রাজধানীর বারিধারার বাসভবনে তাৎক্ষণিক এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাড. খন্দকার মাহবুব হোসেন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। বিরোধী জোটের ডাকা অবরোধ দিয়েই শুরু হচ্ছে নতুন বছর। এদিকে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও গতকাল রাজধানীতে কোনো সভা-সমাবেশ করতে পারেনি বিরোধী জোট। দিনভর রাজধানী ছিলো কার্যত অবরুদ্ধ। দুপুরে দ্বিতীয় দিনের মতো সুপ্রিম কোর্টে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেখানে যুব মহিলা লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। দিনভর নয়া পল্টন ছিলো পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। এদিকে বিরোধীদলের এ কর্মসূচি ঘিরে গতকালও সারাদেশের সাথে রাজধানীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো। চলেনি দূর পাল্লার বাস। বন্ধ ছিলো ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল। এতে দেশজুড়ে ছিলো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। রাজধানীতে গণপরিবহন না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে কেন্দ্র করে সোমবার দ্বিতীয় দিনেও সারাদেশ ছিলো অচল। ঢাকা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো সারাদেশ। রাজধানী থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। বাইরে থেকে আসা কোনো পরিবহনকে রাজধানীতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ঢাকার প্রবেশপথসহ প্রধান সড়কগুলোতে সোমবারও অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শাসক দলের নেতাকর্মীরা। নিত্যদিনের কাজে ঢাকায় প্রবেশে পুলিশের তল্লাশির নামে হয়রানির শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গন্তব্যে যেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় তাদের। তবে কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের কোনো সহিসংতার ঘটনা ঘটেনি। এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীনদের বাধার কারণে সোমবারও নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণজমায়েত কর্মসূচি পালন করতে পারেনি ১৮ দলীয় জোট। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশের এলাকা ছিলো অবরুদ্ধ। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে সোমবারও তার বাসা থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। দুপুরে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে গেলে বাসার সামনে থেকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানসহ তিনজনকে আটকের পর ছেড়ে দেয়া হয়। সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার সাথে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনারের বৈঠকের পর বাসা থেকে বের হতেই আটক করা হয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে। এছাড়া গণজমায়েতকে কেন্দ্র করে বিএনপির কেন্দ্রীয়, মহানগরীর কোনো নেতাকে রাজপথে দেখা যায়নি।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ও প্রবেশপথগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে কেন্দ্র করে সোমবার ভোর থেকেই সতর্ক অবস্থানে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। নাশকতা ঠেকানোর জন্য পুলিশ এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল, সাউন্ড ও জলকামানসহ সাঁজোয়া যান প্রস্তুত রাখে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা লাঠি নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করে। অনেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে রাস্তা দখল করে রাখে। রাজধানীর আটটি পয়েন্ট দিয়ে ঢাকার বাইরে কোনো যানবাহন ঢুকতে দেয়া হয়নি। কেউ ঢোকার চেষ্টা করলে তার পরিচয়পত্র দেখে ঢোকার অনুমতি দেয়া হয়। এমনকি ‘সংবাদকর্মী’ স্টিকার সংবলিত পরিবহনও আটকে হয়রানি করা হয়েছে।

২৯ ডিসেম্বর জোটের পূর্বঘোষিত ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করতে না পেরে সোমবার একই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। একই সাথে ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে তারা।

এদিকে ঘোষিত তফশিল বাতিল, হত্যা-নির্যাতন, হামলা-মামলা বন্ধ, বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় জেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি শহীদ হাসান চত্বরে জমা হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। অবস্থান কর্মসূচিতে জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. ওয়াহেদুজ্জামান বুলার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম রতন, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মন্টু, জেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, জেলা যুবদল নেতা আশরাফ বিশ্বাস মিল্টু, মামুন রেজা সবুজ, আরিফুজ্জামান পিন্টু, জেলা ওলামাদলের সভপতি মো. ফজলুর রহমান, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক এমএ তালহা, যুগ্মআহ্বায়ক মঞ্জুরুল জাহিদ, রাজিব খান, পদ্মবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক আতিয়ার রহমান, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান লিটন, আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক শাহনেওয়াজ কালু প্রমুখ।

অপরদিকে জাহাঙ্গীর আলম সমর্থিত নেতাকর্মীরা কোর্টমোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি পুলিশি বাধার মুখে পড়ে কোর্টমোড়স্থ দলীয় কার্যালয়ে এসে সমাবেশ করে। সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি নেতা আইনুর হোসেন পচা। বক্তব্য রাখেন মৎস্যজীবীদলের আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বকুল, আরশেদ আলী কালু, ওহিদুল ইসলাম ওহিদ, হামিদুল হক নেতাজী, মশিউর রহমান প্রমুখ। প্রেসবিজ্ঞপ্তি।