টাকা শাদা করার সুযোগ: মোবাইলেএবার সারচার্জ

 

 

স্টাফ রিপোর্টার: কালোটাকাশাদা করার সুযোগ দেয়ার বিপক্ষে বারবার মতো দিলেও এবারো আবাসন খাতেবিনিয়োগের শর্তে এ সুযোগ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুলমুহিত। গতকাল শনিবার ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তৃতায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
সমাপনী বক্তৃতায় কিছু কিছু বিষয়ে সংশোধনী এনে অর্থমন্ত্রী বলেন, আবাসনখাতে প্রতি বর্গমিটারে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর প্রদান করলে বিনা প্রশ্নেবিনিয়োগ মেনে নেয়ার বিধানটি কর প্রদান পদ্ধতিতে সরলীকরণমাত্র।

২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটেও আবাসন খাতে নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে কালোটাকাশাদা করার বিধান ছিলো। অর্থমন্ত্রী বলেন, আয়কর অধ্যাদেশে কালোটাকা শাদা করারবিষয়ে কারো কারো মধ্যে বিভ্রান্তি রয়েছে। অর্থ আইন ২০১১ এর মাধ্যমে সরকারিট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করলেবিনিয়োগকৃত অর্থ বিনা প্রশ্নে মেনে নেয়ার বিধান করা হয়। বাস্তবে এ বিধানেরসুযোগ করদাতারা গ্রহণ করেননি। এ সুযোগ রাখতে চান না বিধায় এ সংক্রান্তবিধানটি বাতিলের প্রস্তাব করছেন।
তিনি বলেন, কেউ অতীতে তার আয়ের ওপর সঠিকভাবে কর পরিশোধ না করলে পরবর্তীতেপ্রযোজ্য কর এবং জরিমানা পরিশোধ করে কর অনারোপিত আয়ের ওপর কর পরিশোধ করতেপারেন। সেক্ষেত্রে করদাতাকে কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। প্রচলিত হারেই তাকেজরিমানাসহ কর দিতে হয়। এ ধরনের সুযোগ কর প্রদান ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্যরক্ষার্থে প্রয়োজন বিধায় এ দুটি বিধান অব্যাহত রাখা যায়।

গত ৫ জুন বাজেট পেশের পরদিন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবেঅর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন- এ মুহূর্ত থেকে সব খাতে কালোটাকা শাদা করারসুযোগ বাতিল করা হলো।

মোবাইল ফোনে সারচার্জ: এদিকে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শনিবার জাতীয় সংসদে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়েপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সারচার্জ থেকে যে রাজস্ব আসবে তা শিক্ষা ওঅন্যান্য খাতে ব্যয় করা যেতে পারে।’ শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় মোবাইল ফোনের আমদানির ওপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব কিছুটা বেশি হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন।তিনি অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, মোবাইল ফোনের আমদানির ওপর শুল্ককিছুটা হ্রাস করতে পারেন। জবাবে সমাপনী বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মালআবদুল মুহিত বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর যে সারচার্জআরোপের কথা বলেছেন, তা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হবে।তবে কী হারেএই সারচার্জ আরোপ করা হবে সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রী কিছু বলেননি।
অর্থ বিল ২০১৪ পাস:প্রস্তাবিত বাজেটে সাতটিসহ কিছু ক্ষেত্রে রাজস্ব পরিবর্তন ও সংশোধনী এনে জাতীয় সংসদে শনিবার অর্থ বিল ২০১৪ পাস হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফোনে সারচার্জ আরোপ, কিডনি ডায়ালাইসিসেরওপর মূসক অব্যাহতিসহ সাতটি ক্ষেত্রে শুল্ক, কর, সম্পূরক শুল্কপুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করেছিলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসবসুপারিশ তার জন্য নির্দেশনা বলে উল্লেখ করে গ্রহণ করেছেন। এই সাতটিসহ আরোকিছু ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বাজেটে পরিবর্তন আনা হয়।পাস হওয়া অর্থ বিলে পুঁজিবাজার থেকে অর্জিত আয় বা গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হয়েছে।আবাসন শিল্পে মন্দা বিবেচনায় কিছু উসে কর কমানো, ডিটারজেন্ট, বেস্নডসহ আরোকিছু পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বাজেটীয় প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পাইপ লাইনে গ্যাসের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারেরওপর শুল্ক পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে। এগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীঅর্থমন্ত্রীকে সুপারিশ করেছিলেন।আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন এই কর ব্যবস্থা বহাল হবে। রোববার সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে।স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন। সংসদনেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ গতকালবাজেটের ওপর আলোচনা করেন।অর্থ বিল পাসের আগে দুজন সাংসদ জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়।
স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, দেশথেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। ২৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপিঋণ রয়েছে দেশের ব্যাংকগুলোতে। ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে সুইস ব্যাংকেজমা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে সুইস ব্যাংকে কাদের টাকা রয়েছে, তা জানার ও ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।রুস্তম আলী বলেন, আরো যেখানে যা অর্থ পাচার হয়েছে, সেগুলো দেশে ফেরত আনতেহবে। তিনি এসব আলোচনায় এনে অর্থ বিল পাসের আগে তা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবকরেন।জাতীয় পার্টির সাংসদ নুরুল ইসলাম মিলন তার আলোচনায় বলেন, ব্যাংক ও আর্থিকখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোর যে অবস্থা তাতে এ বরাদ্দ দেয়াঠিক হবে না। আবার স্বাস্থ্য খাতে যে অবস্থা চিকিৎসক থাকেন না। শিক্ষা, পরিবেশ ও পানি ব্যবস্থার যে অবস্থা তাতে মানুষ ভালো নেই। সাধারণ মানুষসুপেয় পানি পাচ্ছেন না। তিনিও অর্থ বিল পাসের আগে তা জনমত যাচাইয়েরপ্রস্তাব করেন।অর্থমন্ত্রী এসব বিষয়ে একটি বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন গোষ্ঠী ওসমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে আলোচনা করে তিনি এই বাজেট প্রস্তাবকরেছেন। এমনকি তিনি গ্রাম পর্যন্ত এই বাজেট নিয়ে আলোচনা করেছেন। এখনগ্রামের মানুষ পর্যন্ত বাজেট নিয়ে আলোচনা করে। তিনি বলেন, বাজেট প্রস্তাবেরপর এ নিয়েও নানা ধরনের আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে কিছু ব্যক্তি ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধি নানা ধরনের সমালোচনা করেছেন, সেগুলো তাদেরমস্তিষ্কপ্রসূত।অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশি অর্থায়ন নিয়ে তার সঙ্গে অর্থনীতিবিদ আবুলবারকাতের একবার বাহাসও হয়েছে। বারকাত বলেছিলেন, অর্থায়নের ৮৫ শতাংশবিদেশিরা নিয়ে যান। কিন্তু তিনি তা প্রমাণ করতে পারেননি। তার কাছে কোনোসমীক্ষাও নেই।অর্থমন্ত্রী বলেন, এর পরিমাণ কোনো মতেই ৩০ শতাংশের বেশি না। তিনি দুজনসাংসদকে তাদের জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব প্রত্যাহারের প্রস্তাবও করেন।