টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি প্রার্থীর নানা হলেন দু’মুক্তিযোদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাণিজ্যে অমুক্তিযোদ্ধার সন্তান পুলিশ বাহিনীতে চূড়ান্ত নিয়োগ পেতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিশোরগঞ্জ থানা সূত্রে জানা গেছে, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পুলিশে চলতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ১১ জনের পুলিশি তদন্তের তালিকা এসেছে। তার মধ্যে তিন জন মুক্তিযোদ্ধা কোটায়।
নির্ভরশীল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কিছু মুক্তিযোদ্ধা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান কিংবা নাতি/নাতনী পরিচয় দিয়ে সাধারণের নিকট কোটা বিক্রি করছে। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জেলায় পুলিশ বাহিনীতে কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। সে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় উপজেলার বড়ভিটা ও পুটিমারী ইউনিয়নের দুইজন প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চূড়ান্ত পর্যায়ে টিকে যায়।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা সুধির চন্দ্র ও পুটিমারী ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিশ চন্দ্র এমন কাজ করে চলছে। সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, পুটিমারী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত প্রার্থী নিরঞ্জন রায়, পিতা- সুজুরাম রায় , মাতা ভারতী রানী। তিনি চূড়ান্ত পর্যায়ে টিকেছেন বলে জানা গেছে। থানা হতে পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদন গেলেই আর কোনো সমস্যা নেই। নিরঞ্জন রায়ের দাদা বৃদ্ধ সনাতন বর্ম্মন (৭৫) জানান, ’সুজুরামের বিয়ে আমিই দেই। নিরঞ্জন রায়ের নানা বাড়ি উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের বগুলাগাড়ী গ্রামে।’ তিনি পাশের ইউনিয়নের মৃত ঢোডা বর্মনের ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুধির চন্দ্রকে নানা সাজিয়ে চূড়ান্ত নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে নিরঞ্জন রায়ের সাথে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমি এ বিষয়ে আপনাদের সাথে কোনো কথা বলবোনা। এ ব্যাপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা সুধির চন্দ্র রায়ের বাড়ি গিয়ে তার সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলেননি।
অপরদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিশ চন্দ্র, পিতা- মৃত পেদু বর্ম্মন তিনি নিঃসন্তান। বাজেডুমরিয়া গ্রামের গনেশ চন্দ্রের ছেলে নিবাস চন্দ্র বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিশ চন্দ্রকে নানা বানিয়ে পুলিশে চাকরি নিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সনদ পেশ করেছেন। নিবাস চন্দ্রের মাতা- মালতী রানী রায়ের গ্রাম বড়ডুমুড়িয়ার এলাকাবাসী জানায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিশ চন্দ্রের কোনো মেয়ে নেই। নিবাস বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিশ চন্দ্রকে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত তালিকায় নাম উঠাতে যাচ্ছেন। নিবাসের বাড়িতে গিয়ে নিবাসকে না পেয়ে তারঁ বাবা গনেশ চন্দ্রের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, স্ত্রী ও ছেলের পরামর্শে আমি এ ধরনের কাজ করেছি। নিবাসকে নাতী পরিচয় দানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা জ্যোতিশ চন্দ্র রায়ের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, সে আমার নিজের নাতী নয় তবে আমি তাঁকে নিজের নাতির মতো দেঁখি তাই।
এছাড়া বড়ভিটা ইউনিয়নের গ্রামীণ ব্যাংক সংলগ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিকভাবে পুলিশ কনস্টেবল পদে প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হন। এলাকাবাসী জানায়, দুই বছর পূর্বে একই ইউনিয়নের মেলাবর হাজিপাড়া গ্রামের নুরুল আমিনের মেয়ে মনিরা বেগমের সাথে বিয়ে হয় মিজানুরের। সেসময় বিয়ের কাজী মিজানুরের নিকটাতœীয় ছিলেন বলে কাবিন নামাটি সংগ্রহ হচ্ছে না। তবে মিজানুরের বাবা লুৎফর রহমান বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও সে সময় স্থানীয় ভাবে একটি সালিশ হয়েছিল এবং সালিশে তিনি উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবুল বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের ওয়ারিশন সার্টিফিকেটের ওপর ভিত্তি করে আমি প্রত্যয়ন পত্র দেই। কেউ যদি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন তার জন্য দায়ী আমি নই। যে যতটুকু পানিতে নামবে, সে ততটুকু ভিজবে। তিনি আরো বলেন, আমি উপজেলা পরিষদ হলরুমে মিটিংয়ে আছি পরে বিস্তারিত কথা বলব। কিশোরীগঞ্জ থানার ওসি বজলুর রশীদ বলেন, তাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনে যাহা সত্য পেয়েছি তাই পাঠিয়েছি।