ঝিনাইদহে সাধুহাটিতে আ.লীগের দু’গ্রুপের সভা আহ্বান : ১৪৪ ধারা জারিতে সভা পণ্ড

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ১৪৪ ধারা জারির কারণে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত আওয়ামী লীগের সমাবেশ হয়নি। একই স্থানে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি খলিলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক নাজির উদ্দীন চেয়ারম্যান গ্রুপ সমাবেশের ডাক দিয়ে মাইকিং করে। এতে ইউনিয়ন জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে সকল প্রকার সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। স্থানীয় ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল কাসেম জানান, সাধুহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে ৩ জন আহত হয়। সে কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে মাইকিং করা হয়। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি এমদাদুল হক শেখ খবরের সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ বিষয়ে সাধুহাটি ইউনিয়ন ও ঝিনাইদহ শহরে গত সোমবার সন্ধ্যায় মাইকিং করা হয়। তিনি বলেন একই স্থানে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপ মিটিং আহ্বান করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপী ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। এদিকে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নে যুবলীগ কর্মীরা হামলা চালিয়ে ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ তিন জনকে পিটিয়ে জখম করেছে। এ ঘটনায় বোড়াই গ্রামের মৃত আ. রহমানের ছেলে এরশাদ আলী (৩৫) গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হামলায় আহত সাবেক ইউপি সদস্য আ. জলিল ও মতিয়ার রহমান প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত এরশাদ আলী বলেন, আমরা দশমাইল বাজারের সফি উদ্দিনের চায়ের দোকানে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শুকুর আলী, কাশেম, আলীম, আব্দার ও বারেক পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা এ ঘটনার বিচার দাবি করছি এবং মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি ঝিনাইদহের ৬টি উপজেলার জনসাধারণ ব্যাপক ভোগান্তি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার পূর্ব অঞ্চলের প্রায় ২০ টি গ্রামের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে কতিপয় চাঁদাবাজের নিকট। গ্রামগুলো হলো যুগনি, বাঘিনি, খালিয়া, খড়িচাল, চর-বাঘিনী, রতনপুর, আবাইপুর, মিনগ্রাম, হাটশ্রীখোল, গাংগুটিয়া, কুমিড়াদহ, হাটফাজিলপুর, কামান্না, বারইহুদা, বড়বাড়ি বগুড়া, আলফাপুর, কৃপালপুর, পদ্মনগর, পাঁচপাখিয়া, রুপদাহ উল্লেখযোগ্য। এ গ্রামগুলোর জনসাধারণ হাট গোপালপুর হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে ঝিনাইদহ মাগুরা শহরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত যাতায়াত করে। কিন্তু তাদের সুবিধা মতো পরিবহনে তারা যাতায়াত করতে পারে না। এ অবাধ যাতায়াতের পথে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে হাট গোপালপুরের কতিপয় চাঁদাবাজ। এলাকার ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাট- গোপালপুর থেকে ভ্যানে কোনো যাত্রী ওই গ্রামগুলোতে যেতে পারবে না। ওই অঞ্চলের ভ্যানগুলোই শুধু যাত্রী নিয়ে আসতে পারবে। বাজার থেকে ভ্যানে যাত্রী নিয়ে যেতে পারবে শুধু যারা কোদালিয়া, হরিসঙ্করপুর ও শ্রীরামপুর গ্রামের। ওই ২০ গ্রামের কোনো ইজিবাইক হাট গোপালপুর থেকে যাত্রী নিয়ে যেতে পারবে না তারা শুধু যাত্রীদের হাট গোপালপুরে নিয়ে আসতে পারবে। এ কারণে আবাইপুর থেকে কোনো যাত্রী হাট গোপালপুরের ভ্যান বা ইজিবাইক নিয়ে আসতে পারবে না। যদি কেউ এ নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে এ সিন্ডিকেট তাঁর ভ্যান অথবা ইজিবাইক হাট গোপালপুর টু আবাইপুরের রাস্তায় চলাচল বন্ধ করে দেবে। প্রতিদিন এ সিন্ডিকেটের ২ জন লোক বসে থাকে তারা প্রতি টিপে প্রতিটি ইজিবাইক চালকের নিকট থেকে ২৫ টাকা করে আদায় করে। তাতে প্রতিদিন প্রায় ইজিবাইক বাবাদ ১১৫০ টাকা যাহা মাসে ৩৪৫০০ টাকা আদায় করে থাকে। এখানকার ইজিবাইক বাদে যদি বাহির থেকে কেউ কোনো ইজিবাইক রিজার্ভ করে এ রাস্তা দিয়ে নিয়ে যায় তাহলে এ রাস্তায় আসার কারণে সেই গাড়ি থেকে ২০ টাকা আদায় করে। আলমসাধু, নছিমনসহ অন্য গাড়ি থেকে ১০ টাকা আদায় করে। এদিকে, পুলিশের নামেও এখানে চাঁদাবাজি হয়ে থাকে বলে দালালরাও অভিযোগ করেছে। প্রতিমাসে পুলিশের দেয়ার জন্য প্রতিটি ইজিবাইক থেকে ১২০ টাকা করে দেয়া হয়। তাও এ মাসে আরও ১০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। চলতি মাসে গাড়ি প্রতি পুলিশকে দিতে হবে ১৩০ টাকা। এ কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে যাত্রীদের অযথা হয়রানি করা হয়।
যেখানে ঝিনাইদহ শহর থেকে সিএনজি অথবা ইজিবাইকে হাট গোপালপুর পর্যন্ত ১৪ কি.মি ২০ টাকা ভাড়া নেয়। সেখানে হাট গোপালপুর টু আবাইপুর ১২ কি.মি ২৫ টাকা ভাড়া নিয়ে থাকে। ইজিবাইকে যেখানে ৬ জন যাত্রী নেয়া যায় সেখানে অতিরিক্ত চাপাচাপি করে ৮ জন যাত্রী নিয়ে যায়। এজন্যে অনেক যাত্রী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। তারপর ঝিনাইদহ অথবা মাগুরা থেকে গাড়িতে নামতে হয় মহাসড়কে যাত্রীদের নিকট ভারি ব্যাগ থাকলে সেটা বহন করে আবাইপুর যাওয়ার স্ট্যান্ডে আসতে অনেক কষ্ট হয়। যাত্রীরা পড়েছে উভয় সংকটে অতিরিক্ত ভাড়াও দিচ্ছে আবার কষ্ট করছে। গাড়িতে অনেক সময় ৮ জন যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়। ইচ্ছা করলেও যেতে পারছে না অন্য ভ্যান কিংবা ইজিবাইকে। ২০ গ্রামের মানুষ এ সিন্ডিকেটের নিকট বড়ই অসহায় হয়ে পড়েছে। শুধু জনসাধারণ নয় এ সিন্ডিকেটের বিপক্ষে খোদ ইজিবাইক চালকেরাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইজিবাইক চালক বালেন, আমারা প্রশাসনের অনেকের নিকট অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। এছাড়া জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের ৭১’র ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির অফিসের সামনে থেকে প্রায় ১২০টি সিএনজি হাট গোপালপুরের যাত্রী আনা নেয়া করে। প্রতিদিন একটি সিএনজির চালককে ঝিনাইদহে ৩০ টাকা গোয়ালপাড়া বাজারের ২০ টাকা ও হাট গোপালপুরে ২০ টাকা করে মোট ৭০ টাকা চাঁদা দিয়ে পথে চলতে হয়। অপর একজন ইজিবাইক চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাট গোপালপুরের এ রাস্তায় প্রায় ২৩টি ইজিবাইক আছে। ইজিবাইক প্রতি ২ বার যাত্রী নিয়ে যেতে পারে। পুলিশের চাঁদা, স্ট্যান্ডের চাঁদা আবার যাওয়ার সময় যাত্রী নিয়ে গেলেও তাদের আসতে হয় খালি গাড়ি নিয়ে। যদি ২ দিক থেকে যাত্রী নেয়া যেতো তাহলে তাদের খরচ কম হতো এবং যাত্রীদের নিকট থেকে ভাড়া কম নিতে পারতো। পাইকপাড়া গ্রামের অপর চালক বলেন, রাস্তা সরকারের, টাকা যদি দিতে হয় তাহলে সরকারকে দেবো ওরা কি সরকার? আমাদের নিকট থেকে টাকা নেয়। এ প্রসঙ্গে হাট গোপালপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই তরিকুল ইসলাম জানান, পুলিশ ইজিবাইক চালকদের নিকট থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করে না। পুলিশের মাসে ১২০ টাকা করে দিতে হয় কথাটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা বলে তিনি দাবি করেন। যারা চাঁদাগুলা তোলো তাদের খোঁজ করবেন বলে তিনি জানান।