ঝিনাইদহে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে চালের বাজার অস্থির

জাহিদুর রহমান তারিক: চাল ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ঝিনাইদহ জেলায় চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে মর্মে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। দিনমজুর ও মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে পরিচিত ঝিনাইদহে চালের বাজার অস্থির হওয়ায় খেটে খাওয়া দিনমজুর ও মধ্যবিত্তদের নাভিশ্বাস উঠেছে। ঝিনাইদহে খুচরা বাজারে মোটা চাল ৫০ টাকা ও চিকন চাল ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ধান ও চালের কোনো সঙ্কট না থাকলেও ক্রমাগত দাম বৃদ্ধির কারণে হাফিয়ে উঠেছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেক দিনমজুর সারাদিন কাজ করে দুই কেজি মোটা চাল কেনা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান সাধুহাটি এলাকার ভ্যানচালক আবেদ আলী বেহারা।
তিনি বলেন, সারাদিন ভ্যান চালিয়ে চাল, ডাল, তেল ও তরিতরকারী কিনতে হিমশিম খাচ্ছি আমি। ঝিনাইদহ শহরের কলাবাগান পাড়ার মুদি দোকানদার দিলিপ কুমার দে বলেন, দোকানে সারাদিন ২শ টাকাও ইনকাম নেই। বেচাকেনা কমে গেছে। তাই এখন তিন বেলার পরিবর্তে দুই বেলা ভাত খাচ্ছি। মধ্য আয়ের চাকরিজীবীরাও জানালেন একই কথা। তাদের ভাষ্য চালের দাম সহনীয় পর্যায় না আসলে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এ অবস্থায় ঝিনাইদহের চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, ২-১ দিনের মধ্যে চালের বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। তাদের ভাষ্য ভারত থেকে চাল আসবে না এমন গুজবে হঠাত করেই চাল ও ধানের বাজার চড়া হয়ে গেছে। ফলে চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
ঝিনাইদহের চাল ব্যবসায়ী তপন কুমার অভিযোগ করেন, মিডিয়ার কারণে চালের বাজার অস্থির হয়েছে। আমরা যেদিন টিভিতে ভারত থেকে চাল আসছে না বলে খবর শুনতে পারে, সেদিন থেকেই চাল ও ধানের বাজার চড়া হয়ে যায়। আরেক চাল ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এলসির মাধ্যমে ভারত থেকে যে চাল আমদানী হচ্ছে সেগুলো নজরদারী বাড়াতে হবে। কারণ তারা জিরো মার্জিনে চাল আমদানী করে কেজিতে ৫-৭ টাকা দাম নিচ্ছে। তারা পাইকারী বাজারে যদি সহনশীল দামে চাল বিক্রি করতো তবে কেজি প্রতি আরও ৩-৪ টাকা করে চালের দাম কমতে পারতো। তিনিও চালের বাজার চড়া হওয়ার নেপথ্যে এক শ্রেণির মিডিয়াকে দায়ী করেন। মোয়াজ্জম হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন জেলার বাইরে ট্রাক ট্রাক চাল বিক্রি করছি। বাজারে ধান বা চালের কোনো সঙ্কট নেই। তবে মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে।
মেছুয়া বাজারের চাল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দীন জানান, বাজারে ধানের কিছুটা সঙ্কট রয়েছে। গ্রামের কিছু বড় কৃষক ও ব্যবসায়ী ধান মজুদ করে কৃত্তিম সঙ্কট সৃষ্টি করছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আগামী ২-১ দিনের মধ্যে হয়তো চালের বাজার নরম হতে পারে। শৈলকুপার ভাটই বাজার এলাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার গোলাপ মেম্বার অভিযোগ করেন, সরকার সমর্থিত কিছু চাল ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ঝিনাইদহে চালের বাজার অস্থির হয়েছে।
এদিকে, রোববার ঝিনাইদহের চাল বাজার পরিদর্শন করে জানা গেছে, মিল থেকে মিনিকেট চাল ৫৩ টাকা কেজি কিনে পাইকারী বাজারে ৫৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর খুচরা বাজারে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। একইভাবে মধ্যম চিকন চাল ৫২ টাকা থেকে ৫৮ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর বাশমতি চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ টাকা। তবে ঝিনাইদহের বাজার থেকে মোটা চাল উধাও হয়ে গেছে। চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন গত আবাদ মরসুমে মোটা ধানের আবাদ হয়নি, তাই বাজারে মোটা চাল নেই। এজন্য দাম বেড়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শংকর কুমার মজুমদার জানান, ঝিনাইদহ জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭২৬ মেট্রিক টন ধান উদ্বৃত্ত থাকে। এখানে তো চালের সঙ্কট হওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন ঝিনাইদহ জেলায় প্রতি বছর ৭ লাখ ৬১ হাজার ৩৪৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়। আর জেলার চাহিদা হচ্ছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৬২২ মেট্রিক টন। বাকীটা উদ্বৃত্ত থাকে। চালের দাম বাড়ার কথা নয় বলে আমি মনে করি।