ঝিনাইদহে পৃথক অনুষদ খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : কলেজে অচলাবস্থা

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়েছে। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে। প্রতিদিন মিছিল-মিটিং, মানববন্ধন ও বিক্ষোভে ক্রমেই উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পৃথক অনুষদ খোলার দাবিতে এ আন্দোলন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্রছাত্রীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে। যে কারণে বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলকে অবহিত করা হয়নি। এদিকে প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করে লুটপাট ও দুর্নীতি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে ৮ অক্টোবর ডিজিটাল পদ্ধতিতে কলেজটি উদ্বোধন করেন। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে কলেজটি স্থাপন করা হলেও কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও অনুমোদনও নেয়া হয়নি। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ব্যাচে ৬০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি করার মধ্য দিয়ে কলেজটি চালু করা হয়। ২০১৪-১৫ শিক্ষা বর্ষে আরও ৬০ জনকে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ১২০ ছাত্রছাত্রীকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরে কর্মরত ১২ ভেটেরিনারি সার্জনসহ খণ্ডকালীন ৩ শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। অভিযোগ করা হয়েছে সঠিক তদারকির অভাবে একটি মহলের চক্রান্তে বছর বছর প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা হচ্ছে। মূল প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিলো ১৭ কোটি ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা বৃদ্ধি করে ৩৪ কোটি ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা করা হয়। ফলে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ছোট বড় ৪টি গরু ও ২-৩টি ছাগল কেনা হয়েছে। খালি পড়ে আছে বিশাল পশু হাসপাতাল, পোলট্রি শেড ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনগুলো। ডেপুটি প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ভিপিডি ডা. এসএম নুরুল আমীন জানিয়েছেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৬ লাখ টাকার জেনারেটর, ৮ লাখ টাকার ওয়াইফাই সারভার স্থাপন করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ক্যাফেটারিয়া ও ভিআইপি অতিথি ভবনের পশ্চিম পাশে ১০ লাখ টাকার মাটি ভরাট, ল্যাবের জন্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে ৬৭ লাখ টাকা এবং বই ক্রয় দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ টাকা, ফার্নিচার ক্রয় করা হয়েছে ৪৪ লাখ টাকা, আইপিএস দু লাখ এবং ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে কম্পিউটার ক্রয় ও ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এয়ারকুলার ক্রয় ও স্থাপন বাবদ ব্যয় করা হয়েছে ২৩ লাখ টাকা। তবে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গোপন টেন্ডার ও কোটেশনের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের এ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। অবশ্য ঢাকা খামারবাড়িতে স্থাপিত লিয়াজো অফিসে কর্মরত ডিপিডি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয় করে মহিলা হোস্টেলের ৪র্থ ও ৫ম ৪ ও ৫ তলার কাজ করা হয়েছে এবং ৩১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা খরচ করে পশু হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার ওপরে তিনতলার নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে ২৯ জন কর্মচারী নিয়োগদান চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ নিয়োগ নিয়ে প্রকল্পের ডিপিডি ডা. এসএম নুরুল আমীন ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আমিনুল ইসলাম কোটি টাকার বাণিজ্য করেছে মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছেন ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাড. আবদুল ওয়াহেদ জোয়ার্দ্দারসহ এলাকাবাসী।

সূত্র মতে, ডা. লিয়াকত আলী প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। শেষ পর্যন্ত কলেজটির অধ্যক্ষ হয়েছেন তিনি। লিয়াকত আলী অবসরে গেলে প্রকল্প পরিচালক ও অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয় ডা. গোলাম মাহমুদকে। তিনিও জুলাই মাসের ১৬ তারিখে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে ঢাকা চলে গেছেন। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত পিডি ও অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগের ডিএলও পদ মর্যাদার উপাধ্যক্ষ ডা. আমিনুল ইসলাম।

একই সূত্র জানায়, চলতি আগস্ট মাসের ৩ তারিখে ডা. হিরেশ রঞ্জন ভৌমিককে প্রকল্প পরিচালক ও অধ্যক্ষ পদে ঢাকা থেকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখনও তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদান করেননি। অন্যদিকে অধিভুক্ত না করে বাহির ক্যাম্পাস হিসেবে পৃথক অনুষদ খোলার জন্য ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকসহ এলাকাবাসী দাবি করে আসছে। সেই সাথে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও জানিয়েছে এলাকাবাসী।