ঝিনাইদহে দক্ষিণবঙ্গের জালিয়াত চক্রের প্রধান হামিদুজ্জামান ওরফে জলিল হুজুর অবশেষে গ্রেফতার : এলাকায় স্বস্তি

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: বহু অপকর্মের হোতা ও লেবাসধারী প্রতারক, দক্ষিণবঙ্গের জালিয়াত চক্রের প্রধান হামিদুজ্জামান ওরফে জলিল হুজুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার দুপুরে কালীগঞ্জ-মল্লিকপুর সড়ক থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার এসআই কওসার আলম প্রতারণার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করেন। জলিল উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের বজলু ম-লের ছেলে। বর্তমানে তিনি পৌর সভার আড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। এই প্রতারক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় শিক্ষকদের পাস করে দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে জেল খাটানো, সরকারি, বে-সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে বিভিন্ন মানুষকে চাকরি দেয়ার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এনজিও’র ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিক্রি করে মানুষের সাথে প্রতারণা করা, মদ্যপান, লাম্পট্যসহ তার বিরুদ্ধে একাধিক বিয়ে করার অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মানুষের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারক জলিল জায়গা, জমি, গাড়ি-বাড়ি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। বর্তমানে এ প্রতারক থানা হাজতে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, র‌্যাব-৬, থানাসহ একাধিক ভুক্তভোগীসূত্রে জানা গেছে, জলিল হুজুর দক্ষিণ অঞ্চলের প্রতারক চক্রের হোতা। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাধারণ মানুষের নামে ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করে তাদের বিনা কারণে হাজত খাটাতেন। অনেককে বলে থাকেন ওদের নামে থানায় ওয়ারেন্ট আছে। টাকা দিলে সব ভেনিস করে দিবো। এভাবে তিনি একাধিক মানুষের নামে ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ২০১৬ সালে ২৪ অক্টোবর এই প্রতারকের বাড়িতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে হাই কোর্টের বিভিন্ন প্রকারের জালসীলসহ প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানের শতাধিক জাল সিল উদ্ধার করে। সে সময় তিনি পালিয়ে যান। এ ঘটনায় তার নামে মামলা করে র‌্যাব।
কালীগঞ্জ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ফারুক হোসেন জানান, বলিদাপাড়া গ্রামের তাইজুল ইসলামের ছেলে রমজান ও বাবরা গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে আসাদুল ইসলাম নামের দুই ড্রাইভারের নামে জামালপুর জেলা থেকে ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করে কালীগঞ্জে পাঠায় জলিল হুজুর। আমি তাদের নামে মামলা করেছি বলে জলিল আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পরে মামলা ভেনিশ করে দেয়ার নামে দুই ড্রাইভারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তাকে ধরে স্থানীয় শ্রমিক অফিসে নিয়ে উত্তমমধ্যম দেয় সাধারণ শ্রমিকরা। সে সময় জলিল নিজেই ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করেছেন বলে স্বীকার করেন।
এছাড়া আল আমিন প্রি-ক্যাডেটের শিক্ষক ইকবাল হুসাইনের নামেও সে একটি ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করেন। সেই ওয়ারেন্টে পুলিশ ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতার করে। পরে ওয়ারেন্টটি ভুয়া প্রমানিত হলে পুলিশ শিক্ষক ইকবাল হুসাইনকে ছেড়ে দেয়। এভাবে তিনি শিক্ষক, সাংবাদিকসহ শ’ শ’ সাধারণ মানুষের নামে ভুয়া ওয়ারেন্ট তৈরি করে হয়ারানি করেছেন। আর তৎকালীন পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে হাত মিলিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক জলিল। প্রায় বছর খানেক আগে জলিল হুজুর তার মাদরাসার ছাত্রীর হরিগোবিন্দপুর গ্রামের বাড়ির ভেতরে থাকা অবস্থায় রাতে এলাকাবাসীর হাতে ধরা পড়েন। এলাকাবাসী তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। ঘটনার পর এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে তার মাদরাসায় যাওয়া বন্ধ করে দেন এবং বহিষ্কারের দাবি করেন। পরে তদবিরের বিনিময়ে তিনি মুক্তি পান এবং এলাকাবাসীর চাপে ওই ছাত্রীকে জলিল হুজুর বিয়ে করেন। দ্বিতীয় সেই স্ত্রীকে নিয়ে কাশিপুর রেলগেট নামক স্থানের একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন বলে এলাকাবাসী জানায়। এই প্রতারকের গ্রেফতারের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান খান জানান, বিভিন্ন প্রারণার অভিযোগে প্রতারক জলিলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।