ঝিনাইদহে চাচা ভাতিজাকে একঘোরে : জাতে তুলতে দেড় শতাধিক লোককে ভূড়িভোজ

প্রতিনিধি ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নাটোবাড়িয়া গ্রামে একঘোরে করে রাখা হয়। চাচাকে ৬ বছর আর ভাতিজাকে ১ মাস। তাদেরকে পুনরায় সমাজের জাতে উঠতে দেড় শতাধিক লোককে ভূড়িভোজ করাতে হয়েছে। তাদের গ্রামের মসজিদে এ খাবার আয়োজন করা হয়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নাটোপাড়া গ্রামের দিন মজুর জহুরুল ইসলাম। এক মাস ধরে তাকে একঘোরে করে রাখেন গ্রামের মাতবরেরা। এ সময়ে তাকে অন্যের জমিতে কামলা পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। ঘটনাটি ঘটে বুধবার দুপুরে। এর আগে জহুরুলের চাচা মোবারক হোসেনকে প্রায় ৬ বছর ধরে একঘোরে করে রাখা হয়। সমাজচ্যুত চাচাকে নিয়ে বিয়ে করতে যাওয়ায় জহুরুলকে একঘোরে করা হয়। বিয়ের পরে তারা পড়ে বড় ধরনের ঝামেলায়। পরে চাচা-ভাতিজা ক্ষমা চেয়ে সমাজে ওঠার রায় পান। পাশাপাশি ভাতিজাকে গ্রামবাসীকে খাওয়ানোর শর্ত দেয়া হয়। বৃষ্টির কারণে নাটোবাড়িয়া গ্রামের মসজিদে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

নারী-পুরুষ অনেকেই খেতে বসেছেন। খাওয়ার আয়োজনটা বেশ ধুমধামভাবে। দাওয়াতে আসা কয়েকজন বলেন, গ্রামের একটা ছেলে একঘরে ছিলেন। তাকে জাতে ওঠানো হচ্ছে। সমাজের ১১০ ঘর থেকে ১৫০ ঘরের লোককে খাওয়ানোর মাধ্যমে তাকে সমাজে নেয়া হচ্ছে। তিনি সমাজের লোকজনকে না নিয়ে বিয়ে করেছেন। তাই এটা তার শাস্তি দেয়া হলো। জহুরুল ইসলাম একজন হত দরিদ্র, তারপরও এ আয়োজন কীভাবে করেছেন জানতে চাইলে লোকজন বলেন, এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। তিনি স্বেচ্ছায় গ্রামের মানুষকে খাবার খাওয়ায়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রামের একজন বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন নিয়ে মোবারক হোসেনকে গ্রামের মাতবরেরা সমাজচ্যুত করে রাখেন। এর মাঝে প্রায় এক মাস আগে জহুরুল ইসলাম বিয়ে করেন। বিয়েতে তিনি চাচাকে সাথে নিয়ে জান। তারা পড়ে যায় গ্রামে বড় ঝামেলায়। এ কারণে গ্রামের লোকজন এতে অংশ নেননি। সমাজচ্যুত ব্যক্তিকে সাথে নেয়ায় বিয়ের পর জহুরুলকেও সমাজচ্যুত করা হয়। এরপর গ্রামের লোকজন তার সাথে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারতেন না।

গ্রামের লোকজনদের তদের সাথে কথা বলা নিষেধ ছিলো। কারও জমিতে তাকে কামলা হিসেবে নেয়া হতো না। গ্রামে ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো তাকে কেউ কাজের জন্য নিতে পারবে না। এ অবস্থায় জহুরুল মাতবরদের কাছে ধরনা  দেন বিষয়টা মীমাংসার জন্য। এ নিয়ে ঈদের আগে বৈঠক বসে গ্রামে। সেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায় জহুরুল ও মোবারক সবার সামনে ক্ষমা চান। জহুরুলকে সমাজের লোকজনকে খাওয়ানোর শর্ত দেয়া হয়। যেহেতু গ্রামের সমাজে বসবাস করতে হবে সেকারণে তারা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়। অসহায় হত দরিদ্র হলেও সব কিছু মেনে নিয়েই ক্ষমা চেয়ে তাদের গ্রামের মানুষকে খাবার খাওয়ায়ে সমাজে উঠবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় হলিধানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও গ্রামটির বাসিন্দা মতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, তিনি বৈঠকের পাশে বসে ছিলেন। সিদ্ধান্ত অন্যরা নেন। বৈঠকে জহুরুলই সবাইকে স্বেচ্ছোয় খাওয়াতে চান। এতে গ্রামের মাতবর ও অন্য কারও দোষ নেই।

গ্রামটির মাতুবর সামছুল ইসলাম বলেন, সমাজের মানুষদের ভালো রাখতেই তারা এটা করে থাকেন। একঘোরে করে রাখলে সবাই সমাজের নিয়ম মানতে বাধ্য হয়। অন্যায় কাজ করতে ভয় পায়। জহুরুল ও মোবারক হোসেনের  ক্ষেত্রেও তা হয়েছে।

এ ব্যাপারে ওই ইউপির চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ বলেন, তিনি ওই গ্রামের একজনকে নিয়ে ঝামেলা মীমাংসার বিষয়টি জানতেন। তবে খাওয়ানোর বিষয় জানতেন না। এভাবে কাউকে একঘরে রাখা ঠিক হয়নি বলেও তিনি জানান। জহুরুল ইসলাম আবারও সমাজচ্যুত হওয়ার ভয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি।