ঝিনাইদহে কয়লার অভাবে ইট পোড়াতে পারছেন না ভাটা মালিকরা

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ইটভাটা

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: কয়লার অভাবে ঝিনাইদহের ইটভাটাগুলো বন্ধ হতে চলেছে। ইট পোড়াতে না পেরে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জিকজাক (হাওয়া) ভাটা মালিক ভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার অনেকে কাঁচা ইট তৈরি করে অপেক্ষায় আছেন কয়লার। আর স্থায়ী চিমনির ভাটার মালিকরা বিকল্প হিসেবে গোপনে কাঠ ব্যবহার করে ভাটা চালু রেখেছেন। যদিও ইট ভাটায় কাঠ ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ রয়েছে। তবে জিকজাক ভাটার ক্ষেত্রে এটাও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভাটা মালিকরা।

ভাটা মালিকরা আরো জানিয়েছেন, দ্রুত কয়লার ব্যবস্থা না করলে এ বছর ঝিনাইদহে প্রায় ১০ থেকে ১৫ কোটি ইট কম তৈরি হবে। যা স্থানীয় উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি এ সকল ভাটায় কর্মরত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকে কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

ঝিনাইদহ জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মাহমুদুল ইসলাম ফোটন জানান, বর্তমানে গোটা জেলায় ১৫০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে জিকজাক (হাওয়া) ভাটা আছে ২০টি। বাকিগুলোর বেশির ভাগ স্থায়ী চিমনি। কিছু আছে ব্যারেল চিমনির ভাটা। তিনি জানান, ২০০০ সালের পর থেকে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ওপর পরিবেশ মন্ত্রণালয় কড়াকড় শুরু করলে ভাটামালিকরা তাদের ভাটায় কাঠের পরিবর্তে কয়লা ব্যবহার করতে শুরু করে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ভাটা শুধুমাত্র কয়লা ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। যেগুলোর জিকজাক (হাওয়া) ভাটা বলে। এগুলো পরিবেশবান্ধব ভাটা। জেলায় ইতোমধ্যে এ জাতীয় ভাটার সংখ্যা ২০টি। যেখানে প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ কোটি ইট তৈরি হয়। কয়লার অভাবে এ ভাটাগুলো বন্ধ রয়েছে। প্রতিটি ভাটা মালিক কাঁচা ইট তৈরি করে কয়লার অপেক্ষায় বসে আছেন। তিনি বলেন, জেলার কালীগঞ্জে ১টি, সদরে ১টি ভাটা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। তারা কাঁচা ইট অন্য ভাটায় দিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে ভাটা বন্ধ হলে ঝিনাইদহের ইটভাটায় ১০ থেকে ১৫ কোটি ইট কম তৈরি হবে। এতে স্থানীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি ইটের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।

কয়লার চাহিদা সম্পর্কে ভাটামালিক সমিতির নেতা মাহমুদুল ইসলাম ফোটন আরও জানান, এক একটি জিকজাক (হাওয়া) ইটভাটায় কমপক্ষে ৯শ থেকে ১ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। বছরে ঝিনাইদহে শুধুমাত্র জিকজাক ভাটার জন্য প্রয়োজন ১৯ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। এছাড়াও অন্যান্য ভাটাগুলোতে কয়লার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি জানান, গত বছর ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা টন মূল্যে কয়লা পেয়েছেন। এ বছর ২৫ হাজার টাকা টন দিয়েও কয়লা পাচ্ছেন না। তিনি জানান, ভারত থেকে যে কয়লা আমদানি হতো সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটের তামাবিল ও দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় যে কয়লা উত্তোলন হয় সেটা বিদ্যুত উৎপাদন কাজে ব্যবহার করতেই শেষ হয়ে যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর মাঠের মধ্যে রয়েছে এমএমবিএম ভাটা। যার মালিক কালীগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মহর আলী বিশ্বাস। ভাটা দেখাশোনা করেন তার পুত্র নান্নু বিশ্বাস। তিনি জানান, তাদের এ ভাটার বয়স ৪০ বছর। প্রতি বছর এ ভাটায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ ইট তৈরি হয়। ৭ শতাধিক শ্রমিক এখানে কাজ করেন। তিনি জানান, সরকার পরিবেশবান্ধব জিকজাক ভাটা করার জন্য চাপ দিলে ২০০০ সালে ভাটাটি আধুনিক করেন। ভাটা এমনভাবে তৈরি করা হয় কয়লা ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থায় ইট পোড়ানো সম্ভব নয়। সেই ভাটা এবার কয়লা না পেয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। নান্নু বিশ্বাস জানান, সেপ্টেম্বর মাসে ভাটার কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে ১৫ লাখ কাঁচা ইট তৈরি হয়ে গেছে। ভাটায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন। এখন কয়লা না পেয়ে ভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে ৭শ ভাটা শ্রমিককে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন।

ঝিনাইদহ সদর থানার রাউতাইল মাঠের মধ্যে রয়েছে আবির ব্রিকস। এর মালিক মাহমুদুল ইসলাম জানান, তার ভাটায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট তৈরি হয়। ২১ বছর আগে দু একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠা এ ভাটায় এ বছর ২০ লাখ কাঁচা ইট তৈরি করা হয়েছে। এখন কয়লা না থাকায় পোড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এক প্রকার কাজ ছাড়াই শ্রমিকদের টাকা দিতে হচ্ছে। তিনি জানান, এভাবে অনেকগুলো ভাটা বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সরকার থেকে এ নিয়ে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। তাছাড়া ভাটামালিকরা নিজেদের মতো করে কয়লা সংগ্রহ করে থাকেন।