ঝিনাইদহে কৃষকদের নিয়ে পিঠা মেলা ও নবান্ন উৎসব

ঝিনাইদহ অফিস: কৃষকের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য ঝিনাইদহের প্রত্যন্ত পল্লী বেড়াশুলায় আয়োজন করা হয়েছিলো পিঠা মেলা ও নবান্ন উৎসব। গ্রামের প্রান্তিক কৃষকেরা গতকাল শনিবার সারাদিন মেতেছিলেন উৎসবের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। ঝিনাইদহ সেন্ট্রাল ক্যাবল নেটওয়ার্ক, ক্যাবল অপারেটর সমিতি ও ক্যাবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় বেড়াশুলা গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি এ উৎসবের আয়োজন করে। বেড়াশুলাসহ আশপাশের আরো ১০টি গ্রামের মানুষ ভিড় জমায় এ উৎসবে।

ঝিনাইদহ শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমের একটি গ্রাম বেড়াশুলা। সকাল থেকেই উৎসব উপলক্ষে বাড়ি বাড়ি নানা ধরনের পিঠা-পুলি তৈরির ধুম পড়ে যায়। খেজুর রসের নলিনী গুড় আর নতুন চালের গুঁড়া দিয়ে হরেক রকম পিঠা বানিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় কৃষাণীরা। ভাপা, পুলি, রসগোলাপ, চিতইপিঠা, দইপিঠা, পাটিসাপটা, ফুলপিঠা, লবঙ্গ লতিকাসহ রসে ভেজানো মজাদার সব পিঠা নিয়ে মেলায় আসেন গৃহবধূরা। জানা-না জানা সেসব পিঠা দেখতে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন উৎসব প্রাঙ্গণে। তারা আগ্রহ ভরে দেখেন সে সব পিঠা। আর পিঠা খাওয়ার তৃপ্তি নিয়ে ঘরে ফেরেন সবাই। অর্ধশত আইটেমের সুস্বাদু তৈরি করে গ্রামের গৃহবধূরা নতুন করে মনে করিয়ে দেয় পিঠা-পুলির আমাদের যে গৌরবময় অতীত রয়েছে তা এখনো হারিয়ে যায়নি।

উৎসবে বাড়তি আনন্দ দেয় পুরানোদিনের গ্রামীণ সব খেলাধুলার আয়োজন। উৎসবে হা-ডু-ডু, শক্তি পরীক্ষা, হাড়িভাঙা, বালিশ বদল, যেমন খুশি তেমন সাজ, দৌঁড় প্রতিযোগিতা, বউ সাজানোসহ আবহমান বাংলার অনেক ঐতিহ্যবাহী খেলায় অংশ নেন কৃষকেরা। শিশু-কিশোররা মুখে আল্পনা এঁকে নানা সাজে নিজেদের সাজিয়ে তোলে উৎসবে। সাথে ছিলো লোকগীতি, ভাওইয়া ও বাউল গান। নেচে গেয়ে শিল্পীরা মাতিয়ে তোলে দর্শক। 

আয়োজক বেড়াশুলা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসাহাক আলী বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে ও কৃষকদের ফসল ফলানোয় সহায়ক ভূমিকার প্রতিবছর এ নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। তাদের মূল উদ্দেশ্য গ্রামবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা। সেইসাথে গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি ফিরিয়ে এনে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিতি করা।

বেড়াশুলা গ্রামের আফজাল হোসেন জানান, গত ৫ বছর ধরে শীতের শেষে এ উৎসব হচ্ছে। সকাল ১১টায় শুরু হওয়া দিনব্যাপি এ উৎসব শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। বেড়াশুলা সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ ইসাহাক আলীর পরিচালনায় বিকেলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ঝিনাইদহ সেন্ট্রাল ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা পরিচালক  হাসানুজ্জামান খোকো, আনিসুর রহমান, নজরুল ইসলাম, মাহমুদুর রহমান, শাহ আলম, আশফারুল হক দ্বীপ, বাদল বসু বক্তব্য রাখেন। ঝিনাইদহের ইলেক্ট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন এ উৎসবে।