ঝিনাইদহে কলেজের অধ্যক্ষের ওপর সন্ত্রাসী হামলা

 

আওয়ামী লীগ নেতাকে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য না করার জের

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা আব্দুর রউফ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আয়ুব আলী (৪৬) গতকালশনিবার সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন। তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সাধুহাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মণ্ডলকে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য না করায় তার ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভা ছিলো। সাড়ে ১১টার দিকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি উপস্থিত হলে সভা শুরু হয়। এক ঘণ্টা পর সভা শেষে সংসদ সদস্য কলেজ ত্যাগ করলে অধ্যক্ষের ওপর হামলা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, হামলার সময় অধ্যক্ষ আয়ুব আলী তার অফিসকক্ষে বসে ছিলেন। হঠাত করে বেশ কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল যুবক এসে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে। এরপর তারা দরজা আটকে অধ্যক্ষকে বেধড়ক মারপিট করে। পরে কলেজের কর্মচারীরা অধ্যক্ষকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদ আল মামুন জানান, আয়ুব আলীর শরীরের কয়েক জায়গায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অধ্যক্ষ আয়ুব আলী সাংবাদিকদের জানান, ম্যানেজিং কমিটির সভা শেষে তিনি তার অফিসকক্ষে বসে ছিলেন। এসময় এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী লাল্টু ও আইয়ুবের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী কক্ষে ঢুকে দরজা আটকে দেয়। এসময় ডাকবাংলা ক্যাম্পের দুজন পুলিশ সদস্য তাদেরকে কক্ষে প্রবেশে বাধা দেয়। তারা আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মণ্ডলকে কেন সদস্য করা হয়নি জানতে চান। একপর্যায়ে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি, লাথি মারতে মারতে চেয়ার থেকে ফেলে দেন। পরে চেয়ার দিয়ে পিটিয়ে ফেলে রেখে যায় তারা।

অধ্যক্ষ বলেন, গত চার মাস ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল ইসলাম মণ্ডলকে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য করতে চাপ সৃষ্টি করে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারা। তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেন, কলেজের অভিভাবক সদস্য না হলে ম্যানেজিং কমিটিভূক্ত করা সম্ভব নয়। কয়েকদিন পর ফের তারা বিদ্যেতসাহী সদস্য করার প্রস্তাব দেন। এ পদে শিক্ষাবোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী কমপক্ষে তাকে ডিগ্রি পাস হতে হবে। কিন্তু ওই আওয়ামী লীগ নেতা এসএসসিও পাস নন। বিষয়টি তিনি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের অধ্যক্ষ বিএম রেজাউল ইসলামকে জানান। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বাদ রেখেই স্থানীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমিকে সভাপতি করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।

অধ্যক্ষ আয়ুব আলী আরও বলেন, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ১২ এপ্রিল সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি নতুন ম্যানেজিং কমিটির প্রথম বৈঠক বর্জন করেন। সংসদ সদস্যের অভিযোগ, তার দেয়া ডিও লেটার অনুযায়ী ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়নি। অধ্যক্ষ অভিযোগ করেন, কলেজ প্রতিষ্ঠাতার বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন তপন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মোজাম্মেল হক, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুন্সী শাহীন রেজা সাঈদ ও কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল বিবেকানন্দ তরফদার বিভিন্ন সময়ে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো। দু বছর আগে কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পাওয়ার পর তারা ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু তিনি টাকা দেননি। এরপর থেকে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকলে তার হাত-পা ভেঙে দেয়া হবে বলে তারা হুমকি দেন।

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মো. শাহবুদ্দীন আজাদ বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আয়ুব আলী হামলাকারীদের কয়েকজনের নাম পুলিশকে বলেছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। হামলাকারীদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে নেমেছেন বলেও তিনি জানান। তবে এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।