ঝিনাইদহে এবার নৈশপ্রহরী নিয়োগে গোপন পরীক্ষা!

 

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী নিয়োগে গোপন পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে । সম্মিলিত দীঘারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই পদে একজনকে নিয়োগ দিতে ২৫ আগস্ট পরীক্ষা নেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়। পরে অজ্ঞাত অজুহাতে সেই দিন পরীক্ষা হবে না জানিয়ে দিয়ে মাত্র ২ দিন পর ২৭ আগস্ট গোপনে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবেদনকারীরা।

আবেদনকারীরা বলছেন, গোপনে পরীক্ষা নেয়ায় সেখানে উপস্থিত ছিলো ৩৩ শতাংশ আবেদনকারী। ৮ জন আবেদন করলেও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মাত্র ৩ জন। যাদের একজন আছেন মূলপ্রার্থী, অপর দুজন ছিলেন মূলপ্রার্থীর সহযোগী। তারা দুজনই মাস্টার্স শেষ করেছেন। মূল আবেদনকারী অষ্টম শ্রেণি পাস করেছেন। নিয়োগকৃত পদও অষ্টম শ্রেণি পাসের।

আবেদনকারীদের একজন দীঘারপাড়া গ্রামের সামিনুর ইসলাম জানান, সম্প্রতি তাদের গ্রামের সম্মিলিত দীঘারপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একজন নৈশপ্রহরী নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তারা ৯ জন আবেদন করেন। যার মধ্যে একজনের আবেদন বাছাই করাকালে বাতিল হয়েছে। বাকি ৮ জনকে নিয়োগ কমিটির সচিব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনাম ফারুক পরীক্ষায় অংশ নিতে চিঠি দেন। চিঠিতে ২৫ আগস্ট সকাল ১০টায় ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে উপস্থিত হতে বলেন। তারা সেভাবে প্রস্তুতি নেন। কিন্তু ওই দিনই সকালে তাদের জানানো হয় বিশেষ কারণে আজ পরীক্ষা হবে না, পরীক্ষার দিন এবং সময় পরে জানানো হবে। ২৭ আগস্ট শনিবার দুপুরে প্রতিবেশীদের মুখে শুনতে পায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। এই শুনে ছুটে গেলে তারা জানায়, পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পরীক্ষায় তিনজন অংশ নিয়েছেন।

তিনি জানান, অন্যদের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে তারাও কিছুই জানেন না বলে জানান। তাদের গোপন করে পরীক্ষা নেয়ায় অংশ নিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। অপর এক আবেদনকারী নাম প্রকাশ না করে জানান, যে তিনজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তাদের মধ্যে দীঘারপাড়া গ্রামে রিপন মিয়া মূলপ্রার্থী। সে অষ্টম শ্রেণি পাস করে এই চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। অন্য দুজনের একজন জাহিদ হোসেন লষ্কর হিসাব বিজ্ঞানে ও তাপস কুমার রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন। তারা রিপন মিয়ার সহযোগিতা করতে গিয়েছিলেন। তিনজনের কম উপস্থিত থাকলে নিয়োগ পরীক্ষার কোরাম পূরণ হবে না এই কারণে তাদের দিয়ে আবেদন করানো এবং গোপন পরীক্ষায় অংশ নিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। অবশ্য ওই দুইজনের একজন স্বীকার করেছেন তিনি প্রক্সি দিতে গিয়েছিলেন। তারা মাস্টার্স পাস করে এই চাকরি করবেন না। তিনি জানান, মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার সময় তাদের ২/৪টি কথা শুনে ছেড়ে দেয়া হয় হয়েছে। আর মূলপ্রার্থীর ২০ মিনিট ধরে প্রশ্ন করা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আরিফ সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, গোপনে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে এটা ঠিক নয়। ২৫ আগস্ট চিঠি দেয়া হলেও তাদের সমস্যা থাকায় প্রধান শিক্ষককে তারিখ পরিবর্তন করতে বলা হয়েছিলো। সেই পরিবর্তীত তারিখ ২৭ আগস্ট তার দপ্তরে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের পরিবর্তিত তারিখ ও সময় মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। অবশ্য প্রধান শিক্ষক এনাম ফারুকও জানালেন, তিনি সবাইকে মৌখিকভাবে নতুন তারিখ ও সময় জানিয়েছেন। উপস্থিতির হার অর্ধেকেরও কম এর বিষয়ে তারা উভয়ই জানান, এটা আবেদনকারীদের বিষয়। এক্ষেত্রে তাদের কিছু করার নেই।

ঝিনাইদহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোকছেদুল ইসলাম জানান, এভাবে মুখে মুখে জানিয়ে পরীক্ষা নেয়া ঠিক নয়। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।