ঝিনাইদহে আ.লীগকর্মী হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে ফুরসন্দি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে হামলা

 

 

দু শতাধিক বাড়ি ভাচুর ও লুটপাট :কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহে রিন্টু মুন্সী নামে এক আওয়ামী লীগকর্মী হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে দু শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার রাতে হত্যার পর থেকে সদর উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে রাতের আঁধারে ও দিনের আলোয় নারকীয় তাণ্ডব চলছে। ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ করছেন, এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে প্রশাসনের সামনেই এমন ঘটনা ঘটলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সহস্রাধিক নারী-পুরুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, সদর উপজেলার মাড়ুন্দি গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী রিন্টু মুন্সী ফুরসন্দি ইউনিয়নের কুশোবাড়িয়া বাজারে মনোহরী দ্রব্যের ব্যবসা করতেন। গত মঙ্গলবার রাতে বাজারের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে বাজার সংলগ্ন কাটাখালী ব্রিজের নিকট সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে গুলি করে খুন করে।

রাতেই এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ফুরসন্দি ইউনিয়নের ১১টি গ্রামে তাণ্ডব শুরু হয়। প্রতিপক্ষদের দু শতাধিক বাড়ি-ঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীরা নগদ টাকা, গরু-ছাগল, হাস-মুরগি, ধান-চাল, স্বর্ণালঙ্কার এমনকি টিউবওয়েলও লুট করে নিয়ে গেছে। ইউনিয়নের মাড়ুন্দি, মুক্তারামপুর, ফুরসন্দি, লক্ষ্মীপুর, ধনঞ্জয়পুর, জিতড়, দহকোলা, মিয়াকুণ্ডু, টিকারী, ভবানীপুর ও দিঘিরপাড় গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

মাড়ুন্দী গ্রামের ইদ্রিস মোল্লার অভিযোগ, তার বাড়ির সবকিছু লুট হয়ে গেছে। চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিকদারের সমর্থক হওয়ায় প্রতিপক্ষ আব্দুল মালেকের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, নিজে কোনো রাজনীতি করেন না, তারপরও প্রতিপক্ষরা তাকে ভালোভাবে বাঁচতে দিলো না। সব কেড়ে পথের ফকির করে দিলো। মাড়ুন্দি গ্রামের সিদ্দিক মোল্লা জানান, বেশ কয়েককটি পাকা বাড়ি ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এমন তাণ্ডবে নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেক পরিবার। শরীরের কাপড় ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই। পুলিশের সামনেই দিনের আলো ও রাতের আঁধারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমন নারকীয় তাণ্ডব চললেও তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, পুলিশের সহযোগিতা পেলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না। তাই বাধ্য হয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছেন অনেকে।

দহখোলা গ্রামের বাসিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিকদার, আবু সাইদ শিকদার, ফিরোজ, শমসের, মফিজুর, করিম, জিতড় গ্রামের সুবিদ বিশ্বাস, সবদুল মেম্বার, ইনছার আলী, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের অহিদ মিয়া, আলতাফ বিশ্বাস, নাসির বিশ্বাস, শামসুর রহমান, সাইদুল ইসলাম, শামসুদ্দীন মৌলভী, লিয়াকত হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, মফিজুল ইসলাম, আবু বক্কর, বাবুল হোসেন, সাহেব আলী, সানারুদ্দীন, আসাদ মুন্সী, পলাশ মুন্সী, আলী কদর, রাশেদ বিশ্বাস, আব্দুর রহমান, আব্দুল মজিদ, আবুল হোসেন ভরশ, শমসের শিকদার, জিতড় গ্রামের রিপন, জামাল, সাহেব, আয়েব, মজনু, রেজওয়ান বিশ্বাস, জিল্লুর রহমান, মাজেদুর রহমানসহ অনেকের পরিবার গ্রামছাড়া। মাড়ুন্দি গ্রামের চান্দিনা বেগম, হাজেরা খাতুন, পারুলা বেগম জানান, মহিলাদের ওপর ও হামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। সন্ধ্যার মধ্যে বাড়ি-ঘর ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছে। তারা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

এলাকাবাসী প্রকাশ্যে নাম না বললেও জানিয়েছেন, ফুরসন্দি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মধ্যে রয়েছে দুটি শক্তিশালী পক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম শিকদার, অপর পক্ষে রয়েছেন ওই নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল মালেক। ২০০৭ সাল থেকে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। প্রায়ই তাদের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। হামলা-পাল্টা হামলায় দু শতাধিক বাড়ি-ঘর ভাঙচুর হয়েছে। উভয় পক্ষের বাড়ি-ঘর লুটপাটে ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার। চারজন খুন ও ৫/৬ জন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ভিন্ন কথা। জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আবদুল মালেক জানিয়েছেন, কোনো লুটপাট বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। বিক্ষুব্ধ জনতা যা দু-একটি ঘটনা ঘটিয়েছে।

এদিকে পুলিশ বলছে, হত্যার পর ভাঙচুর ও লুটপাট ঠেকাতে ফুরসন্দি ইউনিয়নে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানান সদর থানার এসআই দাউদ হোসেন।