ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা’র টাকা থেকে উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ

 

ঝিনাইদহ অফিস: নির্বাচিত হয়েছেন, কিন্তু এখনও ক্ষমতা পাননি। এরই মধ্যে নতুন ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায় করেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত নেতৃবৃন্দ। কমান্ডার হেলাল উদ্দিন সর্দ্দারের নির্দেশে সংসদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা আদায় করেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সময় সেখানে বসে থেকে এ টাকা নিয়ে নেয়া হয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৩২০ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তার মধ্যে ২২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়মিত ভাতা পেয়ে আসছেন। এবার নতুন করে ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা’র আওতায় এসেছেন। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তারা ভাতা উত্তোলন করেছেন।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, সারাদেশের ন্যায় কালীগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমিটির মেয়াদ শেষ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ওপর সংগঠন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর গত জুন মাসের ৪ তারিখ নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন সর্দ্দার উপজেলা কমান্ডার, রেজাউল ইসলাম ডেপুটি কমান্ডার নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এখনও গেজেট না হওয়ায় তাদের শপথ হয়নি। ক্ষমতাও হস্তান্তর হয়নি। এরই মধ্যে নতুন এ কমিটি মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট থেকে নানা অজুহাতে অর্থ আদায় শুরু করেছেন। নতুন যারা ভাতা প্রাপ্ত হয়েছেন তাদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করেছেন।

একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানান, তারা দীর্ঘদিন ভাতাপ্রাপ্ত ছিলেন না। এবার নতুন করে ভাতাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ সংখ্যা ৪৯ জন। জুলাই মাসে তাদের নতুন ভাতা বই তাদের হাতে দেয়া হয়। সমাজসেবা অফিস থেকে তারা বই সংগ্রহ করেন। তাদের জানিয়ে দেয়া হয় ব্যাংকে এক বছরের টাকা এসেছেন। এরপর তারা টাকা ওঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মুক্তিযোদ্ধা জানান, টাকা উঠানোর পূর্বে নতুন নির্বাচিত কমান্ডার তাদের ডেকে জানিয়ে দেন জনপ্রতি ৩ হাজার করে টাকা দিতে হবে। না দিলে ভাতা’র তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার প্রস্তাব পাঠানো হবে। এ সময় অনেকে টাকা দিতে অস্বীকার করলে তাদের নানাভাবে ভয় দেখানো হয়। বাধ্য হয়ে টাকা দিতে স্বীকার হন। ওই মুক্তিযোদ্ধা জানান, টাকা উত্তোলনের দিন ব্যাংকে উপস্থিত থেকে তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। অনেকে দিতে না চাইলে জোর করা হয়েছে। আবার অনেকে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলে এক হাজার টাকা কম দিয়েছেন। ২ হাজার টাকা করে সকলকেই দিতে হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা জানান, নতুন কমান্ডার হেলাল উদ্দিন সর্দ্দারের কথায় এই টাকা তারা দিয়েছেন। ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে এভাবে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আয়নাল হক জানান, তারাও শুনেছেন নতুন ভাতাপ্রাপ্তদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের অফিসের বাইরে কেউ কাউকে টাকা দিলে তাদের কিছু করার থাকে না। তাছাড়া কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। ফলে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নবনির্বাচিত কমান্ডার হেলাল উদ্দিন সর্দ্দার জানান, অফিস খরচের জন্য তারা কিছু টাকা নিয়েছেন। তাছাড়া শপথ গ্রহণের পর অভিষেক অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে। যে কারণে নতুন তালিকা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। এখানে কাউকে জোর করা হয়নি।