ঝাড়ফুঁক নাটকেই টেনে আনলো সাপুড়ের মৃত্যু

সাপের খেলা দেখাতে গিয়ে দংশিত সাপুড়েকে নিয়েও ওঁঝার ছলচাতুরি

 

স্টাফ রিপোর্টার: যে সাপুড়ে অন্যের বিষ নামানোর নাটক করতেন, সেই সাপুড়ে লুৎফর রহমান সর্প দংশনে মারা গেছেন। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে হিজলগাড়ি পুলিশ ক্যাম্পপাড়ার ইছা ওঁঝার নিকট থেকে ১৭টি বাচ্চাসহ একটি কুলিন কিনে খেলা দেখাতে গিয়ে দংশিত হন। তাকে নিয়ে শুরু হয় ঝাড়ফুঁকের নাটক। দীর্ঘ সময় ধরে ঝাড়ফুঁক নাটকের পর মৃতপ্রায় অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

মৃতদেহ গতকালই তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের হানুরবাড়াদি মসজিদপাড়ায় নিয়ে দাফনের প্রক্রিয়া করা হয়। লুৎফর রহমান ঝিনাইদহ হরিণাকুণ্ডুর ফতেপুর গ্রামের মৃত কাটু মল্লিকের ছেলে। দীর্ঘ ২০ বছর আগে চুয়াডাঙ্গার হানুরবাড়াদির মৃত আজেহার আলীর মেয়ে ফাতেমা খাতুনকে বিয়ে করে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস শুরু করেন লুৎফর। মাঝে মাঝে আলমসাধু চালালেও অধিকাংশ সময়ই কাটতো সাপ ধরা, সাপ নিয়ে খেলা করা আর সাপ বিক্রি করার কাজে। গতকাল রোববার সকালে খবর পেয়ে তিনি চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ি ক্যাম্পপাড়ার ইছাহাকের নিকট থেকে ১৭টি বাচ্চাসহ একটি বড় কুলিন সাপ কেনেন। সেখানেই সাপ খেলা দেখাতে গেলে তিনি দংশিত হন। তাকে সাপে দংশন করলেও দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার বদলে শুরু হয় ঝাড়ফুঁক নাটক। যে নাটক করে অন্যের শরীর থেকে সাপের বিষ নামানোর অজুহাতে আয় করতো অর্থ, সেই নাটকের কারণেই মৃত্যু অনিবার্য হয়ে উঠলো সাপুড়ে লুৎফর রহমানকে।

সাপে কাটা রোগী লুৎফর রহমানকে বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন সাপে দংশন করলে এবং সেই সাপে যদি বিষ প্রয়োগ করে তাহলে কোনো রকম ঝাড়ফুঁক কাটা-ছেড়ায় রোগীকে সুস্থ করা সম্ভব নয়। সাপে দংশন করলেও অনেক সময় বিষ প্রয়োগ করতে পারে না বা সেই সাপ বিষধর নয়। এরকম রোগী নিয়ে ঝাড়ফুঁকের নাটক করে ওঁঝা-কবিরাজদের অনেকেই হাতিয়ে নেয় টাকা। আর এতেই অনেকের বিশ্বাস জন্মায় ঝাড়ফুঁকে কাজ হয়। অবাক হলেও সত্য যে, ঝাড়ফুঁক নাটকে বিশ্বাসের কারণেই সময় শেষ করে সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। যখন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ফলে এন্টিস্নেক ভেনম প্রয়োগে তেমন ফল মেলেনি। মৃত্যু অনিবার্য হয়েছে মূলত ঝাড়ফুঁকের কারণে।