জেলে পচবো তবুও গণভবনে যাবো না : গ্রেফতার করতে এলে আত্মহত্যা করবো : এরশাদ

মন্ত্রীসভা থেকে জাতীয় পার্টির সদস্যদের পদত্যাগ আজ : মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশের পর বেড়েছে চাপ

স্টাফ রিপোর্টার: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হলে তিনি নিজেই আত্মহত্যা করবেন। এজন্য তিনি শিয়রের কাছে চারটি বুলেট প্রস্তত রেখেছেন। রাতে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসার সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। তখন এইচএম এরশাদের বাসার সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ র‌্যাব। রাতের পোশাক পরে এরশাদ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় দৃড় চিত্তে বলেন, আমি কোনো কিছুকে ভয় করি না। আমাকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করা হলে আমি নিজেই সুইসাইড করবো।

                সীমাহীন চাপেও অনড় অবস্থানে রয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে জেলে পচে মরবো, তবুও গণভবনে যাবো না। গতকাল সন্ধ্যায় একটি মহলের সদস্যরা তাকে গণভবনে গিয়ে সমঝোতা করার প্রস্তাব দেন। অন্যথায় তাকে কঠিন পরিণতি বরণের হুঁশিয়ারিও দেন। তখন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। মন্ত্রিসভার জাতীয় পার্টির সদস্যদের পদত্যাগের নির্দেশ দেয়ার পর থেকেই এরশাদের ওপর চাপ বাড়তে থাকে। তার বাসা অনেকটা ঘেরাও করে ফেলেন র‌্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। এদিকে, এরশাদের নির্দেশের পর আজই জাতীয় পার্টির মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। দলটির সংসদ সদস্য প্রার্থীরাও আজ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শুরু করবেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে সফররত ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সাথে বৈঠক শেষে এরশাদ বলেন, সব দল না এলে নির্বাচনে যাবে না জাতীয় পার্টি। এ নির্বাচনে যাবো না, না, না- এটাই আমার শেষ কথা। বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের প্রস্তাবও নাকচ করে দেন এরশাদ। তিনি বলেন, তারা বলেছেন আমি নির্বাচনে অংশ না নিলে জামায়াত-শিবির আসবে। আমি বলেছি, কারা আসবে তা আমার দেখার বিষয় নয়। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। আপনারা রাস্তায় যান। ১০০ মানুষকে জিজ্ঞেস করুন। একজন মানুষও প্রধানমন্ত্রীকে চান না। প্রায় ২৭ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর ৩টা ২০ মিনিটের দিকে নিজ বাসায় ফেরেন এরশাদ। এ সময় প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে জাতীয় পার্টির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অবস্থান নেন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় এক সংবাদ সম্মেলনে আকস্মিকভাবে জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন এরশাদ। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না। বিকেলে সুজাতা সিংয়ের সাথে বৈঠক করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের শীর্ষ নেতাদের সাথেও বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে রুহুল আমিন হাওলাদার, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, সালমা ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও সন্ধ্যা ৭টায় জি এম কাদের ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেগম রওশন এরশাদ প্রেসিডেন্ট পার্কে যান। বৈঠক শেষে এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, এবার আমি আর আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবো না। আমি আমার দলের মন্ত্রিসভার সদস্য এবং উপদেষ্টাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করে চলে আসার নির্দেশ দিচ্ছি। যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাদের নির্দেশ দিচ্ছি তোমরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নাও। তোমরা তোমাদের জীবন বিপন্ন করো না। সহিংসতা গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা এলাকায় যেতে পারি না। অন্য প্রার্থীরাও এলাকায় যেতে পারবেন না। নির্বাচনে অংশ নিতে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের পরামর্শ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা বলেছেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে, পরিবেশ ভালো হবে। আমি বলেছি, পরিবেশ আর ভালো হবে না। পরিবেশ আরও খারাপ হবে। জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, আমার কোনো কথা নেই। স্যার যা বলেছেন তাই আমাদের কথা। জিএম কাদেরও শিগগিরই এরশাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কথা জানান। এরশাদের রাজনৈতিক সচিব সুনীল শুভরায় রাতে বলেন, স্যার গ্রেফতারকে ভয় পান না। সকালে সারাদেশে দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জরুরি ভিত্তিতে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তার আদেশে দলের দপ্তর সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী এ নির্দেশ দেন। এরশাদের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের আদেশক্রমে পার্টির সব প্রার্থীকে বুধবারের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক নেতা আবুল আহসান জুয়েল বলেন, টেলিফোনে এরশাদ দপ্তর সম্পাদককে এ নির্দেশনা দিয়েছেন।

মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলনের পর আকস্মিকভাবে অন্তর্ধান হন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নিজের মোবাইলফোনটিও বন্ধ করে দেন তিনি। তার দলের অনেক নেতাও তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তার এ অদৃশ্য অবস্থান বিপুল রহস্যের জন্ম দিয়েছিলো। সব রহস্য আর ধূম্রজালের অবসান ঘটিয়ে বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে তিনি বনানীর প্রেসিডেন্ট পার্কের বাড়িতে প্রবেশ করেন। প্রেসিডেন্ট পার্ক অনেকটা ঘেরাও করে রেখেছেন র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরা। বিকেল ৫টার পর থেকেই বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের সামনে, পেছনে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ ও শাদা পোশাকের পুলিশ দেখা যায়।