জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে নির্দলীয় : নতুন প্রতীকে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ভোট

 

স্টাফ রিপোর্টার: নির্দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত নতুন প্রতীক নিয়ে প্রার্থীরা অংশ নেবেন নির্বাচনে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ওয়ার্ড ভিত্তিক হওয়ায় প্রত্যেক উপজেলায় স্থাপন করা হবে একাধিক ভোটকেন্দ্র। মন্ত্রিসভার বৈঠকে জেলা পরিষদ আইন-২০০০ সংশোধনের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ নির্বাচন সম্পন্ন হবে বলে বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে। অধ্যাদেশ আকারে সংশোধনীগুলো মূল আইনে সংযোজনের পর ইসি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। ইসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উপজেলা পরিষদের মহিলা সদস্য পদে যেভাবে পরোক্ষ নির্বাচন হয়েছিলো, ঠিক সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। উপজেলার মহিলা সদস্য পদে নির্দলীয় প্রতীকে পরোক্ষ ভোট হয়েছিলো।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কার্যনির্বাহী সংসদ এবং আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনের কথা জানান। ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির মাধ্যমে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে স্থানীয় সরকারের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হবেন। কিন্তু প্রার্থীদের কোনও ভোটাধিকার থাকবে না। স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের ৪ ধরনের জনপ্রতিধি এই নির্বাচনের ভোটার হবেন। সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য না হলে কোনও ব্যক্তি ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য হবেন না। আর আইনের অন্য একটি ধারায় বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সদস্য বা অন্য কোনও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা সদস্য হলে তিনি প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা হারাবেন। অর্থাত অন্য কোনও সংস্থার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না হলে যেমন ভোটার হওয়া যাবে না তেমনই কোনও সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি হলে জেলা পরিষদে প্রার্থী হওয়া যাবে না। তবে ওইসব সংস্থা থেকে পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে।

স্থানীয় সরকারের ৪টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৭০ হাজার নির্বাচিত প্রতিনিধি এই নির্বাচনে ভোট দেবেন। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি ভোটার হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদে। দেশে বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৭১টি। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে গড়ে ১৩ জন করে প্রায় ৬০ হাজারের মতো নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছে। এভাবে ৪৮৮টি উপজেলা পরিষদে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার, ৩২০টি পৌরসভায় সাড়ে ৫ হাজার এবং ১১টি সিটি করপোরেশনে প্রায় সাড়ে ৫০০ নির্বাচিত প্রতিনিধি রয়েছেন। প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিল ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিল এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচকমণ্ডলী হবে।

গত ১০ আগস্ট জেলা পরিষদের সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ডের সীমানা নির্ধারণে বিধিমালা জারি করা হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য নির্বাচিত হবেন। এ হিসেবে সাধারণ সদস্য নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকটি জেলাকে ১৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হবে এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের জন্য হবে ৫টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। ওয়ার্ডভিত্তিক ভোট হওয়ার কারণে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সুবিধাজনক কোনো স্থানে। এ কারণে প্রত্যেক উপজেলায় একাধিক ভোটকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে।

সংশোধিত আইনে জেলা পরিষদের নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পণ করায় দ্রুত বিধিমালা করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) নির্বাচন বিধিমালা ও নির্বাচন আচরণ বিধিমালা তৈরির কাজ শুরু করবে কমিশন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জেলা পরিষদ সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়। এরই অংশ হিসেবে ২০১১ সালে দেশের ৬১টি জেলায় অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয়। প্রশাসক নিয়োগের ৫ বছরের মাথায় দলটি পরিষদের নির্বাচনের উদ্যোগ শুরু করেছে।