জুয়েল জিপিএ-৫ পেয়ে নামের সার্থকতা দেখিয়েছে

 

মাজেদুল হক মানিক:জুয়েল নিজেদের একটি খুপরি ঘরের পাশে মহল্লার ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের লেখাপড়া চালিয়েছে। জুয়েল নামের অর্থ অলঙ্কার। তাই তো নামের সার্থকতা দেখিয়েছে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে। জুয়েলের পিতা একজন ফেরিওয়ালা। ছেলেকে শিক্ষিত করে তুলতে পিতা মফিজুল ইসলাম সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ি-পাতিল ফেরি করে বিক্রি করেন। চরম দারিদ্রের কারণে জুয়েল কোনো দিন পেট পুরে খেতেও পায়নি। প্রাইভেট পড়িয়ে স্কুলের বেতনের টাকা জুগিয়েছে। আর দশজনের মতো পরতে পারেনি দামি পোশাক। ছেঁড়াফাটা পোশাক পরেই স্কুল করেছে। এমন প্রতিকূলতার মধ্যে রাত জেগে পড়াশোনা করেছে। তার নামের সার্থকতা দেখাতে পেরেছে এজন্য খুশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেকে।

২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ- ৫ পেয়েছে। জুয়েলের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রায়পুর গ্রামে। তার বাড়ি গিয়ে দেখা যায় তাদের একচালা একটি খুপরি মাটির ঘর। বাড়িতে এক চিলতে উঠোন। উঠোনে বসে পাড়ার কয়েকজন ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া করাচ্ছে জুয়েল। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়া জুয়েল জানায়, ভবিষ্যতে সে প্রকৌশলী হতে চায়।

জুয়েলের পিতা মফিজুল ইসলাম হাড়ি-পাতিল ফেরি করে বিক্রি করেন। যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার খরচের পাশাপাশি জুয়েল ও তার ছোট বোন জুলেখা আক্তার মায়ার (অষ্টম শ্রেণি) কোনো রকম লেখাপড়া চলে। জুয়েলের পিতা মফিজুল ইসলাম জানান, তিনি লেখাপড়া করতে পারেননি। লক্ষ্য একটাই ছেলে-মেয়ে যেনো তার মতো না হয়। চরম অভাব অনটনের মধ্যে লেখাপড়া করতে হচ্ছে জুয়েলকে। ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তিনি চোখে মুখে আঁধার দেখছেন বলে জানান। ছেলের সফলতায় মুগ্ধ জুয়েলের মা যমুনা খাতুন। তিনি জানান, কতদিন না খেয়ে ছেলে আমার স্কুলে গেছে। স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে প্রাইভেট পড়িয়েছে পাড়ার ছেলেমেয়েদের। রাত জেগে হারিকেনের আলোয় নিজের লেখাপড়া করেছে। সেই ছেলে এমন ভালো করে পাস করাতে কতো লোকজন দেখতে আসলো। কাউকে মিষ্টি মুখ করাতে পারিনি। এখন ভাবনা ছেলেটাকে আর পড়াতে পারবো কিনা।

রায়পুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোকলেছুর রহমান জানান, বই-খাতাসহ আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে। জুয়েল তাদের বিদ্যালয় ও এলাকার সম্পদ। কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে উচ্চ মাধ্যমিকে লেখাপড়ার খরচ জোগানো সম্ভব নয়।