জীবননগর সীমান্তে ৬৬ বছর ভারতের দখলে থাকা৭৫ বিঘা জমি উদ্ধার করেছে বিজিবি

 

 

এমআর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল: জীবননগর উপজেলার বেনীপুর বিওপির বিপরীতে ইছামতি নদীর পাশে ৬১ নং মেন সীমানা পিলারের পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ৬৬ বছর ধরে ভারতের দখলে থাকা ৭৫ বিঘা বিরোধপূর্ণ অপদখলীয় জমি উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। উদ্ধারকৃত জমির মধ্যে ৬৫ বিঘা জমি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের ১নং খতিয়ানভুক্ত এবং ১০ বিঘা জমি ব্যক্তি মালিকাধীন হিসেবে রেকর্ডভুক্ত আছে। গতকাল শনিবার বেলা ৯টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিবি এ জমির দখল নেয়।অপদখলীয় জমিমুক্ত করতে ৬ বিজিবির পরিচালক লে.কর্নেল এসএম মনিরুজ্জামান অগ্রণী এবং প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখেন। সামীন্তাবাসী তাকেসহ সংশ্লিষ্ঠদের সাধুবাদ জানিয়েছে।

পরে বেলা ১১টার দিকে বিজিবির পক্ষ থেকে অপদখলীয় জমি উদ্ধারের ব্যাপারে বেনীপুর সীমান্তে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, দেশ ভাগের পূর্ব থেকেই ওই জমিতে কিছু হিন্দু সম্প্রদায় বসবাস করতো। ১৯৪৭ সালের দিকে ভারত-পাকিস্থান ভাগ হওয়ার পর ১৯৪৯ সালে হিন্দু সম্প্রদায় ভারতে চলে যায়। তখন থেকেই এ জমি অপদখলীয় জমি হিসেবে ভারত দাবি করে আসছে এবং এ যাবত পর্যন্ত ভারতের দখলে ছিলো। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে ওই জমি অপদখলীয় নয়। ১৯৬২ সালের রেকর্ডে ৬৫ বিঘা জমি চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের ১নং খতিয়ানভুক্ত এবং ১০ বিঘা জমি ব্যক্তি মালিকাধীন হিসেবে রেকর্ডভুক্ত আছে। অথচ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কোনো কারণ ছাড়াই বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এ জমি তাদের দখলে রেখেছিলো। এ অপদখলীয় জমি উদ্ধারের জন্য দীর্ঘ ৪ মাস যাবত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে গত ২৯ জুন প্রাথমিকভাবে এবং শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ জমির দখল নেয় বিজিবি। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, উদ্ধারকৃত জমি জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টন করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবু সাঈদ, ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের উপ-অধিনায়ক মেজর. আনোয়ার জাহিদ, জীবননগর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকি, জীবননগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামাল হোসেন প্রমুখ।

বিজিবি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ বেনীপুর বিওপির দক্ষিণ-পশ্চিমে (আনুমানিক ৮০০ মিটার দূরে), মেন পিলার ৬১/৩-এস থেকে ৬১/৯-এস পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর থানার বেনীপুর গ্রামে সর্বমোট ৭৫ বিঘা জমি রয়েছে। দেশ ভাগের পূর্ব থেকে ওই জমিতে কিছু হিন্দু সম্প্রদায় ও শাওতাল জাতি বসবাস করতো। ১৯৪৭ সালের দিকে ভারত-পাকিস্তান দেশ ভাগ হওয়ার পর ১৯৪৯ সালে হিন্দু সম্প্রদায় ও শাওতাল জাতি সুযোগ বুঝে ভারতে চলে যায়। তখন থেকেই (১৯৪৯ সাল) ওই জমি অপদখলীয় ভূমি হিসেবে ভারত দাবি করে আসছে এবং এ যাবত পর্যন্ত ভারতের দখলে ছিলো। বিস্তারিত পর্যালোচনা করে জানা যায় যে, ভারত যে জমি অপদখলীয় ভূমি হিসেবে দাবি করে আসছে প্রকৃতপক্ষে ওই জমি অপদখলীয় ভূমি নয়। এছাড়াও ওই জমিতে ভারত-পাকিস্তান যৌথ সার্ভেয়ার দল কর্তৃক পূর্বের স্থাপনকৃত পিলার বিদ্যমান আছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার ভুমি রেকর্ড অফিসে যাচাই করে দেখা যায় যে, ১৯৬২ সালের রেকর্ডে আনুমানিক ৬৫ বিঘা জমি জেলা প্রশাসকের ১নং খতিয়ানভুক্ত এবং আনুমানিক ১০ বিঘা জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে রেকর্ডভুক্ত আছে। ওই জমি ভারতের দখলে থাকায় অদ্যাবধি সরকারিভাবে/ব্যক্তিগতভাবে উদ্ধারের বাস্তবভিত্তিক কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে উপস্থাপিত হয়েছে। গত ২৩ মার্চ ২০১৩ তারিখে ৬ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বভার গ্রহণের পর বর্তমান পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামান উপরোক্ত ৭৫ বিঘা অপদখলীয় ভূমি উদ্ধারের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘ ৪ মাস যাবত বিএসএফ, স্থানীয় প্রশাসন এবং সর্বোপরি স্থানীয় জনগণের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে ওই জমি উদ্ধারের জন্য চেষ্টা চালান। গত ০৬ মে ২০১৪ তারিখে এবং পরবর্তীতে গত ২৯ জুন ২০১৪ তারিখে পরিচালক এসএম মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় কুসুমপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার মো. খোরশেদ আলম খান এবং বেনীপুর বিওপি কমান্ডার নায়েক সুবেদার মো. খায়রুল কালামের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ৬৬ বছরের অপদখলকৃত (অমীমাংসিত) জমি উদ্ধার করা হয়। ওই জমি বর্তমানে ২,৫০,০০০.০০ (দু লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা খরচ করে চাষাবাদের উপযোগী করা হয়েছে এবং বিজিবির তত্ত্বাবধানে ওই জমির অর্ধেক অংশে ধনিচা ও বাকি অর্ধেক অংশে অড়ল ডালের বীজ বপন করা হয়েছে। অতিসত্ত্বর ওই জমি প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বণ্টনের জন্য চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এ দখলীয় জমির বিরোধ নিষ্পত্তিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০১০ সালের ১৯ মে চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) নেতৃত্বে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সীমান্তের অপদখলীয় জমি পরিদর্শন করেন এবং ২০১০ সালের ২৬ মে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবরে একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিনের বিরোধপূর্ণ অপদখলীয় জমি নিষ্পত্তিসহ এজেন্ডাভুক্ত আরো ৫টি বিষয়ে সীমান্ত এলাকায় বৈঠক করার জন্য ২০১১ সালের ২ ফেব্র“য়ারি ভারতের নদীয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে আজ অবধি ওই চিঠির কোনো জবাব দেয়া হযনি।