জীবননগর উপজেলা জামায়াতে সেক্রেটারিসহ গ্রেফতার ৪ : বহুস্থানে ভোটে বাধা

স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের ১৩৩টি নির্বাচন : ঘাটাইলে পুলিশের গুলিতে নিহত ১

স্টাফ রিপোর্টার: কিছু এলাকায় সংঘর্ষ ও জালভোট প্রদানের মধ্যদিয়ে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরের ১৩৩টি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপরও কোথাও কোথাও ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, জালভোট, কেন্দ্র দখল ছাড়াও সংঘর্ষের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এরমধ্যে টাঙ্গাইলে একজন নিহতও হয়েছেন। ঘাটাইলে ইউপি এবং সুনামগঞ্জে পৌরসভার দুটি ভোটকেন্দ্র স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ইউপি নির্বাচনে কেন্দ্র দখলের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত আব্দুল মালেক (৪৫) বিএনপি কর্মী। রাত ৩টার দিকে উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের গুপ্তবৃন্দাবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনার পর ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলায় তিনটি ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে হুমকি ধামকিসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। হাসাদাহ ইউনিয়নের সদর কেন্দ্র হতে পুলিশ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাও. ইসরাইল হোসেনসহ চার জামায়াতকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ ও আইলহাস ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে গত ২৭ মার্চ রাতে নাগদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী দারুস সালামের কয়েকটি ও বিএনপি দলীয় প্রার্থী মোকলেছুর রহমান জোয়ার্দ্দারের ইউনিয়নব্যাপী সকল নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়। তবে ওই ঘটনার পর দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের পর আর এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি। সকালে নির্বাচন শুরুর আগে জোড়গাছা, ভোলারদাড়ি, খাসবাগুন্দা ও আইলহাস গ্রামে ভোট দিতে বিএনপি সমর্থকদের বাধা দেয়া, হুমকি-ধামকি দেয়ার অভিযোগ শোনা গেলেও সকাল ১০টার দিকে গিয়ে তেমন অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। আইলহাস কেন্দ্রে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারার সময় ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মানোয়ার হোসেন নামের এক শিক্ষককে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক, র‌্যাব, বিজিবি ও পুলিশের মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক অ্যালার্ট ছিলো। তাছাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার নিজেও নির্বাচনী মাঠে ছিলেন।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বাঁকা, হাসাদাহ ও রায়পুর ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। হাসাদাহ ইউনিয়নের সদর কেন্দ্র হতে পুলিশ উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মাও. ইসরাইল হোসেনসহ চার জামায়াতকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। হাসাদাহ ইউনিয়নের কাটাপোল কেন্দ্রে ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে ক্ষমতাশীন দলের প্রার্থীর পক্ষের লোকজন বাধা প্রদানসহ আলীপুর কেন্দ্রে জালভোট দেয়াকে কেন্দ্র অপ্রতীকর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ম্যাজিস্ট্রেট, র‌্যাব, পুলিশ কর্মকর্তা, বিজিবি ও মোবাইলকোর্ট সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে। বাঁকা ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কাশেম মুন্সী জানান, ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে। দুপুর পৌনে ৩টা পর্যন্ত যেভাবে ভোট নেয়া হচ্ছে তাতে আমি খুশি। ভোট নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। হাসাদাহ ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল উদ্দীন সিদ্দীকী অভিযোগ করে বলেন, কাটাপোল ভোট কেন্দ্রে বিএনপির ভোটারদের আসতে বাধা প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে নির্বাচন অফিসে অভিযোগও প্রতিকার পায়নি। এছাড়া অন্য ৮টি কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠুভাবে ভোট নেয়া হচ্ছে। রায়পুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী তাহাজ্জত হোসেন জানান, ভোট নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কোনো প্রকার জাল ভোটসহ দুই নম্বরী করে ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। বকু-িয়া ভোট কেন্দ্রে নির্বিঘেœ ভোট দিতে পেরে আশাদুল ইসলাম নামক এক ভোটার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।