জীবননগর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখোর পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন

 

আন্দুলবাড়িয়ায় আ.লীগের বিদ্রোহী মোক্তার সীমান্তে বিএনপির ময়েন চেয়ারম্যান নির্বাচিত

এম আর বাবু/সালাউদ্দীন কাজল/নারায়ণ ভৌমিক: জীবননগর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখোর পরিবেশে গতকাল শনিবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ভোটাররা উৎসবের আমেজে সুশৃঙ্খলভাবে দাঁড়িয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করেন। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। নির্বাচনে আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার আনারস প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ৭৬৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটকম প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মীর্জা হাকিবুর রহমান লিটন পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৮১ ভোট।

অপরদিকে সীমান্ত ইউনিয়নে বিএনপির মঈন উদ্দিন ময়েন ধানের শীষ প্রতীকে ৬ হাজার ৯৫০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আব্দুল মালেক মোল্লা আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৬ হাজার ৭২৬ ভোট।

এদিকে আন্দুলবাড়িয়া ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মীর্জা হাকিবুর রহমান লিটন ভোট গণনাকালে বিভিন্ন প্রকার টালবাহানার মাধ্যমে ভোট কমবেশি করা, অসদাচারণ প্রদর্শণ, এজেন্টদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায় করে ব্যালট বাক্স বাইরে নিয়ে চলে আসার অভিযোগ এনে ভোট পুণরায় গণনার আবেদন করেছেন। এদিকে বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণার পর বিজয়ী প্রার্থীদের উদ্দেশে উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আ. লতিফ অমল ও ইউএনও নুরুল হাফিজ বক্তব্য রাখেন। তারা এ সময় বিজয়ের আনন্দের নামে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

সরেজমিন বেলা ১১টার দিকে আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের হারদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার মো. হাবিবুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রের মোট ভোট সংখ্যা ১ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৬শ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। দুপুর ১২টার দিকে বাজদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার মো. আব্দুল ছাত্তারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে ২ হাজার ২৬৭ জন ভোটারের মধ্যে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৯৯৫ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সীমান্ত ইউনিয়নের নতুনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ৩টার দিকে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার মো. মোতাহার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩৭৪ জন। এর মধ্যে ২ হাজার ১১১ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের বাইরে ও ভেতরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিলো। সুশৃঙ্খলভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত, ৱ্যাব, পুলিশ, আনসারসহ একাদিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে কাজ করেছে।

জীবননগর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোতাওয়াক্কিল রহমান জানান, আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী শেখ শফিকুল ইসলাম মুক্তার আনারস প্রতীকে ৪ হাজার ৭৬৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। অপর প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীল শাখাওয়াত হোসেন মোটরসাইকেল প্রতীকে ২ হাজার ৭৩৩ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী ওয়ার্কাস প্রার্টির নজরুল ইসলাম হাতুড়ি প্রতীকে ৫৫, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মীর্জা হাকিবুর রহমান লিটন নৌকা প্রতীকে ৫ হাজার ৬৮১, স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বিদ্রোহী সাব্দার রহমান ঘোড়া প্রতীকে ১ হাজার ১৮৮ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আতিয়ার রহমান  ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৩ হাজার ১৬৪ ভোট।

সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নং আসনে নমিনুয়ারা খাতুন তালগাছ প্রতীকে ২ হাজার ৩৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কাজল রেখা হেলিকপ্টার প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৫১২ ভোট। ৪, ৫ ও ৬ নং  আসনে পিনজিরা বেগম মাইক প্রতীকে ২ হাজার ৮৫০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি পেয়ারা বেগম বক প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ২৯৬ ভোট এবং  ৭, ৮ ও ৯ নং আসনে রহিমা খাতুন তালগাছ প্রতীকে ২ হাজার ৯৮৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি আছিয়া খাতুন বক প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৩৫৫ ভোট।

সাধারণ ১ নং ওয়ার্ডে নূর ইসলাম মোরগ প্রতীকে ৫৪২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে সদস্য  নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম সেলিম আব্দুর রশিদ ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৪২৩ ভোট। ২ নং ওয়ার্ডে হাফিজুর রহমান বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ৪২০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম আতিয়ার রহমান ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৩৬০ ভোট। ৩ নং ওয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম টিউবওয়েল প্রতীকে ৫১৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম সাদ আহাম্মদ আলী ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৪৭৫ ভোট। ৪ নং ওয়ার্ডে ঝুমুক আলী মোরগ প্রতীকে ১ হাজার ১১২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম ছানোয়ার হোসেন ফুটবল ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৬৮৬ ভোট। ৫ নং ওয়ার্ডে আবদুর জহিরুল ইসলাম তালা প্রতীকে ৭৯৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম ইসলাম মণ্ডল টিউবওয়েল প্রতীকে পেয়েছেন ৫৭৫ ভোট। ৬ নং ওয়াডে বাহা উদ্দীন ফুটবল প্রতীকে ৬৮৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম হায়দার আলী টিউবওয়েল প্রতীকে পেয়েছেন ৩০৩ ভোট। ৭নং ওয়ার্ডে মহাসীন আলী টিউবওয়েল প্রতীকে ৫৪৮ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম মাজহারুল ইসলাম মোরগ প্রতীকে পেয়েছেন ৫৩৬ ভোট। ৮ নং ওয়ার্ডে শেখ মাফিজুর রহমান মোরগ প্রতীকে ১ হাজার ৯০ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম দরুদ আলী তালা প্রতীকে পেয়েছেন ৮৪৮ ভোট ও  ৯ নং মোছাদ্দেক আলী বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ৪৫৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।তার নিকটতম তাজমুল হক ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৪১৬ ভোট।

সীমান্ত ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির মনোনীত মঈন উদ্দিন ময়েন ধানের শীষ প্রতীকে ৬ হাজার ৯৫০ ভোট পেয়ে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। এ ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর আব্দুল হান্নান মোটরসাইকেল ১ হাজার ৩২৪, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আব্দুল মালেক মোল্লা আনারস প্রতীকে ৬ হাজার ৭২৬, আওয়ামী লীগ মনোনীত জাকির হোসেন নৌকা প্রতীকে ৩ হাজার ২০৮, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইজাজুল হক বিশ্বাস হাতপাখা প্রতীকে ১৯৭, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোসাবুল ইসলাম লিটন দুটি পাতা প্রতীকে পেয়েছেন ৯ ভোট।

সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নং আসনে আদুরি খাতুন তালগাছ প্রতীকে ১ হাজার ৯৭৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম নাসরিন আক্তার কলম প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৬২৪ ভোট। ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে তহুরা বেগম মাইক প্রতীকে ২ হাজার ৭৬১ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম ফুল ছুরাতন খাতুন বক প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ৭২২ ভোট এবং ৭, ৮ ও ৯ নং আসনে মর্জিনা খাতুন মাইক প্রতীকে ২ হাজার ১৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তার নিকটতম রহিমা খাতুন বক প্রতীকে পেয়েছেন ১ হাজার ৪২৮ ভোট।

সাধারণ ১ নং ওয়ার্ডে ইসরাফিল হোসেন টিউবওয়েল প্রতীকে ১ হাজার ১৪৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বি সাইফুল ইসলাম মোরগ প্রতীকে পেয়েছেন ৯৯৪ ভোট। ২ নং ওয়ার্ডে জহুর আলম টিবওয়েল প্রতীকে ৭৬৬ ভোট পেয়ে বসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম আ. সামাদ বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৬৯৭ ভোট। ৩ নং ওয়ার্ডে ইমাদ আলী বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ৪২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম আব্দুছ সালাম তেঁতুল তালা প্রতীকে পেয়েছেন ৩৮৬ ভোট। ৪ নং ওয়ার্ডে আব্দুল আলীম মোরগ প্রতীকে ৩২৬ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম  আব্দুল ওয়াহেদ তালা প্রতীকে পেয়েছেন ৩০৯ ভোট। ৫ নং ওয়ার্ডে আরজাম হোসেন বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ৮৫২ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তার নিকটতম আশরাফ আলী ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৭৭৯ ভোট। ৬ নং ওয়ার্ডে আছাদ মিয়া টিউবওয়েল প্রতীকে ৮৩৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তার নিকটতম মতিয়ার রহমান ফুটবল প্রতীকে পেয়েছেন ৭৬৬ ভোট। ৭ নং ওয়ার্ডে আব্দুল কাদের বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ৯৮৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচত হয়েছেন তার নিকটতম  কামরুল ইসলাম মোরগ প্রতীকে পেয়েছেন ৫৩৬ ভোট। ৮ নং ওয়ার্ডে মইন উদ্দীন বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীকে ৫৯৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম নজরুল ইসলাম মোরগ প্রতীকে পেয়েছেন ৫৬৬ ভোট এবং ৯নং ওয়ার্ডে আব্দুস সালাম তালা প্রতীকে ৯৪৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তার সিকটতম শওকত আলী মোরগ প্রতীকে পেয়েছেন ৬১৫ ভোট।