জীবননগরে মানুষ কেনার হাট!

জীবননগর ব্যুরো: তখনও ভোর। চারদিকে পাখিদের সুমধুর কলতান। চুয়াডাঙ্গা-যশোর সড়কের জীবননগর চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ডের পাশের বটতলায় হঠাৎ চোখে পড়লো বেশ কিছু মানুষের ভিড়। সামনে গিয়ে দেখা যায়, তারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে কাজের সন্ধানে আসা অভাবী মানুষ। বোরো ধান কাটার শুরুতেই সপ্তার প্রতিদিন ভোরে শ্রমজীবীদের হাট বসে এখানে। তারা হাটে আসে বিক্রি হতে। আবার আরেক শ্রেণির মানুষ আসে তাদের কিনতে। চলতে থাকে অন্যান্য পণ্যের মতো দরকষাকষি। একবার বাড়ে, আরেকবার কমে। এক পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্যের মতোই বিক্রি হয় তারা। আর এখানকার স্থানীয়রা তাদের বলে দিনমজুর আবার কেউ বলে কামলা। প্রতিদিন ৮০ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শ্রমজীবী মানুষ তাদের গ্রামের বাড়িতে এ মরসুমে কোনো কাজ না থাকায় দলে দলে এ অঞ্চলে ছুটে আসেন কাজের সন্ধানে। জীবননগর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী মহেশপুর উপজেলার কৃষকরা ধানের আবাদ ও ধান কাটার জন্য বাড়িতে শ্রমজীবীদেরকে এখান থেকে কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন ভোর থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত চলে এই শ্রমজীবীদের হাট।

জানা গেছে, শ্রমজীবীদের মধ্যে বেশিরভাগই আশ্রয়হীন, ছিন্নমূল ও অভাবী। তারা কেউ কেউ এক সপ্তাহ আবার কেউ কেউ এক মাসের জন্য ধান কাটা অথবা পুকুর খনন করার জন্য বেচাকেনা হয়। এ মরসুমে এ অঞ্চলে দিনমজুর অথবা কৃষিকাজের মানুষের বড়ই অভাব থাকে। তাই বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আগত অভাব-অনটনে থাকা মানুষগুলো এই অঞ্চলে এলেই তাদের কাজের অভাব হয় না। কারণ এই অঞ্চলের মানুষ বেশিরভাগই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সারা বছরই কৃষকদের ক্ষেতগুলোতে ফলে সোনালি ধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম সবজি। সে কারণে এসব শ্রমজীবী শ্রম বিক্রি করতে বারবার এখানে ছুটে আসেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে কাজের সন্ধানে জীবননগরে আসা মো. লিয়াকত ও মো. আবেদ আলী বলেন, গ্রামের বাড়িতে কোনো কাজকর্ম নেই। তাই এ অঞ্চলে কাজের সন্ধানে ছুটে আসি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের বাড়িতে কাজ করলে মাত্র ১শটাকা থেকে ১২০ টাকা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের গ্রামের মানুষের চাষাবাদের জন্য তারা নিজেরাই যথেষ্ট। অন্য কোনো কামলা তাদের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া এ সময় সেখানে কাজও পাওয়া যায় না। খুবই অভাব গ্রামের বাড়িতে। তাই এখানে বারবার ছুটে আসি। এখানে এলে কাজ পাওয়া খুবই সহজ হয়। এছাড়া বর্তমানে আমরা এখানে সকাল ৭টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত শ্রম বিক্রি করে ৪শটাকা থেকে ৫শটাকা পর্যন্ত উপার্জন করি। এক মাস কাজ করে ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরবো।