জীবননগরে টিআর কাবিটা ও জিআর প্রকল্পে নজিরবিহীন হরিলুটের অভিযোগ

 

স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর উপজেলায় কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা), টেস্ট রিলিফ (টিআর) ও জেনারেল রিলিফ (জিআর) প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও হরিলুটের অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসন দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা প্রশাসক সায়মা ইউনুস যথাক্রমে ৩ ও ১ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ সোমবার তদন্ত কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করবে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, আন্দুলবাড়িয়া কাজী মসজিদে সোলার প্যানেল নির্মাণ, বাবু খানের আমবাগান থেকে বাজদিয়া রাস্তায় মাটি ভরাট প্রকল্পে ৫ লাখ ও ধর্মীয় ওয়াজ মহাফিলের নামে ৬শ টন জেনারেল রিলিফ (জিআর) প্রকল্পের মালামাল আত্মসাতের সংবাদ দৈনিক মাথাভাঙ্গাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে জেলা ও উপজেলা এলাকায় ব্যাপক আলোচনা হয়। জেলা প্রশাসক ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন। টেস্ট রিলিফ ( টিআর) ও কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের কাজে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) দেবপ্রসাদ পালকে প্রধান করে এনডিসি তরিকুল ইসলাম ও জীবননগর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা  নুরুল হাফিজকে সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে। অপরদিকে জেনারেল রিলিফ (জিআর) প্রকল্পে ধর্মীয় ওয়াজ মহাফিলের নামে ৬শ টন মালামাল আত্মসাতের ঘটনায় জীবননগর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নুরুল হাফিজকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে জীবননগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) অফিস সহকারী সাইফুর রহমান মালিকের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে শুধু ৬শ টন ভুয়া জেনারেল রিলিফ (জিআর) প্রকল্প নয়, চলতি অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ ধান, চাল ও গম ক্রয়ে হরিলুটসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ধান, চাল ক্রয়ে সরকারের লাখ লাখ টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এখানে ওপেন সিক্রেট দুর্নীতির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে। অফিস সহকারী সাইফুর রহমান মালিকের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির তথ্য দৈনিক মাথাভাঙ্গাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে তিনি বিশেষ তদবির নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

তথ্য ও অনুসন্ধান নিয়ে জানা গেছে, অফিস সহকারী সাইফুর রহমান মলিক দাপটের কাছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অতিরিক্ত আশরাফ আলী বড্ড অসহায়। তিনি অতিরিক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করলেও দীর্ঘদিন ধরে অফিস সহকারী সাইফুর রহমান মালিক একক আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার করে উপজেলা প্রকল্প অফিস নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ঘিরে জীবননগরের কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে আত্মসাতের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। ভুয়া প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পিআইসিদের বরাদ্দকৃত গম, চাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিনে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রকল্পের পিআইসিদের দুর্নীতির সুযোগে তিনি এ দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছেন। ফলে বিভিন্ন প্রকল্পের পিআইসিগণ ভয়ে উত্তোলনকৃত মালামাল অন্যত্র বিক্রির সাহস পাননি। সূত্র জানায়, উপজেলা প্রকল্প অফিসে দীর্ঘদিন যাবত দুর্নীতি বাসা বাঁধলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় অফিস সহকারী সাইফুর রহমান মালিক দাপটের সাথে এসব দুর্নীতির মহাউৎসব চালিয়ে গেছেন? তিনি গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্প হরিলুট চালিয়ে বিপুল অর্থ বৈভরের মালিক হয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, দীর্ঘদিন প্রকল্প কর্মকর্তা না থাকায় অফিসটির রুগণদশা দেখা দিয়েছে। তথ্য অনুসন্ধান নিয়ে জানা গেছে, অফিস সহকারী সাইফুর রহমান মালিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে র্দীঘদিন যাবত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পদটি শূন্য করে রেখেছেন। কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তার অবাধ্য হলে তার বদলি নিশ্চিত নিশ্চিত হয়ে পড়ে। সূত্র জানায়, অফিস সহকারী সাইফুর রহমান মালিক দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক। রড় ছেলে রুয়েট বিশ্ববিদ্যালয় ও ছোট ছেলে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকার বেসরকারী গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের ছাত্র। সাইফুর রহমান মালিকের ঢাকায় রয়েছে দুটি ফ্লাট বাড়ি ও দুটি বিলাস বহুল প্রাইভেট কার। এ সব নামীদামি প্রাইভেট কারের মধ্যে তিনি একটি ব্যবহার করছেন, অপরটি ছেলেদের নিকট রয়েছে । ফলে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে সামান্য বেতনে চাকরি করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ছেলের পড়াশোনা ও বিলাসী জীবন যাপনের উৎস কোথায়? এ ছাড়াও জীবননগর বাজারে রয়েছে রূপা কনস্ট্রাকশন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্ত্রী মারুফা হক রূপার নামে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ জীবননগর, চুয়াডাঙ্গা ও ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি ব্যাংকে রয়েছে একাউন্ট। অভিযোগ রয়েছে তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই বিভিন্ন প্রকল্প হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি মেম্বর বলেন, বরাদ্দকৃত প্রকল্পের ৭৫ ভাগ নাম ভাঙিয়ে খান অফিস সহকারী সাইফুর, ২৫ ভাগ পান পিআইসি। ফলে কাজের কাজ যা হয়, তা খরচে ওঠে না । অপর এক ইউপি মেম্বার জানান, অফিস সহকারী সাইফুর রহমান বরাদ্দের  ৫০ ভাগ কেটে নেয়ার পর ফাইলের অনুমতি মেলে। বিষয়টি উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে কোন প্রতিকার মেলেনি। প্রতিবাদ করলে শুধু পদে পদে হয়রানি হতে হয়। এসব দুর্নীতির বিষয়ে অফিস সহকারী সাইফুর রহমান মালিকের নিকট জানতে চাইলে তিনি উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তাকে দায়ী করে বলেন,আমি অফিস সহকারী। আমার স্বাক্ষরে তো আর মালামাল দেয়া হয় না।