জীবননগরে গণসংবর্ধনাকালে জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন

 

হাট-ঘাট খাল-বিল দখল করে লুটপাট চালাচ্ছেন দিন আসছে পালানোর জাগা পাবেন না

এম আর বাবু: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জীবননগর উপজেলা শহরের বাসস্ট্যান্ডের চৌরাস্তার মোড়ে এই গণসংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।

গণসংবর্ধনায় সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বলেন, আপনারা গত ৫ বছর অত্যাচারিত হয়েছেন। তার বহির্প্রকাশ আজকের এ উপস্থিতি। আমাকে গণসংবর্ধনা দিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আপনারা যোগ দিয়েছেন নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে। তিনি সিভিল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, জনরোষ কেউ সামাল দিতে পারেনি, আপনারাও পারবেন না। পৃথিবীর কোনো শক্তি কিন্তু জনরোষ ঠেকাতে পারেনি। চাকরি করতে এসেছেন, চাকরি করবেন। আমরা সরকারে আছি, সরকারের নিয়মকানুন মেনে চাকরি করবেন। নিরপেক্ষ থাকবেন। কারো কথা মতো কোনো কর্মীকে নিপীড়িত করবেন না। জনরোষ যদি মনে করে আজ থানা ঘেরাও করতে হবে, উপজেলা ঘেরাও করতে হবে, ওই এমপির বাড়ি ঘেরাও করতে হবে, তারা তা করবে। তিনি বলেন, এই জনরোষ কী সামাল দিতে পারবেন?। পারবেন না।

আপনারা জানেন কারা চুরি-ডাকাতি, স্মাগলিং করে, অবৈধ ইনকাম করে ভুঁড়ি ফাটিয়েছেন। তাদের কথা শুনে কোনো কর্মীকে নিপীড়িত করবেন না। করলে আমি আবার এখানে এসে আবার মিটিং করবো, তাতে জনরোষ সৃষ্টি হবে। প্রয়োজনে ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হবে। এতোই যদি আপনারা ক্ষমতাবান হন, শক্তিশালী হন তাহলে জামায়াত-বিএনপি যেদিন তাণ্ডব চালিয়েছিলো সেই দিন আপনারা কোথায় ছিলেন?সেই দিন জান বাঁচানোর জন্য আপনারা পালিয়ে এলেন কেন?না পালালে জামায়াত-বিএনপি আপনাদের পিটিয়েই মেরে ফেলতো। আমি রাজপথ দিয়ে যখন আসছিলাম তখল দেখছিলাম রাস্তায় কেবল মানুষ আর মানুষ। তারা জনসভায় আসার জন্য উদগ্রীব। তারা আমাকে বলেছে অমল ও তার দলবল এ গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে না আসতে তাদেরকে ভয় দেখাচ্ছে, হুমকি-ধামকি দিয়ে পা ভেঙে দিতে চাচ্ছে। এবার একটা কর্মীর ঠ্যাঙ ভেঙে দেখো। যদি ১০ দিনের মধ্যে কোনো কর্মীর ওপর হামলা করা হয় তাহলে বাড়ি থেকে তুলে এনে এর জবাব দেয়া হবে। মায়ের কোলে থাকলেও সেখান থেকে জনগণ আপনাদের তুলে এনে এর জবাব দেবে। আমার জনসভায় মানুষ আসবে। আপনাদের মতো লাখ-লাখ কোটি-কোটি টাকা খরচ করে আমার মানুষ আনতে হয় না। মানুষ নিজের থেকেই আসে। আপনারা যদি জনগণের জন্য কাজ করে থাকেন তাহলে এতো পয়সা খরচ করে লোক আনতে হয় কেন? সুতরাং বেশি বাড়াবাড়ি করা ভালো না। আমি লৌহমানবআয়ুব খানকে দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর ওপর চরম অত্যাচার নিপীড়ন করা হয়েছে। আমি জেল খেটেছি। শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যার পর জিয়াউর রহমান দেশটাকে কসাইখানায় পরিণত করেছিলো। আওয়ামী লীগকে নিশ্চি‎‎হ্ন করতে চেয়েছিলো। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক অর্জন। স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও কৃষিসহ সকল বিভাগে এ সরকার সফলতা বয়ে আনলেও আজ আপনাদের মতো কুলাঙ্গারদের কারণে তা আজ নষ্ট হতে চলেছে। আপনাদের মতো লোকদের মতো লোকরা শেখ হাসিনাকে ডুবাতে চলেছেন। হাট-ঘাট, খাল-বিল দখল করে আখের গড়ে তুলছে। পৌরসভার কাউন্সিলর আপেল মাহমুদকে তার ভাগের ভিজিএফ’র কার্ড জাহাঙ্গীর মিয়া দিতে দেবেন না। জনগণ যদি তোমার বাড়ি এখন খেদিয়ে দেয় তাহলে তুমি টিকতে পারবা। সাবধান হয়ে যাও। এসব কুলাঙ্গাররা কোনো দিন দলে থাকতে পারেনি। দল যখন অত্যন্ত সংকটময় অবস্থায় ছিলো তখন এসব কুলাঙ্গারদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তিনি সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, টগর মিয়া ১/১১’র সময় কোথায় ছিলে?তোমার রাজনীতির বয়সতো ৫ বছর। তোমার বংশের একটি লোকও আওয়ামী লীগ করতো না। তোমার বংশের ফকির মোহাম্মদ থেকে আরম্ভ করে সবাই মুসলিম লীগ আর জামায়াত করতো। ফাও কথা বলো। এদিক-ওদিক লাইন করে টাকা-পয়সা দিয়ে কোনো রকম নমিনেশন নিয়ে এমপি হয়েছো। তুমি তো জুয়া খেলা করছো। স্মাগলিং করে, হাট-ঘাট, খাল-বিল দখল করে লুটপাট করছো। মিয়া এসব ছাড়ো। এমন দিন আসছে, জাগা পাবানা। জীবননগরেও জাগা পাবানা। আপনারা শুনে রাখুন ওরা দেশে থাকবে না। ঢাকায় বাড়ি বানাচ্ছে, কানাডায় বাড়ি কিনছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা রাত-দিন দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, দেশের জন্য বিশাল অর্জন করে চলেছেন আর এসব কুলাঙ্গাররা জীবননগর আর দামুড়হুদায় স্মাগলিং করে, হাট-ঘাট, খাল-বিল, বাজার দখল করে লুটপাট করে তা বিসর্জন দিচ্ছে। আমি জীবননগরের লোকদের বলছি, এখনও যারা মধুর খোঁজে মৌমাছির মতো ওইসব কুলাঙ্গারদের পেছনে ঘুরছো তারা এসব ছাড়ো। আওয়ামী লীগ করো। ছেলুন লীগ করতে হবে না।

তিনি পুলিশকে উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, কারও কথা শুনে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর জুলুম ও হয়রানি করবেন না। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের কথা শুনতে হবে। আমাকে আপনাদের বিরুদ্ধে রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না। এর আগে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার পক্ষ থেকে হুইপ ছেলুন জোয়ার্দ্দারকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।

জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তূজার সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনাসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারেফ হোসেন মিয়া, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সী আলমগীর হান্নান, ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজি বদরুদ্দোজা, দর্শনা পৌরসভার সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমান, চুয়াডাঙ্গা জেলা মহিলা লীগ নেত্রী সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনুর বেগম, জীবননগর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আয়েশা সুলতানা লাকী, জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু, জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রোবায়েত বিন আজাদ সুস্তির, জীবননগর পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নাসিরউদ্দিন, যুবলীগ যুগ্মআহ্বায়ক শামীম ফেরদৌস। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন, জীবননগর উপজেলা মহিলা লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক রেনুকা আক্তার রিতা, যুবলীগ নেতা শফিকুল ইসলাম নান্নু, আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্মআহ্বায়ক মীর্জা লিটন, উথলী ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা মহিবুল ইসলাম, বাঁকা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা বাবুল আক্তার, জীবননগর উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সী তুষার, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক চঞ্চল, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফ প্রমুখ।