জীবননগরে ক্লিনিক মালিকের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যু

জীবননগর ব্যুরো/আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি: জীবননগর উপজেলা শহরের একটি ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলার কারণে এক প্রসূতি মায়ের মৃতুর অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার সকালে জননী ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে সিজারিয়ান অপারেশনের পর চিকিৎসাজনিত অবহেলার কারণে তার মৃত্যু ঘটে। প্রসূতি মা মারা গেলেও বেঁচে আছে সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যাসন্তান। ঘটনাটি আলোচিত হয়ে উঠলে ক্লিনিকের সামনে উৎসুক জনতা ভিড় জমায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে ক্লিনিক মালিক আত্মগোপন করেন। জনশ্রুতি উঠেছে ক্লিনিক মালিক রোগীর পরিবারকে মোটা টাকার বিনিময় ম্যানেজ করে লাশ বাড়িতে পাঠিয়ে দাফন সম্পন্ন করেছে। ক্লিনিক মালিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলার কারণে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় সচেতন মহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক ও জনপ্রতিনিধি ক্লিনিক মালিককে দায়ী করেছে।
নিহত প্রসূতির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গিরীশনগর গ্রামের দিনমজুর মুসা মিয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী শাহিদা খাতুন (২০)। প্রথম সন্তান সম্ভাবনা দেখা দিলে তিনি সম্প্রতি ইউনিয়নের সড়াবাড়িয়া গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর পিতা সাইদুর রহমানের বাড়িতে অবস্থান করছিলো। গত শুক্রবার ভোরে তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে তার সন্তান প্রসবের চেষ্টা চালান। প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে শাহিদা খাতুনকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জীবননগর শহরের জননী ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে ভর্তি করেন। ক্লিনিক মালিক আব্দুল মান্নান চুক্তির বিনিময় রোগীর কোনো প্রকার পরীক্ষা-নীরিক্ষা ছাড়াই সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের প্রস্তুতি নেন। সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. হেদায়েত বিন মাহমুদ সেতু অপারেশন করেন। কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। ভুল অপারেশনের কারণে কয়েক ঘণ্টার মাথায় প্রসূতি মায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটে। ঘটনাটি আলোচিত হয়ে উঠলে উৎসুক জনতা ভিড় দেখে ক্লিনিক মালিক আত্মগোপন করেন। এ অপমুত্যর ঘটনায় চিকিৎসক ডা. হেদায়েত বিন মাহমুদ সেতু বলেন, সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসূতি শাহিদা খাতুন কন্যাসন্তান প্রসব করে। আমি ক্লিনিক মালিককে সঠিকভাবে রোগীকে মেডিসিন প্রয়োগসহ পরিচর্যার কথা বলে ক্লিনিক ত্যাগ করি। পরে জানতে পারি সিজারের পর সঠিক মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ না করায় রোগীর শারারিক অবস্থা অবনতি ঘটে। ক্লিনিক মালিক যথাসময়ে ওষুধ না দেয়ায় দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলার কারণে শকে যাওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা শাহিদার মৃত্যু ঘটে। তিনি অপারেশনে কোনো ভুল ছিলো না বলে দাবি করছেন। নিহত প্রসূতির নবজাতক কন্যাসন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে বলে জানা গেছে।
নিহতের পিতা সাইদুর রহমান বলেন, আমার মেয়ের এটাই প্রথম সন্তান। আমরা প্রথমে বাড়িতে প্রাথমিকভাবে প্রসব করানো চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। স্বভাবিকভাবে বাড়িতে সম্ভব না হওয়ায় শাহিদা খাতুনকে সকালের দিকে জীবননগর জননী ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে ভর্তি করি। সেখানে অপারেশনের পর কন্যাসন্তান প্রসব করে। চিকিৎসায় গাফেলতির কারণে কিছুক্ষণ পর আমার মেয়ের করুণ মৃত্যু ঘটে। ক্লিনিক মালিকের মোবাইলফোন বন্ধ থাকায় বারবার চেষ্টা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার জাকির হোসেন বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা হয়েছে কি না জানি না। তবে শুনছি ক্লিনিকের লোকজনের অবহেলার কারণে রোগী সঠিক মাত্রায় সঠিক সময়ে ওষুধপত্র পায়নি। যে কারণে অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে মারা গেছে। নিহতের পরিবার কোনো ঝামেলায় না গিয়ে দাফন-কাফনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ক্লিনিক মালিক কিছু ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছে বলে জানান। সূত্র জানায়, প্রসূতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ক্লিনিক মালিক নিহতের পরিবারকে ম্যানেজ করে তড়িঘড়িভাবে একটি মাইক্রোবাসযোগে সড়াবাড়িয়া গ্রামে পিতার বাড়িতে নিহতের লাশ পাঠিয়ে দেয়। গ্রামের লোকজনসহ স্বজনদের মাঝে প্রতিক্রিয় দেখা দিলে ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার জন্য ওই মাইক্রোযোগে জীবননগর থানার উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে আন্দুলবাড়িয়া-সরোজগঞ্জ সড়কে বেলতলা রেলগেটের নিকট পৌঁছুলে খবর পেয়ে ক্লিনিক মালিক মাইক্রোটি গতিরোধ করেন। প্রায় ঘণ্টাখানেক দরকষাকষির পর স্বজনরা লাশ নিয়ে ফের সড়াবাড়িয়া গ্রামে ফেরেন। সন্ধ্যার পর নিহতের লাশ সড়াবাড়িয়া গ্রামের কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হয়