জীবননগরে ইসলামী ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মগোপন : জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার আশঙ্কা

 

জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ও ইনভেস্টমেন্ট ইনচার্জ হাসানুজ্জামান গত এক সপ্তাহ ধরে স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে রয়েছেন। গত ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি জীবননগর উপজেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধাপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে বের হন। এর পর থেকে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তার পিতা সহিদুল ইসলাম গতকাল বুধবার দুপুরে জীবননগর থানায় এ ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এ ঘটনায় দেশের শীর্ষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকা হাসানুজ্জামানের ব্যাপারে ব্যাপক তদন্ত শুরু করেছেন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া গ্রামের সহিদুল ইসলামের ছেলে হাসানুজ্জামান (৪০) খুলনা আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাস করার পর ইসলামী ব্যাংকে চাকরি নেন। প্রায় ১১ বছর ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করছেন। ২০১৫ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি তিনি ইসলামী ব্যাংক জীবননগর শাখায় সিনিয়র অফিসার ও ইনভেস্টমেন্ট ইনচার্জ হিসেবে যোগদান করেন এবং বর্তমানে আত্মগোপনের আগ পর্যন্ত তিনি ওই ব্যাংকেই কর্মরত ছিলেন। হাসানুজ্জামান জীবননগর ইসলামী ব্যাংকে যোগদানের পর প্রথমে একটি ম্যাচে থাকতেন। পরে জীবননগর উপজেলা শহরের মুক্তিযোদ্ধা পাড়ায় ঠিকাদার জাকাউল্লার ৩ তলাবিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলায় স্ত্রীসহ বসবাস করতেন। স্ত্রী মোবাশ্বেরা সন্তান সম্ভাবনা হওয়ায় দু মাস আগে সে তার পিতার বাড়ি মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার বটিয়াপাড়া গ্রামে চলে যান। এ কারণে গত দু মাস তিনি বাসাতে একাই থাকতেন। এক পর্যায়ে গত ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বাসা থেকে বের হন। ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে হাসানুজ্জামানের পিতা সহিদুল ইসলাম ও তার এক দুলাভাই জীবননগরে এসে হাসানুজ্জামানের লেখা দুটি চিঠি কোরআন শরীফের ভেতর থেকে উদ্ধার করেন। আত্মগোপনে যাবার আগে স্ত্রীর কাছে লেখা ৬ পাতার চিঠির মধ্যে এক পর্যায়ে লেখা আছে ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, এ কারণে স্ত্রীকে তালাক দিলাম।’ অপরদিকে পিতা-মাতার নিকট লিখিত চিঠির এক জায়গায় লিখেছেন- ‘আমার বিবেক ও শিক্ষা আমাকে আত্মহত্যা করতে বিরত রেখেছে, তাই দেখি অন্য কোনভাবে মৃত্যুর মুখোমুখী হওয়া যায় কি-না।’ এছাড়া পিতা-মাতার নিকট লেখা চিঠিতে তার কোথায় কতো টাকা জমা আছে, জমি-জায়গা আছে এবং তার প্রথম সন্তান ও অনাগত সন্তান কিভাবে লেখাপড়া করে মানুষ হবে, লেখাপড়া খরচ কোথা থেকে আসবে তারও বিস্তারিত লিখেছেন। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে আত্মগোপনে থাকা হাসানুজ্জামানের পিতা ও দুলাভাই ওই বাড়িতে এসে ইসলামী ছাত্রশিবির প্রকাশিত ছাত্র সংবাদসহ বিভিন্ন প্রকারের ইসলামী বই গোপনে নিয়ে যান।

এ ব্যাপারে ইসলামী ব্যাংক জীবননগর শাখা ব্যবস্থাপক নুর মোহাম্মদ জানান, ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ও ইনভেস্টমেন্ট ইনচার্জ হাসানুজ্জামানের এক সপ্তাহ ধরে অনুপস্থিতির বিষয়টি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন বলেন, আত্মগোপনে থাকা হাসানুজ্জামানের পিতা সহিদুল ইসলাম ছেলের নিখোঁজের ব্যাপারে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এরপর হাসানুজ্জামানের আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি তদন্ত শুরু করা হয়েছে।