জীবননগরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজি রমজান আলী ঢাকায় গিয়ে খুন

একদিন পর ঢাকা মেডিকেলে লাশ শনাক্ত : শহরে শোকের ছায়া

 

জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার শহরের বিশিষ্ট কাপড় ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী হাজি রমজান আলী (৪৩) ঢাকায় দোকানের মালামাল কিনতে গিয়ে খুন হয়েছেন। গত শনিবার ভোরে ঢাকা গাবতলীর মাজার রোডে সোনারতরী পরিবহন থেকে নামার পর তিনি একটি সিএনজি ভাড়া করে বাড্ডায় অবস্থিত মেয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তার মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মেয়ে বাড়িসহ শনিরআখড়ায় অবস্থিত নিজের বাড়ি ও মহাজনদের কাছে মোবাইলফোনে তার কোনো খোঁজ না পেয়ে তার স্ত্রী প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ রাজিয়া আক্তার রেখা শনিবারই জীবননগর থানায় একটি জিডি করেন। কিন্তু দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টায় তার কোনো হদিস না পাওয়ায় তার পরিবার দিশেহারা হয়ে যায়। এক পর্যায়ে আত্মীয়স্বজন ঢাকা মেডিকেল হাসাপাতালমর্গে তার লাশ শনাক্ত করা হয়।

সেরেবাংলানগর থানার এসআই সঞ্জয় জানান, ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার পর তাকে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানোর পর তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার পর তার লাশ আগারগাঁও বস্তির সামনে অবস্থিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের অকেজো যানবাহনের ড্যাপিং স্টেশনের ভেতরে লাশ ফেলে রেখে যায়। খবর পেয়ে শনিবার সকালে পুলিশ তার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালমর্গে প্রেরণ করে। এদিকে নিহত ব্যবসায়ীর স্ত্রীর অভিযোগ তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জীবননগর শহরের মৃত হাজি মনির হোসেনের ছোট ছেলে হাজি ইলেকট্রনিক্সের সত্ত্বাধিকারী হাজি রমজান আলী গত শুক্রবার রাত ৯টার সোনারতরী পরিবহনযোগে জীবননগর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। গত শনিবার রাত সাড়ে ৪টার দিকে তিনি ঢাকা গাবতলীর মাজার রোডে নামেন। এরপর তিনি বাড্ডায় অবস্থিত বড় মেয়ে রিমার বাড়িতে যাওয়ার জন্য তিনি একটি সিএনজি ভাড়া করেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ হন। তার আত্মীয়স্বজনরা দিনভর খোঁজাখুজি করে তার সন্ধান পেতে ব্যর্থ হন। সন্ধান না পেয়ে অবশেষে ব্যবসায়ী হাজি রমজান আলীর স্ত্রী রাজিয়া খাতুন জীবননগর থানায় একটি জিডি করেন বলে জীবননগর থানার ওসি হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন।

নিহত হাজি রমজান আলীর স্ত্রী আকলিমা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষা রাজিয়া আক্তার রেখা জানান, সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করা হয়। কিন্তু গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান মেলেনি। এ অবস্থায় তার আত্মীয়স্বজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মর্গে যান। অবশেষে হাসপাতালমর্গে তার লাশ শনাক্ত করা হয়। এ খবর তার পরিবারের নিকট পৌঁছুলে শোকের মাতম শুরু হয়। শহর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শোকের ছায়া। সমাজের বিশিষ্টজনসহ ব্যবসায়ীরা তার বাড়িতে ছুটে যান। রাতেই তার লাশ নিয়ে জীবননগরের উদ্দেশে রওনা হয়। আজ সোমবার বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে তারা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

শেরেবাংলানগর থানার এসআই সঞ্জয়ের ধারণা, সিএনজিতে ওঠার পর ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন তিনি। এর তাকে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানের চেষ্টা করা হয়। শেষে তাকে গলায় থাকা মাফলার দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে নিহত হাজি রমজান আলীর স্ত্রী রাজিয়া আক্তার রেখার দাবি তাকে পরিকল্পিতভবে হত্যা করা হয়েছে। জীবননগর বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজি রমজান আলীর মৃত্যুতে জীবননগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজা, দৌলৎগঞ্জ বাজার আহ্বায়ক কমিটির পক্ষে আহ্বায়ক এমআর বাবু ও যুগ্মআহ্বায়ক শামীম ফেরদৌস, এসএসসি ৮৮ ব্যাচের পক্ষে ব্যাচের কনভেনার সাংবাদিক মুন্সি মাহবুবুর রহমান বাবু, আক্তারুজ্জামান ছক্কু, আ. সালাম ইসা, সহিদুল ইসলাম সহিদ, ইকতিয়ার উদ্দিন, মোমিনউদ্দিন, শিঁকড় ৮৮ সমবায় সমিতির পক্ষে প্রভাষক সাজ্জাদ হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার নজরুল ইসলাম, ইকবাল উদ্দিন একরাম, হাসানুজ্জামান পলাশ, শফিকুল ইসলাম শফি, প্রভাষক আক্তার হোসেন ও আনারুল ইসলাম রানা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, হাজি রমজান আলী এসএসসি ৮৮ ব্যাচের বন্ধু ও নেতা। নেতৃবৃন্দ নিহত হাজি রমজান আলী হত্যার রহস্য অবিলম্বে উদঘাটনসহ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা করেছেন।