জীবননগরের ঘুঘরাগাছি গ্রামে বাসরঘরে সেনাসদস্যের নববধূর রহস্যজনক মৃত্যু

 

 

ইনজেকশন প্রয়োগ করে পরিকল্পিত হত্যার অভিযোগ

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি: জীবননগরের ঘুঘরাগাছি গ্রামে বাসরঘরে নববধূ কাকলীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে কাকলীর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কাকলীর মা রহিমার অভিযোগ দাবিকৃত যৌতুকের টাকা পুরোপুরি না দেয়ায় পরিকল্পিতভাবে কাকলীকে ইনজেকশন পুশ করে হত্যা করা হয়েছে। স্বামীপক্ষ বলেছে কাকলী আকস্মিক মারা গেছে। পুলিশ প্রাথমিক তদন্ত শেষে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে নববধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করিয়েছে। ঘটনার দিন সকালে কাকলীর স্বামী সেনা সদস্য জুয়েল হোসেনকে শাহাপুর ক্যাম্প পুলিশ আটক করলেও পরে ছেড়ে দেয়। চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান ও জীবননগর থানার নবাগত ওসি এসএম ইকবাল আহম্মেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ময়নাতদন্ত শেষে কাকলীর লাশ তার পিতার বাড়ি আলমডাঙ্গার সোনাতনপুর গ্রামে রাত ১০টায় দাফন হয়।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ঘুঘরাগাছি গ্রামের আব্দুল মালেকের পালিত ছেলে সেনা সদস্য জুয়েল হোসেন (২৫) সাড়ে ৩ মাস আগে গত ২০১৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়নের সোনাতনপুর গ্রামের আলমগীর হোসেন ওরফে আলমের মেয়ে কাকলী খাতুনকে (১৯) গোপনে বিয়ে করেন। দু মাসের মাসের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে গত শনিবার বিকেলে নববধূ কাকলী খাতুনকে তার নিজ বাড়িতে প্রথমবারের মতো নিয়ে আসেন। তবে প্রতিবেশীরা অভিযোগ করে বলছেন, জুয়েল বিয়ের কথা কাউকে না জানিয়ে ধর্মবোন হিসেবে পরিচয় দিয়ে কাকলী খাতুনকে ঘরে তোলেন। বাসরঘরের দু রাত পার না হতেই গত সোমবার সকাল ৭টার দিকে কাকলীর আকস্মিক মৃত্যু হয় বলে জুয়েলের পরিবার প্রচার করে এবং কাকলীর বাড়িতে খবর দেয়। নিজ স্ত্রীকে ধর্মবোন পরিচয় দেয়ার কারণে এলাকাবাসী জুয়েলের ওপর ফুঁসে ওঠে। তবে জুয়েল বলেছেন, চাকরির কারণে বিয়ে গোপন করেছি। কাকলীর মা রহিমা খাতুন অভিযোগ করে বলেছেন, বিয়ের পর ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে জুয়েল। তাতে দেড় লাখ টাকা দেয়াও হয়েছে। আরো দেড় লাখ টাকা যৌতুকের জন্য চাপাচাপি করছিলো জুয়েল। এরই মধ্যে কাকলীকে নিয়ে গিয়ে সে মেরে ফেলেছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এ বিয়ের মধ্যস্থতাকারী ছিলেন সোনাতনপুর গ্রামের হাসিবুলের ছেলে সেনা সদস্য রাকিবুল। রাকিবুল এ বিয়ে না দিতে বললে কাকলীর এই পরিণতি হতো না।

ঘুঘরাগাছি গ্রামের অনেকেই জানান, মাস কয়েক আগে জুয়েল গ্রামের জনৈক এক স্কুলছাত্রীকে ভালোবেসে বিয়ে করতে ব্যর্থ হয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। তাকে স্বজনরা মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। প্রেমের টানে অপছন্দের নববধূ কাকলীকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিবেশীরা অনেকেই মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে কাকলীর মামা হাতেম আলী বাদী হয়ে ঘটনার দিনই জীবননগর থানায় একটি অপমুত্য মামলা দায়ের করেন। গতকাল সন্ধ্যায় কাকলীর মা বাদী হয়ে আরেকটি এজাহার দায়ের করেছেন জীবননগর থানায়। এ ব্যাপারে থানার ওসি এসএম ইকবাল আহম্মেদ বলেন, মৃত্যুটা রহস্যজনক। এ কারণে তার লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টে হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা স্বাভাবিক মৃত্যু না হত্যা।

কাকলীর মা রহিমা খাতুন গতকাল মঙ্গলবার সকালে দৈনিক মাথাভাঙ্গায় মোবাইলফোনে জানান, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমার মেয়েকে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগ করিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে মনে হয়। না হলে সকালে, জুয়েলের বাড়ির সবাই গাঢাকা দিয়েছিলো কেন? তা ছাড়া সকাল থেকেই কাকলীর মোবাইলফোনসহ তাদের সব মোবাইলও বন্ধ ছিলো, যা রহস্যজনক। অন্যদিকে কাকলীর হাতের আংটি ও গলার চেন দেয়া হয়েছিলো। তাও তারা খুলে নিয়েছে। কাকলীকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।