জীবননগরের উথলীতে সচেতনতামূলক আলোচনাসভায় পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন

বাল্যবিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার উথলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ইভটিজিং, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিয়ে এবং মাদক প্রতিরোধে সচেতনতামূলক মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের আয়োজনে এবং উথলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহযোগিতায় গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ মতবিনিময়সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সাংবাদিক সালাউদ্দীন কাজলের সভাপতিত্বে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক মমতাজ উদ্দীনের উপস্থাপনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা ও জীবননগর সার্কেল) কলিমুল্লাহ, জীবননগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনামুল হক, উথলী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান প্রমুখ।

সভায় প্রধান অতিথি বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে আমরা বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে পড়ে থাকি। কিন্তু তা যদি আমরা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন না করি, তাহলে আমাদের শিশুদের নিয়ে যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। বাল্যবিয়ে প্রথমত, মেয়ে শিশুর জন্য অধিকার লঙ্ঘন। দ্বিতীয়ত এটি নির্যাতন। সর্বোপরি, বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক ও আইনগত অপরাধ। প্রত্যেক কিশোর-কিশোরীর শারীরিক ও মানসিক পরিপূর্ণতা লাভের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। বিজ্ঞানসম্মতভাবে ১৮ বছরের আগে একটি মেয়ে কখনও পরিপূর্ণ বিকাশ লাভ করে না। সঠিক বয়সের আগে মা হওয়ায় দেশে ৩০ শতাংশ নারী এবং ৪১ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে। বাল্যবিয়ে কিশোর-কিশোরীর প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্যও বিরাট হুমকি। গর্ভবতী কিশোরীর উচ্চ রক্তচাপ অথবা খিঁচুনি হয়ে মা ও গর্ভের সন্তানের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কিশোরী পুষ্টিহীনতায় ভুগলে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটে ও কম ওজনের শিশুর জন্মের আশঙ্কা বাড়ে। কিশোরী মায়ের সন্তান জীবনভর পুষ্টিহীনতাসহ নানারকম শারীরিক জটিলতায় ভোগে। এমন কন্যাশিশুর পরবর্তী জীবনে জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেক বেড়ে যায়। অল্পবয়সে মেয়েদের বিয়ে হওয়ার কারণে দেশে বিবাহ বিচ্ছেদ, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা এবং পারিবারিক নির্যাতন বেড়ে যায়। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মাদকের সর্বগ্রাসী আগ্রাসনের শিকার দেশের যুবসমাজ। একটি দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ যুবসমাজ। যুবসমাজ যদি মাদকে আসক্ত হয়, নানা অবক্ষয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে সে দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হতে পারে না। আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবন থেকে মাদকদ্রব্য উৎখাত এবং মাদকাসক্তি নির্মূল করতে হলে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার মানুষের বিবেক ও মূল্যবোধের জাগরণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ এবং ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন। এর জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে সচেতনতা জাগাতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াই ও বিজয় অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। মাদক ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সভায় বিদ্যালয়ের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ও ৫ শতাধিক অভিভাবক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ, কাজী এবং ইমামগণ উপস্থিত ছিলেন।