জিনে করেছে ব্রেনটিউমার অপারেশন : লিখেছে চিরকুট

চুয়াডাঙ্গার ছোটলুয়ায় রোগী নিজেই মেতেছেন কল্প কাহিনি প্রচার

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: এতোদিন জিন-পরী ভর বা আছরের কথা বলে চিকিৎসার নামে চলতো প্রতারণা। এবার জিনে মাথায় অপারেশন করেছে বলে জোর প্রচারণা চালিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতার পাঁয়তারা চলছে প্রকাশ্যে। অবাক হলেও সত্য, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ছোটসলুয়া গ্রামে জিনের একটি চিঠিও মেলে ধরেছে কল্পকাহিনি রচয়িতা। তিনি নিজেই রোগী। ঘটনাটি নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

আধুনিক বিজ্ঞান যুগে জিনে ব্রেন টিউমার অস্ত্রোপচার করেছে। এমনকল্প কাহিনি সত্যি ঘটনা বলে দাবি করে জোর প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সচেতন যুব সমাজ এ প্রচারণার প্রতিবাদ করলেও প্রবীণদের অধিকাংশই জিনের চিকিৎসা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। ফলে বেকায়দায় সচেতন ব্যক্তিরা।

সরেজমিনে জানাযায়, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটসলুয়া পূর্বপাড়ার ওহাব আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম (৩৭) দীর্ঘ ৯ বছর থেকে মাথার সমস্যায় ভুগছিলেন। আছিয়ার স্বামী তার স্ত্রীকে সুস্থ করতে সাধ্যমতো চেষ্টাও করেছেন। মাসখানেক আগে আছিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী মেডিকের কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তিনি ব্রেন ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কফিল উদ্দিনকে দেখান। চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ৩ মাসের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। মাসখানেক থেকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ওষুধ সেবন করে আসছিলেন আছিয়া। এরই মাঝে সাপ্তাহ খানেক আগে থেকে শুরু হয় আছিয়ার জিন ভর করার কল্প কাহিনি। তাদের পরিবারের দাবি, ওই জিন আছিয়াকে বোন বলে ডাকে এবং তার চিকিৎসার জন্য পরিবারের লোকজনের নিকট জানায়। জিন আছিয়াকে নিয়ে চিকিৎসা করাবে বলে প্রস্তাব দিলে তার স্বামী ওহাব তাতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে আমরা সবাই এক সাথে খাবার খাই। গরম পড়ার কারণে বাড়ির পাশে দোকানে যাই। কিছুক্ষণ পর বাড়ি ফিরে দেখি ঘরের ভেতরে খিল লাগানো। আমি আছিয়াকে ডাকি। ঘরের ভেতর থেকে আওয়াজ আসে আছিয়ার ব্রেন টিউমার অপারেশন চলছে। ১০ মিনিট পর দরজা খোলার জন্য বলা হয়। জিনেআছিয়ার ব্রেন অপারেশন করছে, এমন সংবাদে প্রতিবেশীরা বাড়িতে ভিড় জমায়। কিছুক্ষণ পর ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আছিয়ার মাথার গোড়ায় একটি চিরকুট পড়ে থাকতে দেখা যায়।তাতে লেখা আছে- ‘কোনো ওষুধ লাগবে না। শুধুমাত্র একটি সাধারণ স্যালাইন গ্রাম্য ডাক্তার ডেকে দিলেই হবে।’পত্রের শেষে লেখা আছে ‘আমি গোলাম রসূল।’পরে ওহাব চিরকুটে লেখা অনুযায়ী গ্রাম্য ডাক্তার ডেকে আছিয়ার শরীরে স্যালাইন দেয়। অপারেশনের পর মাথায় রক্তমাখা ব্যান্ডেস দেখে উৎসুক জনতার কৌতূহল বেড়ে যায়। ঘটনার একদিন পর আছিয়ার জ্ঞান ফেরে বলে পরিবারের লোকজন জানায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার নারী-পুরুষ ভিড় জমাতে থাকে আছিয়াদের বাড়িতে। প্রতিবেশীরা জানায় আছিয়া দীর্ঘদিন থেকে মাথার সমস্যায় ভুগছেন। যন্ত্রণা সইতে না পেরে কয়েকবার আত্মহত্যার অপচেষ্টাও চালিয়েছেন।এ ঘটনার ১৫ দিন আগে হেঁসো দিয়ে নিজের মাথা নিজে কয়েক জায়গায় কাটেন। তবে আছিয়ার মাথায় রক্তমাখা ব্যান্ডেস থাকলেও ব্যান্ডেসের নিচে কী আছে তা নিয়েও জনেমনে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

জিনে অস্ত্রোপচার করেছে, চিরকুট লিখেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই সচেতন সমাজ বলেছে, এতোদিন জিন ভর ও আছরের কথা বলে প্রতারকরা চিকিৎসার নামে ধান্দাবাজি করতো, এখন দেখছি রোগী নিজেই জিনকে পুঁজি করে ধান্দার নতুন ফাঁদ পাতছে।

এ ঘটনার জট খুলতে এখনই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে আছিয়ার মাথার ব্যান্ডেস খোলা দরকার বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করছে।