জিনসাপে কেটেছে বলে দাবি তুলে ওঁঝার ঝাঁড়ফুঁক নাটক : মারা গেলো কিশোর রাশেদ

 

চুয়াডাঙ্গার চণ্ডিপুরে স্কুলছাত্র সর্প দংশনের শিকার : বোয়ালিয়ার ওঁঝা হান্নানের কালক্ষেপণে অনিবার্য হয়ে উঠলো মৃত্যু

 

মাহামুদ কামরান: ওঁঝার ঝাঁড়ফুঁক নাটকে শেষ পর্যন্ত মারা গেলো চুয়াডাঙ্গা চণ্ডিপুরের ফুটফুটে কিশোর রাশেদ (১২)। সে সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলো। নিহত রাশেদ খান সাহেবের ছেলে।

জিনসাপে কেটেছে বলে দাবি করে ভণ্ড ওঁঝা ঝাঁড়ফুঁকের নামে কালক্ষেপণ করে। এতেই কিশোর রাশেদের মৃত্যু অনিবার্য হয়ে ওঠে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থা নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ কবীর জন আপ্রাণ চেষ্টা করে হেরে যান। তিনি বলেন, সর্প দংশনের শিকার কিশোরকে হাসপাতালে নিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওঁঝা কবিরাজের ভণ্ডামির শিকার হয়ে আর কতোজন এভাবে প্রাণ হারাবে? শুধু অসচেতনতার কারণেই একের পর এক সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হচ্ছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পদ্মবিলা ইউনিয়নের খান সাহেবের ছেলে স্কুলছাত্র রাশেদ নিজেদের ঘরেই সর্প দংশনের শিকার হয়। দুপুর ১টায় সাপে দংশন করে। তার শরীরের প্রয়োজনীয় অংশে দ্রুত বাঁধন দিয়ে হাসপাতালে নেয়ার বদলে ডাকা হয় ওঁঝা। পার্শ্ববর্তী বোয়ালিয়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে ওঁঝা হান্নানকে ডেকে চিকিৎসা দিতে বলে স্কুলছাত্রের লোকজন। ওঁঝা কিশোরকে দেখেই বলে, ওকে জিন সাপে কেটেছে। বাঁধন খুলে দাও। ঝেঁড়ে দিচ্ছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। ঝাঁড়ফুঁকের নাটক করে। সাপ ধরার চেষ্টা করতে থাকে। এর মাঝে রাশেদের অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। তখনও ভণ্ড ওঁঝা ঝাঁড়ফুঁক নাটক না থামিয়ে কালক্ষেপণ করে। এরই এক পর্যায়ে গ্রামেরই সচেতন ওমর আলী খানেকটা জোর করেই রোগী মোটরসাইকেলে তুলে হাসপাতালে নেন। ততোক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে রোগী দ্রুত ওয়ার্ডে নেয়া হয়। এন্টিস্নেক ভেনম দেয়ার কাজ শুরু হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাশেদ মারা যায়।

রাশেদকে কেন দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলো না? গ্রামের একেকজনের একেক রকম মন্তব্য। কেউ বলেছে, হাসপাতালে রোগী নিলে নাকি কোন সাপে কেটেছে তার বর্ণনা দিতে হয়। সাপ দেখা যায়নি বলেই ওঁঝা ডাকা হয়েছিলো। এ মন্তব্য শুনে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, সাপেকাটা রোগীর সুচিকিৎসা একমাত্র হাসপাতালেই হয়। বিষ প্রয়োগ করলে কোনো ওঁঝা-কবিরাজই বাঁচাতে পারে না। সাপে দংশন করলেই সব সাপে বিষ প্রয়োগ করে না। যাদের বিষপ্রয়োগ করে না, ঝাঁড়ফুঁক নাটকে তাদেরকেই সুস্থ করে তোলার দাবি করে ওই ভণ্ডরা। তাছাড়া কোন সাপে কেটেছে তার বর্ণনা দিতে হয় না। হাসপাতালে রোগী নিলে তাকে দেখা হয় বিষ প্রয়োগ করেছে কি-না। তা দেখেই স্বাস্থ্য বিজ্ঞানমতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রয়োগ করা হয়। এ বিষয়ে গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষগুলোকে যেমন সচেতন করা দরকার, তেমনই দরকার ওঁঝা-কবিরাজের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা। তা না হলে সাপেকাটা রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা কমবে না।